ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা জিতে পাকিস্তানের দুই অর্জন

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২০ জুন ২০১৭

শিরোপা জিতে পাকিস্তানের দুই অর্জন

মিথুন আশরাফ, লন্ডন থেকে ॥ ১৯৯২ থেকে ২০১৭ সাল। ২৫ বছরেরও বেশি সময়। দুই যুগেরও বেশি। এ দীর্ঘ সময় পর আবার পাকিস্তান আইসিসির কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতল। ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ২৫ মার্চ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতে। এবার লন্ডনের ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতে নেয়। সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। তাও আবার ভারতকে হারিয়ে। যে ভারত দলটি পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দই অন্যরকম নিশ্চয়ই। ভারতকে ফাইনালে ১৮০ রানে হারানো নিশ্চিত হতেই যে ভো দৌড় দিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটাররা, তাতেই বোঝা যায়; কতটা আনন্দ মিলেছে। স্টেডিয়ামেত ‘পাকিস্তান, পাকিস্তান’ শব্দে কান ঝালা পালা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। যখন শিরোপা হাতে নিয়ে ছবি তুললেন দলের ক্রিকেটাররা, তখনও আনন্দের সীমা নেই। এরপরত শিরোপা হাতে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করলেন সব পাক ক্রিকেটার। উৎসবে মেতে উঠলেন। সেই উৎসব শুধু ওভালেই হয়েছে এমন নয়, লন্ডনজুড়েই হয়েছে। আর পাকিস্তানে যে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীরা, তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে। পাকিস্তানের আনন্দ আরও বেড়ে গেল। এক অর্জনে তাদের দুই প্রাপ্তি মিলেছে। ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছে পাকিস্তান। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে আইসিসির কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে লড়াই করেই শিরোপা জিতেছে। আবার ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলাও নিশ্চিত করে ফেলেছে। পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও আনন্দে আত্মহারা। বলেছেন, ‘গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হারের পর আমি ছেলেদের নিয়ে বসেছি। বলেছি, টুর্নামেন্ট এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ভাল খেলতে পারলে আমরা ফাইনালে যেতে পারব। চ্যাম্পিয়নও হতে পারব। সেটি ক্রিকেটারদের ওপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। ফাইনালের আগেও এ রকম কথাবার্তা বলেছি। এ টুর্নামেন্টটি আমাদের সামনে পথ চলায় আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে যাবে। আমরা খেলেছি, কিছু হারানোর নাই ভেবেই। কিন্তু আমরা এখন চ্যাম্পিয়ন। আমাদের জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত। আমার, আমাদের এবং দেশের মানুষের জন্যও এ মুহূর্ত গর্বের, আনন্দের। দেশের মানুষকে ধন্যবাদ। তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছে।’ শিরোপা জেতার পর কী কোন অধিনায়কের চোখে মুখে আনন্দ না থাকে। সরফরাজেরও তাই থাকে। তবে তার হাসি যেন একটু লুকিয়ে থাকে। মন খুলে হাসেন না। হাসলেও বোঝা যায় না। শোয়েব মালিক যেমন ফাইনাল ম্যাচ শেষে একটা সময় সরফরাজকে কাতুকুতুও দিলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। ক্রিকেটাররা যখন শিরোপা হাতে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করছেন, তখনও তিনি নির্লিপ্ত। ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে তার মুখে একটা হাসি ফুটল। হঠাৎ করে শোয়েব মালিকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হো হো করে হেসে উঠলেন। যে হাসিটি চিরকালের জন্য চাইলে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে পারেন সরফরাজ। ইতিহাসের সেরা জয়ও যে ধরা হয়ে যেতে পারে। এর আগে ১৯৯২ সালে যে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান, সেটা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সেরা জয় হয়ে আছে এখনও। শিরোপা যে বিশ্বকাপে জেতা হয়েছে। এরপর ২০০৯ সালে যে টি২০ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে জিতে যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান, সেটিও অবিস্মরণীয় জয়। কিন্তু এই দুই জয়কেই হয়ত পেছনে ফেলবে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের জয়টি। কারণ, ভারত কে যে হারিয়ে শিরোপা জেতা গেছে। ভারতের বিপক্ষে এর আগে কখনই আইসিসি কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেনি পাকিস্তান। খেলতে পারেনি। কিন্তু এবার প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ইতিহাস গড়ে। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করে। এ সাফল্য পাকিস্তানকে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তুলে দিল।
×