ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়;###;ওয়েস্কেল ও ফেরীঘাটে যানজট;###;মহাসড়কে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে

আনন্দের ঈদ উদযাপনে যাত্রা শুরু বাড়ির পানে

প্রকাশিত: ০২:৪৩, ২১ জুন ২০১৭

আনন্দের ঈদ উদযাপনে যাত্রা শুরু বাড়ির পানে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হয়েছে আনন্দের ঈদ যাত্রা। সব সময় ছুটিতে বাড়ি না গেলেও ঈদ আসলে তার ব্যতিক্রম হয় না। আর তাইতো নাড়ির টানে বাড়ির পানে পথ ধরেছে বুধবার থেকেই। যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ, বন্ধ হয়ে ‍যাওয়ায় কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে। তবে কর্মজীবী বা অন্যান্য পেশাজীবীদের অনেকটা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো আজ থেকেই। ঈদ যাত্রায় দেশের বিভিন্ন ফেরীঘাট ও ওয়েস্কেল গুলোতে যানজটের ভোগান্তি বাড়ছে। তবে বাড়ি ফেরার যাত্রার প্রথম দিন মহাসড়কের কোথাও কোথাও যানজটের খবর পাওয়া গেলেও রাজধানীর বাস টার্মিনালের চিত্র ছিল কিছুটা স্বস্তিদায়ক। এদিকে, অগ্রিম টিকেট নেয়া লোকজন রেলপথে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। প্রথমদিন কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে বেশকিছু ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। অর্থাৎ কিছুটা সিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ঈদে ঘরমুখো মানুষের য়াতায়াতের জন্য ১২ জুন থেকে অট্রিম টিকেট বিক্রি করে রেলওয়ে ও বেসরকারী বিভিন্ন বাস। ২১ জুন ছিল ঘরে ফেরার যাত্রা শুরুর প্রথম দিন। অর্থাৎ এ দিন ধরেই টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিল। বিআরটিসি বাসে অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও তেমন একটা সাড়া মেলেনি। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর অন্যতম প্রধান বাস টার্মিনাল গাবতলীতে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বাসে যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি। সাধারণ পরিবহনগুলোর টিকেটও পাওয়া যাচ্ছে সহজে। সিট ফাঁকা থাকায় অনেক বাসে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতেও দেখা গেছে। তবে কাল বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন কাউন্টার ম্যানেজাররা। কুষ্টিয়াগামী স্কাইলাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার খলিল বলেন, আজকে দিনের সার্ভিসগুলোতে দু-চারটে সিট ফাঁকা; যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে আগাম টিকেটের যাত্রীও আছেন। অনেকে কাউন্টারে এসে ২২, ২৩ ও ২৪ তারিখের টিকেট চাইলেও ওই তিনদিনের কোনো সিট ফাঁকা নেই বলে জানান তিনি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোম বা মঙ্গলবার ঈদ হওয়ার কথা থাকলেও ছুটির আগে বৃহস্পতিবারই শেষ কর্মদিবস। তবে গত ১২ জুন বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিল বুধবারের টিকেট দিয়ে। ফলে সরকারি ছুটি শুরু না হলেও বুধবারই ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। প্রথমদিনে ঢাকা থেকে যাত্রা কিছুটা নিরাপদে হলেও দক্ষিণবঙ্গগামী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশ ও উত্তরবঙ্গগামী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোথাও কোথাও যানজটে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রসিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পোস্তগোলা, দাউদকান্দি, ভূলতা, গাইসিয়া, সিরেসরাই পয়েন্টে যানজট হচ্ছে। এই রুটের বরদরগার হাট এলাকায় এয়েস্কেলে পণ্যবাহি পরিবহন থেকে চাঁচা নেয়াকে কেন্দ্র করে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি জানান, টিকেট ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে শরিয়নপুরের কাউড়াকান্দি পয়েন্টে যানজট হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা নিরসন করা সম্ভব বলেও মনে করেন প্রবীণ এই শ্রমিক নেতা। জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় জেলায় চলাচলকারী কেয়া পরিবহনের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন বলেন, ওই তিন জেলায় তাদের প্রতিদিন দুটি করে বাস যাচ্ছে। বুধবার যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। তবে মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস ছাড়তে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে বলে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার জীবন জানান। তিনি বলেন, ‘১৮, ১৯, ২০ জুন- এই তিনদিন যে পরিমাণ যাত্রীর চাপ ছিল, আজকে সেই তুলনায় অনেক কম। তবে কাল পরশুর সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। ২২-২৩ তারিখের টিকেট কিনতে এসে অনেক যাত্রী ফেরত যাচ্ছেন।’ পাটুরিয়া ঘাটে যানজট ॥ মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট পারাপারে অপেক্ষমান যানবাহনের লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ঘরমুখো যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে পেছনের দিকে ২ কিলোমিটারের বেশি এলাকা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। আলাদা লাইনে ঘাট পারের অপেক্ষায় দেখা যায় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িকে। সকাল থেকেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান নৌও রুটটিতে যানবাহনের এই চাপ দেখা যায়। এ বিষয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার বাণিজ্য বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় নৌরুট পারাপারের বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বাড়ছে। যে কারণে নৌরুট পারাপারের অপেক্ষায় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় বাসের লাইন দুই কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টা বা ৫টা নাগাদ যানবাহনের চাপ একটু কমতে পারে। রেলপথে বিড়ম্বনা ॥ ঈদযাত্রার শুরুর দিন সকালের ভাগে আগাম টিকেটের যাত্রীদের নিয়ে রাজধানী থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়েও গেলেও কয়েক ঘণ্টা পার হতেই সিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে পাঁচটি ট্রেনের কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সবগুলোই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে যাত্রা করে। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলছেন, বগিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় এবং ঢাকায় ফিরতে দেরি হওয়ায় সময়সূচীতে এই গড়বড়। সিলেটের উদ্দেশ্যে ‘জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস’ দুপুর ১২টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও একটি বগিতে সমস্যা থাকায় দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে ‘রাজশাহী এক্সপ্রেস’ ১২টা ২০ মিনিটের বদলে দুপুর ২টায় স্টেশন ছেড়ে যায়। ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ‘ঈশাখাঁ এক্সপ্রেস’ বেলা সাড়ে ১১টার ছাড়ার কথা থাকলেও দেরি করে দুপুরে সোয়া ১২টায় ট্রেনটি স্টেশন ছাড়ে। অন্যদিকে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ বেলা ১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস স্টেশনে আসতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি এর একটি বগিতে সমস্যা থাকায় ছাড়তে দেরি হয়। একই ধরনের সমস্যার কারণে চট্টলা এক্সপ্রেসও ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে জানান তিনি। আর রাজশাহী এক্সপ্রেস লোকাল ট্রেন জানিয়ে সিতাংশু বলেন, এই ট্রেনটি নিয়মিতভাবে সময়সূচীর অনিয়ম করে থাকে। তবে সোয়া ২টার দিকে এটি ছেড়ে যায়। ঈদযাত্রার শুরুর দিনই ট্রেনের সময়সূচী বিপর্যস্থ হওয়ায় রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশরেন বুধবার দুপুরে ছিল এমন ভিড়। এর আগে সকাল ৯টায় ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ এক ঘণ্টা দেরি করে ১০টায় রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি আসতে দেরি হওয়ায় ও একটি বগি পরিবর্তনের কারণে ছাড়তে দেরি হয় বলে স্টেশন ম্যানেজার জানান। আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত অগ্রিম টিকেটের ট্রেন ছাড়াও বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসবের মধ্যে আছে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল: ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। চাঁদপুর স্পেশাল-১: চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। চাঁদপুর স্পেশাল-২: চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। রাজশাহী স্পেশাল: রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। পার্বতীপুর স্পেশাল: পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই। শোলাকিয়া স্পেশাল-১: ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ- ভৈরববাজার, পবিত্র ঈদের দিন। শোলাকিয়া স্পেশাল-২: মংমনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-মংমনসিংহ, পবিত্র ঈদের দিন। সড়কপথের চিত্র ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, মেঢ়না-গোমতি সেতু, মিরেসরাই, ভূলতা-গাইসিয়া সহ অন্তত আটটি পয়েন্টে যানজট হয়েছে। রুপগঞ্জ এলাকায়ও ছিল যানজটের ভোগান্তি। এর কারণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, রাস্তাজুড়ে পার্কিং, যেখানে সেখানে যাত্রী তোলা, টোল প্লাজায় পণ্যবাহি পরিবহন নিয়ে জটিলতা ও ওয়েস্কেল নিয়ে সমস্যা। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকালে যানজটের ভোগান্তি ছিল বেশ। দুপুরে সড়কপরিবহন মন্ত্রী চন্দ্রা এলাকায় যান হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করতে। এ উপলক্ষে তৎপরতা দেখা যায় পরিবহন মালিক শ্রমিক সহ পুলিশ প্রশাসনের। এক ঘন্টার মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকেলে আবারো কিছুটা যানজট দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে সড়কে নির্মাণ কাজ হওয়া, যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা ও ভাঙাচোরা সড়ককেই দায়ি করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের টঙ্গী বাইপাস অংশে যানজট হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি ছিল। থেমে থেকে চলেছে যানবাহন। দুপুরের পর যানজট পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিকেলে ফের যানজট শুরু হয়।
×