ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বিপর্যয়, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ জুন ২০১৭

বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বিপর্যয়, যাত্রীদের দুর্ভোগ

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমান প্রকৌশল বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একের পর এক বিকল হচ্ছে উড়োজাহাজ। মঙ্গলবার দুটো ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়ায় অভ্যন্তরীণ রুটের তিনটি গন্তব্যে ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে বিমানের। এ কারণে মঙ্গলবার বিমানের একাধিক অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হয়। বুধবারের অভ্যন্তরীণ চারটি রুটের সব ফ্লাইটও বাতিল করেছে এয়ারলাইন্সটি। হঠাৎ এ দুটো উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হয়ে পড়ার দায় নিতে চাচ্ছে না বিমান। এ নিয়ে কেউ মুখও খুলতে নারাজ। বুধবার সন্ধ্যায় ওই দুটি উড়োজাহাজ মেরামত করতে সক্ষম হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে এসব রুটে পূর্বসূচী অনুযায়ী ফ্লাইট চলবে। বিমান পরিচালক আলী আহসান বাবু জনকণ্ঠকে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সব গন্তব্যের ফ্লাইট বাতিল করা হয়নি। শুধুু যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও সৈয়দপুরের ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বাকি তিনটি সিলেট চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ফ্লাইট চলেছে ঠিকমতো। এ তিনটি রুটে বড় উড়োজাহাজ চলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে আজ অতিরিক্ত ফ্লাইট চালিয়ে এটা কভার করা হবে। এরই মধ্যে যারা ফ্লাইট বাতিল করেছে, তারা হয়ত আর যাবেন না। কিন্তু যারা যেতে আগ্রহী তাদের আজ বৃহস্পতিবার পাঠানো হবে। জানতে চাইলে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, আমাকে এখনও পর্যন্ত বিমান থেকে কেউ জানায়নি। এগুলো দেখেন এমডি ও চেয়ারম্যান। তারা বলতে পারবেন- কেন কি ঘটছে। বিমান সূত্র জানায়, প্রকৌশল বিভাগের রহস্যজনক ব্যর্থতায় ল-ভ- হয়ে পড়েছে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট সিডিউল। ঈদে অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনার জন্য দুটি ড্যাস-৮ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট সিডিউল তৈরি করলেও রহস্যজনক কারণে দুটি উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফটও সিলেটে বিকল হয়ে পড়ে। এতে বুধবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, যশোর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। একইভাবে বাতিল করা হয় ওইসব রুটের ফিরতি ফ্লাইটগুলোও। এ অবস্থায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা বুধবার তীব্র ভোগান্তির মুখে পড়ে। বাতিল হওয়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য শুক্রবার ঢাকা থেকে সব অভ্যন্তরীণ রটে দুটি করে ফ্লাইট চালাবে বিমান। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছেÑ বুধবার একটি ড্যাস-৮ এয়ারক্রাফট সচল হয়। ওই এয়ারক্রাফট দিয়ে দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে একটি ফ্লাইট চালানো হয়। এছাড়া অন্য সব রুটের ফ্লাইট বাতিল করা হয়। বুধবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে আবুধাবী রুটে একটি ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। যে উড়োজাহাজ দিয়ে এই রুটটি পরিচালনার জন্য সিডিউল তৈরি করা হয়েছিল সকালে ওই এয়ারক্রাফটটি সিলেট গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ঢাকা চট্টগ্রাম আবুধারী ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়। ঢাকা থেকে যাওয়া উড়োজাহাজটি সিলেটে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের কানেকটিং ফ্লাইটের সব যাত্রীরা আটকা পড়ে। এ অবস্থায় সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। একইভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েন। এক পর্যায়ে সিলেট ও চট্টগ্রামের আটকা পড়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিকেল ৫টায় একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ সিলেটে পাঠানো হয়। ওই ফ্লাইটটি সিলেট থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম যাবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা এসে সরাসরি আবুধাবীর উদ্দেশে রওনা হবে। এ কারণে আবুধাবী ফ্লাইটটি রি-সিডিউল করা হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে বিমান প্রশাসন পরিচালনা করার মতো কোন শীর্ষ কর্মকর্তা নেই। বিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক পদ শূন্য আছে গত ৩ মাস ধরে। আর এক মাস পর বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হবে। এখনও হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি বিমান। জানা গেছে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করা হচেছ। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে পরিচালক পরিকল্পনা ও প্রকিউরমেন্টের দুটো পদ। এগুলো পূরণের দিকে বিমানের কোন নজর নেই। অথচ মাত্র কদিন আগে পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক মার্কেটিংয়ের শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। এখন আবার হঠাৎ এই পদে আবারও পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বিমান ম্যানেজমেন্টের এহেন কা- দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বলেন, এটা কি ধরনের ম্যানেজমেন্ট আমি কিছুই জানি না। তিনি এ নিয়ে বিমান সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে কাস্টমার সার্ভিস পদের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করে আসছেন আতিক সোবহান। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না রহস্যজনক কারণে। একইভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে খান মোশাররফ হোসেনকে। প্রকৌশল শাখার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করতে গিয়ে বিমান ম্যানেজমেন্ট যে অদূরদর্শিতা ও সিদ্ধান্তহীনতার পরিচয় দিয়েছে তা এয়ারলাইন্সটির চরম দৈন্যেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন সেক্টরকে সঠিক সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েই টিকতে হচ্ছে। যে এয়ারলাইন্স যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে। বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখা বলছে, বর্তমানে দুটি উড়োজাহাজ বিকল হয়ে আছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানের এই উড়োজাহাজ সঙ্কটের পুরোটাই কৃত্রিম। এর নেপথ্যে কাজ করছে উড়োজাহাজ লিজ বাণিজ্য। গত সপ্তাহে একটি এয়ারবাস লিজ নেয়া হয়। হজের জন্য আরও দুটি উড়োজাহাজ ভাড়ার জন্য চেষ্টা চলছে। অভিযোগ আছে নিজস্ব উড়োজাহাজগুলো যে পাখির আঘাতে ওই উড়োজাহাজ বিকল হয়েছিল, ওই পাখির ওজন নাকি ৩৪ কেজি। একইভাবে একটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজও ঠিক না করে ঢাকার হ্যাঙ্গারে ফেলে রাখা হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ হ্যাঙ্গারে ফেলে রাখা হয়েছে। জানা যায়, দেশের ৭টি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার দুটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করে থাকে বিমান। শুধু চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন করা হয়। অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় দুটি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করে বিমান। এ অবস্থায় হঠাৎ উড়োজাহাজ দুটি গ্রাউন্ডেড থাকায় মঙ্গলবার কোন ফ্লাইট চালাতে পারেনি বিমান। ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটেছে বুধবারও। আজ বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক মার্কেটিং আলী আহসান বাবু। তিনি বলেছেন, দুটি উড়োজাহাজের মধ্যে নিয়মিত ইঞ্জিন মেরামতের জন্য একটি রয়েছে হ্যাঙ্গারে। অন্যটিও ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দেয়ায় মেরামতের জন্য হ্যাঙ্গারে নেয়া হয়েছে। তবে একটি ঠিক হয়ে গেছে। সেটা দিয়ে ইয়াংগুন ফ্লাইট অপারেটর করা হয়েছে বুধবার। আজ বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
×