ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অননুমোদিত পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ

ভূমিধস প্রতিরোধে পাহাড়ে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২১ জুন ২০১৭

ভূমিধস প্রতিরোধে পাহাড়ে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভূমিধস প্রতিরোধে পাহাড়ে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে অননুমোদিত পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলন বন্ধ, চলমান সব হাউজিং প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখাসহ একগুচ্ছ সুপারিশও এসেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর মতামত নিয়ে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে। সচিবালয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট ভূমিধস পরিস্থিতিসহ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আজ জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে এবং সমালোচনা করছে, তাদের আমলে ঘূর্ণিঝড়ে এক লাখ ৩৮ হাজার লোক মারা গিয়েছিল। তখন আমরা সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলাম। আমরা তো জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে বলিনি। পরপর কয়েকটি দুর্যোগ এসেছে। আমাদের কাজে এবং আন্তরিকতায় কোন ত্রুটি আছে কি-না দেখেন। ফাঁকা আওয়াজ করে কোন লাভ হবে না। তিনি বলেন, একটি দলের সাধারণ সম্পাদককে পাহাড়ধস দেখতে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের কাজ নয়। যারা করেছে তদন্ত করে সরকার তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে। গাছ কেটে ফেলায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া হয়ে গেছে, হচ্ছে ধস- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পাহাড় ন্যাড়া হয়েছে এটা ঠিক। এটা কিন্তু একদিনে হয়নি। সেখানে যখন নতুনভাবে বসতি স্থাপন হলো তখন থেকেই ন্যাড়া হওয়া শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাব। প্রতিটি পাহাড়ের গায়ে গাছ লাগানো হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনামাফিক এটি করতে চাই। আগে আরেক সরকারের সময় পরিকল্পনা করা হয়েছে তারা সে ফাইল চাপা দিয়ে রেখেছে। আমরা বাস্তবমুখী কর্মসূচী নেব। ছয় মাস পরে এটি দৃশ্যমান হবে। পাহাড়ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হবে জানিয়ে মায়া বলেন, ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সভা করেছি। সেটি একত্রিত করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আপনাদের কাছে পেশ করব। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশগুলো তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহযোগিতা, অননুমোদিত সব ধরনের পাহাড় কাটা বন্ধ করা, বালি উত্তোলন বন্ধ, চলমান সব হাউজিং প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা, পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনীয় কৌশলগত ব্যবস্থা করা, জরুরী ভিত্তিতে ভূমিধসকবলিত জেলা ও তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ী এলাকাগুলোকে জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করে মানচিত্র প্রদর্শন করা। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের বিপদসঙ্কুলতা নিরূপণ করে এর মাত্রা অনুযায়ী তা পাহাড়ী বসতি এলাকার মানচিত্রে প্রদর্শন করা, একটি শক্তিশালী ভিজিলেন্স টিম গঠন, যেসব পাহাড়ের পাদদেশের ঢালু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী গাইডওয়াল, পানি নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর তৈরি, দুর্যোগকবলিত মানুষদের যেখানে আশ্রয় দেয়া হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির সুপারিশ এসেছে। তিনি বলেন, ১৮টি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো একত্রিত করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আমরা চাই এ ধরনের পাহাড়ী ঢলে বা অতিবৃষ্টিতে আর যেন মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে চাই। পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর তিন কর্মকর্তাসহ ১৬৬ জন লোক মারা গেছেন জানিয়ে মায়া বলেন, এতে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ লোক আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ী ধস নামা ছয়টি জেলায় এক হাজার টন চাল দেয়া হয়েছে, ৮৪ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে। ৫০০ বান্ডিল টিনের সঙ্গে বান্ডিলপ্রতি তিন হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে ঘর নির্মাণের জন্য। সেখানে ৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় কয়েক হাজার মানুষকে উঠিয়ে এনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৮৩টি মেডিক্যাল টিম সেখানে কাজ করছে। মারা যাওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজনকে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত খাবারের যোগান দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে পরে আরও সাহায্য দেয়া হবে। আমাদের খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ আমাদের কাছে মজুদ রয়েছে। পাহাড়ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। একটু সময় লাগছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হলো না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘কেন করা হবে? ১৭ কোটি মানুষ। তিন জেলার মধ্যে একটি জেলায় ৮০ হাজার পরিবার, একটি জেলায় ৭০ হাজার আর আরেকটি জেলায় ৬০ হাজার পরিবার। লোকসংখ্যা সব মিলিয়ে হবে এক বা দেড় কোটি। এর ভেতরে হঠাৎ বৃষ্টি এসে পাহাড় ধসে গেছে। একটি ইউনিয়নেই লোক মারা গেছে ১৩ জন। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
×