ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ অভিযান চালাবে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

জঙ্গীদের প্রবেশ ও দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্তে রেড এলার্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ জুন ২০১৭

জঙ্গীদের প্রবেশ ও দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্তে রেড এলার্ট

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঈদে জঙ্গী অর্থায়ন, জঙ্গীদের দেশে প্রবেশ ও দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্তে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে টানা এক সপ্তাহ করে দেশের সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে যৌথ অভিযান চালাবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অভিযান চালাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অভিযানের বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে। সেই তথ্য মোতাবেক, জঙ্গী গ্রেফতারে বাংলাদেশ ও ভারত এমন কৌশল নিয়েছে। ঈদের সময় পলাতক জঙ্গীদের অনেকের নাড়ির টানে জন্মভূমিতে ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াত করে। এছাড়া ঈদের সময় দুই দেশে প্রচুর লোক যাতায়াত করার সুযোগে জঙ্গীরা দেশে প্রবেশ এবং দেশত্যাগ করার চেষ্টা করে থাকে। তাই জঙ্গী গ্রেফতারে ঈদের সময়টিকে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৭ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলা, জঙ্গী অর্থায়ন, জঙ্গীদের আত্মগোপন, জামিন, সীমান্তপথে অন্যদেশে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এপিজির সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই বিষয়ে আরও বেশ কয়েক দফায় বৈঠক হয়। ওইসব বৈঠকে সিআইডির তিন সদস্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল অংশ নেয়। বৈঠকে জঙ্গী তৎপরতা ও তাদের অর্থায়ন সংক্রান্ত নানা বিষয়াদি আলোচিত হয়। সেই আলোচনায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গী হামলা ও জঙ্গী সংগঠনগুলোর অর্থ সংগ্রহের কৌশলসহ নানা বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হয়। সেসব তথ্যে ঈদের সময় জঙ্গীরা অর্থ সংগ্রহ, দেশত্যাগ, দেশে প্রবেশসহ নানাভাবে তৎপর থাকে বলে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে জঙ্গী অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানী জঙ্গীরা জাল মুদ্রার ব্যবসা করে। বাংলাদেশের জেএমবি জাল মুদ্রা ব্যবসার প্রায় শতভাগই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জেএমবির জাল মুদ্রা তৈরি ও ব্যবসা করার একটি বিশেষ সেল রয়েছে। বিজিবির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঈদের সময় সীমান্তপথে অনেক লোক বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। ব্যবসা, চিকিৎসা, বেড়ানো ও ঈদ উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের পরিমাণ বেড়ে যায়। এমন সুযোগটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে জঙ্গী ও পেশাদার অপরাধীরা। এদের অনেকেই দেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করে। আবার অনেক জঙ্গী-সন্ত্রাসী দেশত্যাগ করার চেষ্টা করে থাকে। দেশে অনুপ্রবেশ ও দেশত্যাগ করার চেষ্টাকারী জঙ্গী সন্ত্রাসীরা ঈদের অনেক আগ থেকেই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আত্মগোপন করে। এরপর সুযোগ বুঝে ঈদের দুই দেশের মানুষের ব্যাপক যাতায়াতের সুযোগে তারা দেশে অনুপ্রবেশ ও দেশত্যাগের চেষ্টা করে থাকে। এ জন্যই এবার দুই দেশই ঈদের এক সপ্তাহ আগে এবং ঈদের এক সপ্তাহ পরে সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতেই দুই দেশ এমন কৌশল নিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে। সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, জেএমবির তৈরি জাল মুদ্রা আসল না নকল তা পরীক্ষাগার ছাড়া নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। জেএমবির এই সেলের সদস্যদের অধিকাংশই পাকিস্তান থেকে জাল মুদ্রা তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভারী সমরাস্ত্রের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের দলের অর্থ যোগাতে জাল মুদ্রা তৈরির কলাকৌশলও শেখানো হয়। আর জাল রুপীর অধিকাংশই পাকিস্তানে তৈরি হয়। পুরো চক্রটিকে ধরতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ), দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও মানিলন্ডারিং নিয়ে কাজ করা ভারতীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সাতটি পয়েন্ট সিল করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ওই সাতটি পয়েন্ট জাল মুদ্রার কারবারের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারত এবার ঈদে এই সাতটি পয়েন্টে যৌথ অভিযান চালাবে। পয়েন্ট সাতটির আশপাশের বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানগুলোতে যার যার দেশের তরফ থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিজিবির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
×