ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ খেলাপীর সংখ্যা দুই লক্ষাধিক ॥ সংসদে অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২১ জুন ২০১৭

ঋণ খেলাপীর সংখ্যা দুই লক্ষাধিক ॥ সংসদে অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ বর্তমানে দেশের সকল তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬২৩ জন। খেলাপী ঋণ আদায়ে সরকার খেলাপী গ্রাহক চিহ্নিতকরণ ও তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ বছর তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ আদায় হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম পিনু খান ও জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের পৃথক দুটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ তথ্য জানান। মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৬২৯ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ৬৫৪ কোটি, জনতা ব্যাংকের ৬ হাজার ৫১০ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ২৫৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার ৮৬ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ৪৮৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ২৬৪ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ৩২৮ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ১৫০ কোটি, বিডিএল’র ৮৫৪ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ১৩০ কোটি, কৃষি ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ৯৩০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক হাজার ৫ কোটি খেলাপী ঋণের বিপরীতে ২২৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, খেলাপী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যেই অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ প্রণয়ন করেছে। উক্ত আইনের আওতায় খেলাপী ঋণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এছাড়া দেউলিয়া আইন ১৯৯৭ এর আওতায় খেলাপী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে খেলাপী ঋণ আদায় করা হচ্ছে। তিনি জানান, শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে আদায় হার যেন কোনভাবেই নি¤œগামী না হয়, বরং উত্তরোত্তর যাতে অগ্রগতি সাধিত হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৭ ভাগ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে। আর আগামী অর্থবছরে (২০১৭-১৮) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রফতানি বৃদ্ধি ও রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ। এসব কাজকে উৎসাহিত করতে সম্ভাবনাময় এলাকাসমূহে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের বেশির ভাগই আদায় হয়নি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোঃ আবদুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া যায়নি। ফিলিপিন্সে পাঠানো অবশিষ্ট অংশ উদ্ধারে সকল সংস্থা একযোগে কাজ করছে। মন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (এফআরবি, এনওয়াই) যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত দেয়। অন্যদিকে ফিলিপিন্সে পাঠানো বাকি ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এফআরবি, এনওয়াইর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়েছে। তিনি জানান, ফিলিপিন্সে পাঠানো টাকার অবশিষ্ট অংশ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, অর্থ মন্ত্রণালয়, এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ সকল সংস্থা একযোগে কাজ করছে। তিনি জানান, এ চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং চুরিকৃত অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে বর্তমানে ফিলিপিন্সের আইনি উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
×