ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন ধসে খাগড়াছড়ি- লংগদু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ;###;চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক হাল্কা যান চলাচলে খুলে দেয়া হচ্ছে

পাহাড়ে ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ড ॥ পরিস্থিতির উন্নতি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২১ জুন ২০১৭

পাহাড়ে ক্ষয়ক্ষতির রেকর্ড ॥ পরিস্থিতির উন্নতি

মোয়াজ্জেমুল হক/মোহাম্মদ আলী/জীতেন বড়ুয়া/এস বাসু দাশ ॥ কোথাও উন্নতি। কোথাও ছোট ছোট অবনতি। কোথাও নতুন ধস। কোথাও নতুন করে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। তবে পাহাড়ে সার্বিক চিত্রে এসেছে অগ্রগতি। তারপরও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, শঙ্কা নিয়েই চলছে সবকিছু। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি কিভাবে হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সরকারী পর্যায়ে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ দুর্যোগে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা দেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড হিসাবে স্থান করে নেবে। এ ক্ষতির পরিমাণ কিভাবে নির্ণয় করা যাবে তা কঠিন। গবেষণা কার্যক্রম চালিয়েও এর নিরূপণ করা যাবে কিনা তা বলা মুশকিল বলে প্রশাসনের সকল সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের পর পাহাড় ধস, সড়কের পর সড়ক বিধ্বস্ত এবং এর সঙ্গে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি নিরূপণ করা রীতিমত দুঃসাধ্য। ভারি বর্ষণে সৃষ্ট ধস ও ঢলে বিপর্যস্ত পার্বত্যাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। তবে বাঘাইছড়িতে সোমবার রাতে একটি পাহাড় থেকে ধস নেমেছে। এতে করে খাগড়াছড়ি-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া পাহাড়ী ঢলে মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছোট মেরুং এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মানিকছড়ি ও সাপছড়ি এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে সড়ক যোগাযোগ হালকা যানবাহনের জন্য আজ বুধবার খুলে দেয়া হতে পারে বলে চট্টগ্রাম সেনানিবাস সূত্রে জানানো হয়েছে। দুপুরের দিকে ওইস্থানে যাচ্ছেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার। অপরদিকে, বান্দরবান-রুমা সড়ক চলাচল অষ্টম দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে ধীরে ধীরে আশ্রিতরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। আর যারা বাড়িঘর হারিয়েছে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম ও পার্বত্যাঞ্চলের তিন জেলায় একযোগে পাহাড় ধসে যে মহাদুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা অতীতে আর কখনও ঘটেনি। পার্বত্যাঞ্চলের সব পাহাড়ই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধস ও ফাটলে। শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাণ হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক পাহাড়ী বাঙালী। পাহাড়ে নজিরবিহীন এমন ঘটনার পর যে পরিবেশ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, এতে সর্বত্র এক ধরনের অজানা শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বৃষ্টি বাদল ও ঘূর্ণিঝড়ের এদেশে বর্ষা মৌসুমে আগামীতে এ পাহাড়ে কি পরিস্থিতি রূপ নেয় তা নিয়ে শঙ্কিত পাহাড়বাসী। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে প্রায় সব পাহাড়ই ক্ষতিগ্রস্ত। প্রকৃতিসৃষ্ট এমন পাহাড়ই রয়েছে যা মানুষের হিংস্র ছোবল স্পর্শ করেনি। অথচ ওই জাতীয় পাহাড়ও ধসেছে। ভূতাত্ত্বিকসহ বৈজ্ঞানিক সর্বাধুনিক গবেষণায় এর প্রকৃত কারণ জানার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেলেও এ কাজ শুরু হয়নি। তবে সিভিল, সেনা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ধসের যে কারণ প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, তাতে অস্বাভাবিক কোন তথ্য উঠে আসেনি। পাহাড় কাটা, জুম চাষ, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর তৈরি, সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি জাতীয় কথা বলা হলেও ১৩ জুন একযোগে পাহাড়জুড়ে ধসের যে ধ্বংসলীলা সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ধসের এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙ্গামাটি। এ রাঙ্গামাটি জেলা শহর ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি উপজেলাও ক্ষতিমুক্ত নয়। সরকারী-বেসরকারী কোন সংস্থার পক্ষ থেকে এ দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব এখনও হয়নি। আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা, টাকার অঙ্কে এর ক্ষতি নিরূপণ করা সহজ কোন কাজ নয়। মৃত্যুর সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। বাড়িঘর ধংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পরিসংখ্যানও হবে। কিন্তু সবমিলে আর্থিকভাবে কি পরিমাণ ক্ষতির মুখ পড়েছে পার্বত্য তিন জেলা তা নিরূপণ করা কঠিন। তিন পার্বত্য জেলায় নগরায়ন ও সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে মূলত পাহাড় কেটেই। রাস্তাঘাট নির্মাণ থেকে শুরু করে নগরায়নের জন্য এ পর্যন্ত যা হয়েছে সবই পাহাড় কেটে। পাহাড় আর পাহাড়ে দেশের এক-দশমাংশ নিয়ে পার্বত্যাঞ্চল। উন্নয়নের জন্য সেখানে পাহাড় কাটতেই হয়েছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আজ বুধবার মানিকছড়ির সাপছড়ি এলাকায় যে বিধ্বস্ত সড়ক পুন চলাচলের জন্য চালু করা হচ্ছে এতেও নতুন করে পাহাড়ের পাদদেশের অংশ কাটতে হয়েছে। কেননা, ধসের কারণে যে সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে তা পুনরায় মাটি ভরাট করে সংস্কার সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারি বর্ষণের কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পুনরায় চলে গেছে ভরাট অংশ। সঙ্গত কারণেই জন ও যানবাহন চলাচলের জন্য নতুন করে পাহাড় কাটা ছাড়া আর বিকল্প নেই। রাঙ্গামাটি পরিস্থিতি ॥ পাহাড় ধসে সৃষ্ট মহাদুর্যোগে বিছিন্ন হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক আজ এক লেনে খুলে দেয়া হচ্ছে। মানিকছড়ি থেকে সাপছড়ি হয়ে শহর এলাকা পর্যন্ত যেসব স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগ গত আটদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে তা আজ থেকে চলাচল উপযোগী হচ্ছে। তবে তা হালকা যানবাহনের জন্য। ভারি যানবাহন চলাচল শুরু করতে প্রায় একমাস সময় নেবে বলে সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ও সড়ক বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তবে পুনরায় ভারি বর্ষণ হলে এ সংস্কার ধরে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত ১৩ জুনের মহাদুর্যোগের ঘটনায় রাঙ্গামটিতে এ পর্যন্ত ১১৮ জনের মৃত্যুর তালিকা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তবে ২ জনের বিষয়টি নিশ্চিত। মঙ্গলবার রাত থেকে বর্ষণ কমে যাওয়ায় জেলাজুড়ে স্বস্তি ফিরে আসছে। ক্ষতিগ্রস্তরাসহ জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার পথে। রাঙ্গামাটির পৌর মেয়র জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫শ’ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চালসহ বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দের টিন আসলেও তা এখনও বিতরণ করা হয়নি। রাঙ্গামাটির আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুই বেলা রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে আশ্রিতদের। সেনা, বিজিবি, পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে আশ্রিতদের জন্য এ সহায়তা চালু রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে আটটি টিম চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার জানিয়েছেন, পুরো জেলা জুড়ে ৪৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এরমধ্যে কাপ্তাই উপজেলায় তিনটি টিম চব্বিশঘণ্টা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামটি সড়কের ৬১ কিলোমিটার এলাকায় দেড়শ’ ফুট সড়ক ধসে গভীর খাদে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের মহালছড়ি এলাকায় ধসে পড়া মাটির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও চালু করা যায়নি। রাঙ্গামাটি বান্দরবান সড়কেও ১২ কিলোমিটার ধসে আছে। তবে রাঙ্গামাটির সঙ্গে বান্দরবান ও রাজস্থলীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সচল হয়নি। কাপ্তাই হয়ে নৌপথে রাঙ্গামাটির জন্য পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পরিস্থিতি ॥ খাগড়াছড়িতে সৃষ্ট দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি সার্বিকভাবে উন্নতি হলেও পাহাড়ী ঢলে দীঘিনালার ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে, অধিকাংশ এলাকার পানি নেমে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিতরা ঘরে ফিরে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, প্রবল বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ি-ঢাকা, খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম সড়কে যে সমস্ত এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েছে সেগুলোর মাটির অপসারণসহ রাস্তার ভাঙ্গা অংশ ঠিক করা হচ্ছে বলে জানান খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের সেকশন অফিসার মোঃ মাসুদ। এছাড়া শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া এলাকার বন্যাকবলিতরা নিজ নিজ বাড়ি ঘরে ফিরে গিয়ে তা বসবাসের উপযোগী করা কাজ শুরু করেছে। গত সোমবার ভোর থেকে টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, মেহেদীবাগ, মিলনপুর, সাতভাইয়া পাড়ামুখ, খবংপুড়িয়া, শান্তিনগর, অর্পণা চৌধুরী পাড়া, কল্যাণপুরসহ নয় গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ সময় ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু, পুকুর ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। ৫ শতাধিক পরিবার শহরের শিশু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মুসসিলমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশুদ্ধ খাবার পানির ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকাগুলোতে। অপরদিকে, খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি ৩নং গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে বন্যা দুর্গত পরিবারদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এ সময় ৭৫০ পরিবারকে চাল, আলু, লবণ, কয়েল, মোমবাতি ও তেল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রামগড় ও লক্ষ্মীছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১০ পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী, সতীশ চন্দ্র চাকমা, আব্দুল জব্বার, গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জ্ঞান ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। অনুরূপ ভাবে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে আশ্রিতদের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে । খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পাহাড়ী ঢলে জেলার যে সব উপজেলা প্লাবিত হয়েছে তার ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ করা হচ্ছে। এদিকে নতুন করে পাহাড়ী ঢলের বন্যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার দীঘিনালা উপজেলার মাইনি নদীর দুই কূল উপচে আশপাশের নিচু এলাকা তলিয়ে আছে। ছোটমেরুং বাজার ও আশপাশের সড়কে পানি উঠায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও পানিতে তলিয়েছে হাজাছড়া, সোবাহানপুর, চিটাগাংগ্যাপাড়া ও ছদকছড়া এলাকার বেশকিছু গ্রাম। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০০টির মতো পরিবার ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বান্দরবান পরিস্থিতি ॥ টানা বর্ষণের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে বান্দরবানের সঙ্গে গত ৮ দিন ধরে রাঙামাটি ও রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙ্গে পড়া ও পাহাড়ের মাটি সড়কের উপর ধসে পড়ায় এবং বান্দরবান-রুমা সড়কের ২২ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ধসে পড়লে গত ১৩ জুন সকাল থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণীর মানুষ চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, জেলার সঙ্গে রুমা ও রাঙ্গামাটির সড়ক ফের কবে চালু হয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে রুমা-বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দক সৃষ্টি হয়ে সড়কের উভয় পাস ভেঙ্গে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে প্রভাব পড়েছে জেলার পর্যটন শিল্পে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা রুমার বগালেক, রিঝুক ঝর্ণা ও কেউক্রাডং এ ভ্রমণে এবং বান্দরবান হয়ে রাঙ্গামাটি যেতে পারছে না পর্যটকরা। রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট উবামং মারমা জানান, গত ১৩ জুন জরুরী কাজ থাকায় সকাল ৭টায় বাইকে রুমায় যেতে চাইলে ওয়াই জাংশন এলাকার পর বড় আকারে পাহাড় ধসের স্থানে বাইকে আটকে যায়। পায়ে হেটে রুমা সদরে পৌঁছাতে লাগে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। রুমার খক্ষ্যংঝিরির বাসিন্দা আবু তালেব জানান, বান্দরবান-রুমা সড়কে দৌলিয়ান পাড়া ২২ কিমিঃ এলাকা পাহাড় ধসে সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা নয়। ওয়াই জাংশন থেকে রুমার সদরের মহিলা ক্লাব পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে গর্ত ও ভাঙন চিত্র বিস্তৃত। ২২ কিলোমিটার এলাকার এবং রাঙ্গামাটির সড়কে পাহাড় ধসে জমে যাওয়া মাটি সরিয়ে দিতে সেনা সদস্যরা টানা কাজ করলেও অন্যান্য স্থানে সংস্কারের কাজ করছে না। ফলে সড়কের দুরাবস্থা কবে নাগাদ ভাল হবে তা জানে না কেউ। এদিকে বান্দরবান-রুমা সড়কে গত এক সপ্তাহ ধরে মাটি সরানো কাজ চলছে। ১টি বড় বোলড্রোজার ও ২টি এস্কেভেটর দিয়ে শ্রমিকরা কাজ করছে। সহসা আরও দুটি এস্কেভেটর এসে যাবে। নরম মাটি হওয়ায় একদিকে ভাঙনের মাটি সরানো কাজ চলছে, অন্যদিকে পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে। কাজ করা অবস্থায় মাটি ধসে পড়ে একটি গাড়ি এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুমা সড়ক সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মোহাম্মদ হারিছ মিয়া বলেন, কবে নাগাদ এ ভাঙন অংশে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা যাবে তা বলতে পারছি না।
×