ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রকল্পের টাকা হরিলুট

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২০ জুন ২০১৭

দিনাজপুরে পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা প্রকল্পের টাকা হরিলুট

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেয়া কর্মসূচী ও প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরে। পাটচাষীদের সমাবেশের টাকা ও কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত বীজ বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে পকেট ভারী করছেন খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে এমন অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাট অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘উচ্চ ফলনশীল’ (উফশী) পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং উন্নত পাট পচন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশের ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের নেয়া কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে দেশের ১২টি অঞ্চলে পাটচাষী সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চাষী সমাবেশে প্রত্যেক অঞ্চলে ২ ব্যাচে ২শ করে ৪শ জন চাষীর উপস্থিতিতে সমাবেশ করার কথা এবং প্রত্যেক চাষীকে সম্মানী হিসেবে ৩শ টাকাসহ যাবতীয় উপকরন দেয়ার কথা। তবে মানা হচ্ছে না সরকারী এই নির্দেশনা। দেশের ১২টি নির্ধারিত অঞ্চলের মধ্যে একটি দিনাজপুর। সোমবার দুপুরে দিনাজপুর অঞ্চলের পাট চাষীদের নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে। সেখানে ৪শ’ জন চাষী উপস্থিত থাকার কথা থাকলে, ছিল মাত্র ৭৪ জন। একইসাথে প্রত্যেক চাষীদেরকে ৩শ’ টাকা করে সম্মানী দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ২শ’ টাকা করে। শুধু তাই নয়, পাটচাষ বৃদ্ধি করতে সরকারীভাবে বিনামূল্যে প্রতি উপজেলায় এক হাজার চাষীকে ২ কেজি ৬৫০ গ্রাম করে পাটবীজ দেয়ার কথা থাকলেও সেই পাটবীজ পাচ্ছে না কৃষকরা। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই পাটবীজ বিক্রি করে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি অঞ্চলে বরাদ্দকৃত ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা প্রকল্প পরিচালক ড. শেখ মুহা: রেজাউল ইসলাম নিজে গ্রহণ করেন। বাকী টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকা গ্রহণ করছেন সংশ্লিষ্ট পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ও পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক। ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসা উত্তর মহেষপুর গ্রামের পাটচাষী রিয়াজুল ইসলাম জানান, তাকে এই সমাবেশে দেয়া হয়েছে ২শ’ টাকা। কিন্তু কোন বীজ দেয়া হয়নি। তিনি জানান, এর আগেও তাকে কোন বীজ দেয়া হয়নি। সমাবেশে আসা আরেক পাটচাষী অবিনাশ চন্দ্র রায় ও পরিতোষ জানান, তাদেরকে একমাত্র দেয়া হয়েছিল এক কেজি করে পাটবীজ। কিন্তু এরপর আর দেয়া হয়নি। দিনাজপুর পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক দীপ শংকর বসাক জানান, এখানে প্রায় একশ’ জন পাটচাষী অংশগ্রহণ করেছেন, প্রতিজনকে ২শ’ করে টাকা দেয়া হয়েছে। কি পরিমাণ বরাদ্দ ছিল এবং কতজন চাষী থাকার কথা তা তিনি জানেন না। দিনাজপুর পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকার জানান, এখানে বরাদ্দ ৩শ’ টাকা করে আর উপস্থিত থাকার কথা ২শ’ জন। তবে অনেক কৃষকই আসেনি। তিনি জানান, পাটের ব্যাপারে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। কোন কৃষক পাটবীজ না পেয়ে থাকলে সেটি দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বলে জানান তিনি। পাট অধিদপ্তর দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, পাটচাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের এত বড় একটি প্রকল্পে আমাদেরকে সংশ্লিষ্টতা রাখা হয়নি। যার কারনে বিষয়গুলো জানা নেই। যারা এই সমাবেশের সাথে জড়িত তারাই বিষয়টি ভাল বলতে পারবে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, পাটবীজ বিতরণে কোন অনিয়মের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×