ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাজিমউদ্দীন রোডের জেলের জমিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পার্ক হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২১ জুন ২০১৭

নাজিমউদ্দীন রোডের জেলের জমিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পার্ক হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে বিনোদন সমৃদ্ধ দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। ২২৮ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশের প্রথম তৈরি এ কারাগারটির পরিত্যক্ত জমিটিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কারা অধিদফতর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে পুরান ঢাকাবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হবে এ পরিত্যক্ত স্থানটি। এছাড়া বিয়ে, জন্মদিন উদযাপন, অবসর সময় কাটানো, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এটি পুরান ঢাকার সর্ববৃহৎ স্থানে পরিণত হবে। প্রায় ২২ একর জমিতে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ‘সর্বোচ্চ সবুজায়ন, ন্যূনতম নির্মাণ’কে প্রাধান্য দিয়ে সকল কর্মকা- সম্পাদন করা হবে। তিন ধাপে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত এ পরিকল্পনাটির প্রথম ধাপ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ভূমির সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহারের জন্য অতি দ্রুত বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্থপতিদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডিজাইন আহ্বান করা হবে। অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এ স্থানটিকে মোট তিন ভাগে ভাগ করে এক বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কারা অধিদফতর। মূল কারাগারের ১৭ একর জমি ও এর আশপাশের চকবাজার এলাকার (মেন্টাল এলাকা বলে পরিচিত) প্রায় ৪ দশমিক ৯০ একর জমিতে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। কারা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের এ জমিটিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে ও ইতিহাস হিসেবে স্থানটির গুরুত্ব ধরে রাখতে এ কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ, বি এবং সি তিনটি জোনে ভাগ করা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কারা অধিদফতর উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রাথমিক অংশ হিসেবে প্রথম পর্বের কাজ ডিসেম্বর ২০১৮ এর মধ্যেই শেষ করতে চায় কারা অধিদফতর। এজন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলমান রেখেছে কারা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জমিটির সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ও সুন্দর মনোরম দৃশ্য নক্সায় গড়ে তুলতে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আর্কিটেকচারদের কাছ থেকে পরিকল্পনা আহ্বান করা হবে। ‘সর্বোচ্চ সবুজায়ন, ন্যূনতম নির্মাণ’কে প্রাধান্য দিয়ে স্থানটিকে বেশি কাজে লাগাতে কারা অধিদফতর তাদের পক্ষ থেকে কি কি স্থাপনা রাখা যায় বা জমির সঠিক ব্যবহার পরিকল্পনায় যুক্ত করতে মতামত প্রদান করবে। তবে এসব পরিকল্পনাসহ প্রকল্পটির সুন্দর আর মনোরম করে গড়ে তুলতে আর্কিটেক্টদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। এদের মধ্য থেকে ৩ জন শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য পরিকল্পনা প্রদানকারীকে মোট ১৫ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। এসব পরিকল্পনা অতি সূক্ষ্মভাবে যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম স্থান অর্জনকারী স্থপতিকে ৭ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫ লাখ টাকা ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে এই তিন জনের স্থাপত্য পরিকল্পনাকে সমন্বয় করে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র জানায়, কারাগারের সীমানায় অবস্থিত কোন কোন স্থাপনা রাখা হবে কি রাখা হবে না তা নির্ধারণ করতে ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটিতে দেশের বিখ্যাত স্থপতিবিদ, ইতিহাসবিদ ও শিল্পীদের রাখা হয়েছে। কমিটিতে ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শায়ের গফুর, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সুফী মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রফেসর আখতার হোসেন, বুয়েটের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শিল্পী হাশেম খান ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কিউরেটর শিল্পী রবিউল হোসাইন। এই কমিটির সদস্যগণ সকল ডিজাইন পর্যালোচনা করে যাচাই বাছাই শেষে উক্ত স্থানটির সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে কাজ করবে। এছাড়া কমিটির সদস্যগণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কারাগারের জমির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্দেশনা প্রদান করবে বলে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত প্রায় ৩৬.২১ একর জমিকে কাজে লাগাতে ‘ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিতকরণ বিষয়ক প্রকল্পের’ কাজের সুবিধার্থে করা পরিকল্পনাধীন তিনটি জোনের মধ্যে জোন এ তে : ৬শ’ লোক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি মাল্টিপারপাস হল, সমস্ত এলাকাবাসীর বিনোদনের জন্য ২শ’ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা, পাশে সিনিপ্লেক্সের জন্য খাবার ঘর, ঢাকার বিভিন্ন পুরনো আমলের ঐতিহ্যবাহী জিনিস নিয়ে সনাতন শপিং ও হস্তশিল্প মার্কেট নির্মাণ, ২শ’ গাড়ি রাখার পার্কিং এরিয়া যার ৫% ভূতলে থাকবে। নব আঙ্গিকের ওয়াটার বডি বা সুইমিং পুল তৈরি করার কথা রয়েছে। এছাড়া কারা এলাকায় স্থাপিত বিদ্যমান স্কুলটিকে অন্যত্র স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই জোনের মোন জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৫০ একর। জোন বি তে : বুক স্টোর, পুরান ঢাকার ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সকল ব্যতিক্রমী খাবারের সনাতন ফুডকোর্টের পাশে ভূগর্ভস্থ ৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে। এই জোনের ভূমির পরিমাণ ১ দশমিক ৪০ একর। জোন সি তে : এই অংশটিই মূলত কারাগারের প্রধান অংশ। এই জোনেই সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পুরাতন কারাগারটির পেরিমিটার দেয়ালের মধ্যে সকল ভূমিই জোন সি এর অন্তর্ভুক্ত। এই জোনে কন্ফাইন্ড হেরিটেজ রাখা হবে। অর্থাৎ পুরনো কারাগারটিতে মোঘল ও ব্রিটিশ আমলে বেশ কিছু ভবনকে ঐতিহ্য হিসেবে ভাঙ্গতে দেয়া হবে না। দর্শনার্থীদের প্রদর্শনের জন্য ঐতিহ্য হিসেবে রাখা হবে। তবে এগুলো সংশ্লিষ্ট কমিটি নির্ধারণ করবেন। এই স্থানের মধ্যে পার্ক ও খোলামেলা স্থান রাখা হবে। গাড়ি পার্কিং ও বসার জন্য উন্মুক্ত জায়গায় সুন্দর বেঞ্চ তৈরি করা হবে। সাইকেল দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সাইক্লিং ও হুইল চেয়ার ট্র্যাকের ব্যবস্থা করা হবে। সমস্ত প্রকল্প এলাকার যত গাছ রয়েছে তা কাটা হবে না বলে জানা গেছে। এছাড়া নতুন নতুন দেশীয় গাছ রোপণ করা হবে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু স্থাপনা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে মূল ঢাকা ফোর্টের (দুর্গের) স্থাপনা কাঠামো সংরক্ষণ করা, কারাগারের ভেতরের মৃত্যুঞ্জয়ী প্রকোষ্ঠকে (যেখানে ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়) কারা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরকরণ, পুরো দেওয়ানি প্রকোষ্ঠকে (যেখানে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ বছর কারা জীবন কাটিয়েছেন) বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এ রূপান্তরকরণ, ঢাকার সকল ঐতিহ্য নিয়ে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা, সারাদেশের সকল কারা স্থাপনা ও ঐতিহ্য নিয়ে কারা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পরিকল্পনায় গ্রন্থাগার তৈরি, বুকশপ, ফুডকোর্ট স্থাপন, পদ্মা, মেঘনা, সুরমা, যমুনা (আমদানি ওয়ার্ড), নারী ও কারা হাসপাতাল হিসেবে অভিযোজনযোগ্য পুনর্ব্যবহার করা যায় কি না তা ভেবে দেখা হবে। পুরনো এ কারাগারটির জেলগেট ও চারদিকের চারটি ওয়াচ টাওয়ার সংরক্ষণ, নতুন ও পুরাতন ফাঁসিরকাষ্ঠ ও ১টি রান্নাঘর সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান কারা প্রাচীরটি রাখার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, বর্তমান কারাবন্দীদের কম্বল ব্যবহারের জন্য তৈরি কম্বল ফ্যাক্টরিটিকে অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব স্থাপনা তৈরির পর পুরান ঢাকায় বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বিনোদনমূলক স্থান পরিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনার সংস্কার হলে অতিরিক্ত দর্শনার্থী সমাগম ঘটবে। এর ফলে উদ্ভূত যানজট দূর করতে বর্তমান ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিংয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনাবিদদের সমম্বয়ে ট্রাফিক ইমপেক্ট এসেসমেন্ট (টিআইএ) বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া পুরান ঢাকার নাগরিকদের বিকেল বেলায় বিশেষ বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা বা খোলা আলোচনার জন্য কারা সীমানায় বিদ্যমান বৃহৎ পুকুরের পার্শে¦ ধানম-িস্থ ‘রবীন্দ্র সরোবর’ এর আদলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া কারাগারের মূল প্রবেশদ্বারের সঙ্গে টয়লেট, স্যুভেনির শপ, অনুসন্ধান কেন্দ্র, গাইড সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার পরিকলল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় হস্তশিল্পের দোকান রাখা। সর্বসাধারণের চলাচলের পথকে সুগম রাখা ও প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান সকল ঐতিহাসিক মসজিদ রাখা হবে। তবে কোনভাবেই যেন কারাগারের আবহ নষ্ট না হয় তার প্রতি সর্বোচ্চ জোর দেয়া হবে বলে জানা গেছে। কারা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারা কর্তৃপক্ষ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় উপরোল্লিখিত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষ আর্কিটেক্টদের কাছে এই জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য পত্রিকায় প্রকাশিতব্য নক্সা তৈরি করে জমা দেয়ার পর কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে কি না তা ভেবে দেখা হবে। চূড়ান্ত ডিজাইন অনুযায়ী এসব পরিকল্পনায় বড় রকমের পরিবর্তনও হতে পারে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে জানান, পুরান ঢাকার তথা দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জমিটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ‘সর্বোচ্চ সবুজায়ন ন্যূনতম নির্মাণ’কে প্রাধান্য দিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পুরান ঢাকা তথা রাজধানীসহ সারাদেশের নাগরিকদের কাছে ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে আকর্ষণীয় করে বিনোদন সমৃদ্ধ দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এ, বি ও সি তিনটি জোনে তিনটি ধাপে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এই স্থানে কি কি স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা যায় তার জন্য দেশের বিখ্যাত স্থপতিবিদ, প্রকৌশলী, ইতিহাসবিদ ও শিল্পীদের সমন্বয়ে ৮ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিজাইন ও স্থাপনা নির্মাণে এই কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের পরিকল্পনা অনুযায়ী সি জোন অর্থাৎ পেরিমিটার দেয়ালের ভেতরের অংশে অর্থাৎ মূল কারাগার অংশে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, জাতীয় চার নেতা স্মৃতি কারা জাদুঘর সকলের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। পাশাপাশি খোলা পার্ক স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীরা পুরনো সকল ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার সুযোগ পাবেন। প্রথম ধাপের কাজ আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ডিজাইন পাওয়ার পর চূড়ান্ত করে দুই ধাপে বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া সবকিছুই করা হবে কারাগারের আবহ ঠিক রেখে সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে। পরিত্যক্ত ভূমির সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহারের জন্য আমরা অতি দ্রুত বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্থপতিদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডিজাইন আহ্বান করা হবে। চূড়ান্তভাবে মনোনীত ডিজাইন প্রদানকারী তিন জনকে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৭ লাখ টাকা দ্বিতীয় পুরস্কার ৫ লাখ টাকা ও তৃতীয় পুরস্কার ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একনেকে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য পাঠাব। অনুমোদন শেষে প্রকল্পটির কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হবে।
×