ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আসল মোড়কে ভেজাল পণ্য

নকল প্রসাধনে সয়লাব রাজশাহীর বাজার

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২০ জুন ২০১৭

নকল প্রসাধনে সয়লাব রাজশাহীর বাজার

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ঈদ সামনে রেখে প্রসাধন সামগ্রীর কেনাবেচার ধুম পড়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন মার্কেটে। দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ডের মোড়কে সাঁটা কসমেটিকস পণ্য সহজেই কিনছেন ক্রেতারা। তবে দামী দামী ব্র্যান্ডের মোড়ক আসল থাকলেও ভেতরে থাকছে ভেজাল ও স্থানীয়ভাবে তৈরি প্রসাধন। মোড়কের গায়ে লিখা দামেই এসব পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন কসমেটিকস দোকানের কর্মচারীরা এমন তথ্য দিয়েছেন। তারা জানায়, কোন প্রসাধন চেনার উপায় নেই। প্যাকেট, টিউব, রং সবই আসলের মতো। কিন্তু প্রসাধনী নকল। এমন সব প্রসাধনীতে এখন ঈদের বাজার ছয়লব। ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর বাজারগুলোতে নকল প্রসাধনে ছেয়ে গেছে। সেখান থেকে সেসব প্রসাধন ছড়িয়ে পড়ছে পাড়া-মহল্লার দোকান এবং গ্রাম ও মফঃস্বলের বাজারে। প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকর সব নকল প্রসাধনী। আসলের মতো দেখতে প্রসাধনীগুলোর দাম আদায় করা হচ্ছে প্যাকেটের গালে লেখা মূল্য অনুযায়ী। নকল প্রসাধনী কিনে ধনী, মধ্যবিত্ত, গরিব সব শ্রেণীর ক্রেতাই ঠকছেন। বিদেশী সব নামী-দামী কোম্পানির পণ্যগুলোর নকল বিক্রি হচ্ছে বাজারের দোকানগুলোতে। এসব নকল পণ্য কিনে ক্রেতা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, চর্ম ও ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেটের কয়েকটি দোকানের কর্মচারীরা জানান, রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় নকল প্রসাধন পণ্য তৈরি ও বিক্রির কারখানা থেকে এসব পণ্য আসে। সেগুলো দোকানে বসে প্যাকেটজাত করে তার আবার পাইকারি বিক্রি করা হয়। শুধু তাই না খুচরা বিক্রিও করা হয়ে থাকে। রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেটের মেসার্স খন্দকার ব্রাদার্স নামে একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায় যে, একটি কার্টনে টিউব ও অন্য কার্টনে প্যাকেট খোলা অবস্থায় রাখা আছে বিপুল পরিমাণ ‘ফেয়ার হোয়াইট ক্রিম’। কয়েকজন কর্মচারী সেগুলো নিয়ে প্যাকেট করছে। দোকানে বসে প্যাকেট করার বিষয়টি জানতে চাইলে এক কর্মচারী জানান, কোম্পানি থেকেই আলাদা হয়ে আসে। দোকানে বসেই এসব প্যাকেট করতে হয়। এরপরেই কর্মচারীরা বেশিকিছু না বলে সেখান থেকে সটকে পড়েন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যান্ডের আসল প্রসাধনীগুলো প্যাকেট থেকে আলাদা করা হয়। এরপরে নকল প্রসাধনী ভরে দেয়া হয় আসল প্যাকেটে। এরপরে সেগুলো বাজারজাত করা হয়। আর আসল প্রসাধনগুলো বিক্রি করে দেয়া হয় কোম্পানির কাছেই। তারা আবার প্যাকেটের পণ্য বের করে তাতে ভেজালা মিশিয়ে আবারও বাজারে ছাড়ে। এভাবেই চলছে সূক্ষè কারচুপি। প্রায় প্রকাশ্যেই দোকানে দোকানে এভাবে ভেজাল পণ্য বিক্রি হলে বিএসটিআই কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। জানা গেছে প্রসাধনী নানা সামগ্রীর মধ্যে ক্রিম জাতের নিভিয়া, ডাভ, লাক্স, মাস্ক, এ্যাকুয়া মেরিল লোশন, ফেডআউট ক্রিম, ওলে ব্র্যান্ডের ক্রিম, গার্নিয়ার ও জার্জিনস লোশনের নামী-দামী পণ্যগুলো নকল বিক্রি হচ্ছে। শ্যাম্পুর মধ্যে হেড অ্যান্ড শোলডার, ল’রিয়েল, রেভলন, প্যান্টিন ও বিদেশী সানসিল্ক নকল পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ঈদের মৌসুমকে সামনে রেখে রাজশাহী অঞ্চলে এখন সরব ভেজাল প্রসাধন কারখানা। হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের অনুমোদন নিয়ে এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে হাজারো প্রসাধন সামগ্রী। শুধু রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলাতেও মৌসুমি কারখানা গড়ে উঠেছে। আর রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে নামে বেনামে অসংখ্য প্রসাধন কারখানা। এসব কারখানা ও উৎপাদিত প্রসাধনের মান নিয়ে মাথা ব্যথা নেই মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার। রাজশাহীর বারিন্দ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডাঃ দায়েম উদ্দিন জানান, ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের সাধারণ লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীর কন্টাক্ট ডারমাটাইসিস হয়। এতে চামড়া লাল হয়ে যায়, যা পরবর্তী হসপড এ্যালার্জিক রি-এ্যাকশন তৈরি করে। ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এর পাশাপাশি ত্বকে দানা, হাঁপানি, মাথাব্যথা ও চোখ জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য রোগের উপদ্রব হতে পারে। যোগাযোগ করা হলে কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা মামুন বলেন, ভেজাল পণ্যের বিষয়টি আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। নকল প্রসাধনীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানানো হয়েছে। তবে, কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তিনি জানান, বিএসটিআই, জেলা প্রশাসন ও ক্যাব এ বিষয়ে মনিটরিং করে থাকে। তবে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে হবে।
×