স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে ১৪ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার দুটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) আওতাভুক্ত দেশের সব এলাকা বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে যাবে। ২৭ লাখ নতুন গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে যুক্ত হবেন। মঙ্গলবার বিকেলে চলতি অর্থবছরের শেষ একনেক সভায় প্রকল্প দুটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু বিদ্যুতের খুঁটি বসানো নয়, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য এ প্রকল্প। বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ চলমান আছে। আগামী গরমের আগেই বিদ্যুত পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ২৫ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩৪ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৪০৫ কোটি ব্যয় করা হবে। মন্ত্রী জানান, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ২৯৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১২টি প্রকল্প পাস করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭৮টি প্রকল্প পাস করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এখন থেকে রাস্তার পাশে যেখানেই রেললাইন তৈরি হবে, সেখানেই ওভারপাস করতে হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচী প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বিপিএটিসির প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৯ কোটি টাকা। সাপোর্ট টু ঢাকা এলিফেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বরিশাল-পটুয়াখালী মহসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২১১ কোটি ২০ লাখ টাকা। চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ (জেড-৮৭০১) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বন্দরসেরি বেগওয়ানে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও হাইকমিশনারের বাসভবন নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলাধীন ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।