ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বীরের বেশে দেশে ফিরলেন পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২১ জুন ২০১৭

বীরের বেশে দেশে ফিরলেন পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ড থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতে বীরের বেশে দেশে ফিরেছেন পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা। লাহোর বিমানবন্দরের সামনে সরফরাজ আহমেদদের এক নজর দেখতে মধ্য রাত থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন হাজারও ভক্ত। ক্রিকেটাররা আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই সেখানে হাজির হন তারা। একই সময়ে আরেক বড় শহর করাচীর রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে উল্লাসে মেতে ওঠেন অগণিত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। সোমবার স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় চার ক্রিকেটার প্রথম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। আসরের অন্যতম চমক পেসার হাসান আলির সঙ্গে সেখানে ছিলেন ফাহিম আশরাফ, বাবর আজম আর আহমেদ শেহজাদ। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ফুলের তোড়া দিয়ে তাদের বরণ করে নেন। এরপর ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে ট্রফিসহ বিমানবন্দরে নামেন দলপতি সরফরাজ আহমেদ। সে এক অনন্দঘন মুহূর্ত। এ সময় অধিনায়কের সঙ্গে ছিলেন পেসার রুম্মন রইস। শত ভক্তের ভিড় সামলাতে হিমশিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারাও পাকিস্তান দলপতি এবং ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলেন। সরফরাজের বাড়ির বাইরেও উপস্থিত ছিলেন হাজারও সমর্থক। দলের অবশিষ্ট ক্রিকেটাররা এরপর ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দেশে পৌঁছান। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে অধিনায়ক সরফরাজ বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টুর্নামেন্টেই পাকিস্তানকে শিরোপা উপহার দিতে পেরে গর্বিত। এ অর্জন দেশবাসীর জন্য। তাদের ভালবাসা নিয়েই আজ আমরা এখানে। আশাকরি এরপর অন্যসব দেশ পাকিস্তানে খেলতে আসবে। কারণ সবাই দেশের মাটিতে খেলা দেখতে চায়।’ পাকিস্তান জুড়ে এত বেশি উচ্ছ্বাসের কারণটা অনুমেয়। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান টিমবাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে আছে। জিম্বাবুইয়ে-কেনিয়া ছাড়া এরপর আর কোন বড় দেশ সেখানে সফরে যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একঘরে হয়ে পড়া পাকিস্তান নিজেদের সিরিজগুলো আমিরাতে খেলে আসছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে হয়েই প্রথমবারে মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল মিসাবাহ উল হকের দল। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সরফরাজরা মোটেই ফেবারিট ছিল না। প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল ভারতের কাছে। সেখান থেকে দুর্দান্ত প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের মতো পরশক্তিদের কুপোকাত করে ফাইনালে প্রতিপক্ষ সেই ভারত। চিরশত্রুদের বিধ্বস্ত করে অষ্টম আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়। পাকিস্তানীদের বাড়তি উচ্ছ্বাসটা তাই স্বাভাবিক। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়, তাও আবার ভারতকে হারিয়ে। শিরোপা জয়ের উন্মাদনা তো আছেই। চিরশত্রুকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের কারণে সেই উন্মাদনা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। এবারের ফাইনালে ক্রিকেটভক্তরা দেখেছে অন্য এক পাকিস্তানকে। ভারতের মতো দলকে লজ্জায় ডুবিয়ে ব্যাটবলের দাপট দেখিয়েছেন সরফরাজবাহিনী। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এই ভারতের কাছে পাকিস্তান যেভাবে হেরেছিল তাতে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন যে ফাইনালেও তারা পাত্তা পাবে না। অথচ হয়েছে উল্টো। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে জ্বলে ওঠে পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের ডুবিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ঘরে তোলে তারণ্যনির্ভর পাকিস্তান। চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলে ভারত। গত আসরে ইংল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। এবারের ফাইনালে পাকিস্তানের করা ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের জবাবে ভারত ৩০.৩ ওভারে মাত্র ১৫৮ রানে অলআউট হয় বিরাট কোহলির ভারত। এটা কেবল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে দেয়াই নয়, সেইসঙ্গে দুর্দান্ত একটি বিশ্বরেকর্ডও গড়ে পাকিস্তান। আইসিসির টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ফাইনালে কোন দলই এত বড় ব্যবধানে জয় পায়নি। ফেবারিট না হয়েও পাকিস্তানের সাফল্যের রূপকার দুই তরুণ ফখর জামান ও হাসান আলি। ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর সরফরাজ আহমেদের এটি ছিল প্রথম টুর্নামেন্ট। শুরুতেই বাজিমাত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নীল সাফল্য। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরে প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় পাকিস্তান। সরফরাজ তাই যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। গর্বভরে বলছেন, ‘মানুষ কি বলল সেটা নয়, আমরাই চ্যাম্পিয়ন।’ উচ্ছ্বসিত সরফরাজ বলেন, ‘এই টুনার্মেন্টের সাফল্য আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। হারানোর কোন চিন্তা ছাড়াই এখানে খেলতে এসেছিলাম এবং আমরা এখন চ্যাম্পিয়ন। এটা আমার এবং দেশের জন্য বেশ গর্বের। আমাদের সমর্থন দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
×