ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফখর জামান ও হাসান আলির চমক

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২০ জুন ২০১৭

ফখর জামান ও হাসান আলির চমক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফেবারিট ভারত, স্বাগতিক ইংল্যান্ড, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া বা র‌্যাঙ্কিংসেরা দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নতুন চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। যে পাকিস্তানকে কেউ গোনায় ধরেনি, ওভালের গ্র্যান্ড ফাইনালে চিরশত্রু ভারতকে লজ্জায় ডুবিয়ে সেই তাদেরই হাতে ওয়ানডে ফরমেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব। সেটিও এমন দু-জনের পারফর্মের ওপর ভর করে টুর্নামেন্টের আগে অনেকেই যাদের চিনতেনই না। বিরাট কোহলি, ইয়ন মরগান, স্টিভেন স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ম্লান করে পাকিদের সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক ফখর জামান ও হাসান আলি নামের দুই নবীন। প্রতিভার অভাব পাকিস্তান ক্রিকেটে কোনকালেই ছিল না, এটি তার আরও একটি উদাহরণ। ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ফাইনালের নায়ক হাসান, আর আসর সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে গোল্ডেন বল ও সিরিজ সেরার দুই পুরস্কার হাসানের দখলে। গ্রুপ পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ১২৪ রানের লজ্জার হার দিয়ে আসর শুরু করে পাকিস্তান। আহমেদ শেহজাদ-ওয়াহাব রিয়াজদের মতো তারকার ভিড়ে সেই ম্যাচে এই দু-জনের কারোই একাদশে জায়গা হয়নি। শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রাখতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততেই হবে, এমন কঠিন ম্যাচেই চূড়ান্ত রিস্কটা নেয় পাকিস্তান ম্যানেজমেন্ট। ওয়াহাবকে ড্রপ দিয়ে পেসার হাসানকে ফেরানো হয়, আর ওপেনিংয়ে আজহার আলির সঙ্গী হন অভিষিক্ত ফখর। ৩১ রান করে প্রতিভার জানান দেয়া ফখর এরপর প্রতি ম্যাচে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৫০, সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৭, অতপর ফাইনালের এই সেঞ্চুরি। রাঘব-বোয়াল সব বোলারদের তুলোধুনো করে রানের বন্য বইয়ে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী আনকোড়া এক ব্যাটসম্যান। ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪ ম্যাচে ৬৩ গড়ে করেছেন ২৫২ রান। স্ট্রাইক রেট ১১৩। কে এই ফকর জামান? ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি২০ অভিষেকে সেভাবে নজর কাড়তে না পারলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বড় মঞ্চে কিন্তু ঠিকই সবার দৃষ্টি নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফখরের গড় চমকে দেয়ার মতো। ২০১২ সালে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়ার পরের বছরই প্রথম শ্রেণীতে অভিষেক। লিস্ট ‘এ’ ব্যাটিং গড় ৫০.০৪। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেরটাও মন্দ নয়, ৪২.০১। দিনের পর দিন ‘পুরস্কারহীন’ ঘরোয়া সার্কিটে সংগ্রাম করেছেন। পরিশ্রমের যে বিকল্প কিছু হয় নাÑ এই আপ্তবাক্য নতুন করে মনে করিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা। শেষ চার লিস্ট- এ ম্যাচে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ কায়েদে আজম ট্রফিতে মোট রান ৬৬৩। গড় ৫১। ফাইনালে ১৭০ রানের একটি ইনিংস খেলার পর তাকে আর উপেক্ষা করতে পারেননি নির্বাচকরা। গ্রেট ইউনুস খানের জন্মস্থান মারদান থেকে উঠে আসা ফখর জামানের মাঝে সবাই এখন বড় কিছুর ছায়া দেখছেন। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারিগর হাসান আলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪ রানে ৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাঁচন-মরণ ম্যাচে ৩ উইকেট ৪৩ রানের বিনিমেয়। সেমিতে ইংলিশদের উড়িয়ে দেয়ার দিনে তো আগের তিন ম্যাচকেই ছাড়িয়ে গেলেন। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচসেরা। ফাইনালে ফের ৩ উইকেট। আসরে পাঁচ ম্যাচের প্রতিটাতেই উইকেট পেয়েছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ চার ম্যাচে টানা ৩টি করে। আর সব মিলিয়ে মোট ১৩ উইকেট পাওয়ায় টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। বল হাতে আসরজুড়ে সর্বোচ্চ উইকেটের জন্য গোল্ডেন বলের পুরস্কার। ১৪.৬৯ গড়ে ৪.২৯ ইকোনমি রেটে এ পুরস্কার পান তিনি। মিডলঅর্ডারে বল হাতে কার্যকরী পারফর্মেন্স এবার পাকিস্তানকে শিরোপা জিততে সহায়তা করে। বুদ্ধিদীপ্ত অফ কাটার এবং ইন সুয়িং বলগুলো ব্যাটসম্যানদের বেশ বেকায়দায় ফেলে। ফাইনালে মাত্র সাড়ে ছয় ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৯ ওভারের খরচায় ৩টি উইকেট নেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী হাসানের অনুভূতি, ‘আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। পাকিস্তানের শিরোপা জয়ে অবদান রাখতে পারায় সেটি পূরণ হয়েছে। আমি জানতাম টুর্নামেন্টের সেরা বোলার হওয়ার সুযোগ আমার সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সফল হলে, ভারতের বিপক্ষে কেন নয়? আমি আমার নিজের শক্তির জায়গায় বল করেছি। বোলিং কোচ আজহার ভাইকে (সাবেক অলরাউন্ডার আজহার আলি) ধন্যবাদ।’ গত বছর ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে ওই সময়ই ইংল্যান্ড সফরে ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন। সেই ইংল্যান্ডে বড় মঞ্চে এবার ক্রিকেট বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিলেন।
×