ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্যারালাইসিস!

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২০ জুন ২০১৭

প্যারালাইসিস!

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত রোগের মধ্যে প্যারালাইসিস একটি। প্যারালাইসিস মূলত রোগ নয় বরং রোগের ফলে সৃষ্ট এমন একটি অবস্থা যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অথবা নির্দিষ্ট কোন অঙ্গ ধীরে ধীরে অথবা হঠাৎ করেই অবশ হয়ে যায় এবং সে অংশের মাংসপেশিও তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। প্যারালাইসিসের দরুন এবং এর সুচিকিৎসার অভাবে বা অপচিকিৎসার ফলে ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা আরও ভয়ানক আকার ধারণ করে এবং কালক্রমে তা পঙ্গুত্ব থেকে রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। প্যারালাইসিস রিসার্চ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে আমেরিকায় ৫.৪ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা যায় প্রতি ৫০ জন লোকের মধ্যে ১ জন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এখনও প্যারালাইসিসের উপর সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও এই রোগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রধানত স্থায়ুতন্ত্রের ক্ষয়-ক্ষতি বা আঘাত জনিত কারণেই প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞগণ প্যারালাইসিসের ধরন ও স্থান অনুযায়ী আলাদা-আলাদা নামকরণ করে থাকেন। সাধারণত যেসব কারণে রোগী প্যারালাইসিসের শিকার হন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, নার্ভ ইনজুরি, সেরিব্্রাল পালসি (সিপি), পারকিনসন ডিজিজ, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি ইত্যাদি। তবে জরিপ অনুযায়ী শুধু স্ট্রোক আর দুর্ঘটনার কারণেই প্যারালাইসিস হয় শতকরা ৩৩.৭ শতাংশ ও ২৭.৩ শতাংশ। প্যারালাইসিস বিষয়টি মূলত নিউরোমাসকুলার অর্থাৎ নার্ভ ও মাংসপেশির সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং নার্ভের ইনজুরি বা অস্বাভাবিকতার কারণে মাংসপেশির পরিবর্তন বা দুর্বলতা বা অক্ষমতাই প্যারালাসিস হওয়ার জন্য প্রাথমিক সূচক। প্যারালাইসিসের দরুন মাংসপেশির শক্তি কমে যাওয়া, হঠাত করেই মাংসপেশির টান বেড়ে যাওয়া বা শক্ত হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, থলথলে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। তবে সচারচার মাংসপেশিতে ব্যথার অনুভূতি কম থাকে এবং মাংসপেশির নড়াচড়া না হওয়ার কারণে জয়েন্টসমূহে ব্যথার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। প্যারালাইসিস রোগের সুচিকিতসার জন্য অধুনিক ও গবেষণালব্ধ চিকিতসাপদ্ধতি হলো ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপির পাশাপাশি রোগীকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর একজন নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। তবে রোগীর সুস্থতার জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ আবশ্যক। ফিজিওথেরাপির ক্ষেত্রে রোগীকে নিয়মিত ব্যায়াম, কিছু প্রশিক্ষণ, ব্যালেন্সিং, বিশেষ কিছু থিউরি/কনসেপ্ট/মেথডের আলোকে সঠিক টেকনিক এ্যাপ্লাই, ওয়াক্স, বোবাথ ও বিশেষ কিছু ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস ইত্যাদির আলোকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। ফিজিওথেরাপিস্টগণ হাইড্রথেরাপি ও ক্রায়োথেরাপিও প্রয়োজনীও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। প্যারালাইসিস রোগীর ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত, যেমন- বেড সোর (বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে চাপ ও ঘর্ষণের কারণে ঘা হয়ে যাওয়া), কন্ট্রাকচার (মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া/অঙ্গ-প্রতঙ্গ বাঁকা হয়ে যাওয়া) এবং প্রসাব-পায়খানাজনিত সমস্যা ইত্যাদি। অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক কারণ ও হতাশা নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা রোগীর সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ঞড়ফধু রঃ যঁৎঃং, ঃড়সড়ৎৎড়ি রঃ ড়িৎশং” ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার এই থিমটিকে মাথায় রেখে আস্থার সঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ প্যারালাইসিস রোগীর সুস্থতার প্রধান নিয়ামক। পঙ্গুত্বহীন সুস্থ বাংলাদেশই হোক আমাদের একমাত্র কাম্য। ডাঃ মোঃ গাউসুল আযম রঞ্জু (পিটি) লেখক : কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপিস্ট, ইব্রাহীম ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেম্বার : বাংলাদেশ স্ট্রোক এ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ)
×