ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমছে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২০ জুন ২০১৭

ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে গড়ে ৫ শতাংশেরও কম সুদ মিলছে ব্যাংক আমানতে। এই সুদের ওপর আবার কর নিচ্ছে সরকার। আবগারি শুল্কের নামে এই করের সীমাও আরও বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকের নানা চার্জ। সঞ্চয়পত্রে টাকা খাটিয়ে এখনও ১১ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ব্যাপকহারে বাড়লেও কমেছে আমানত প্রবৃদ্ধি। দীর্ঘদিন পর ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১২ শতাংশের ঘরে। জানা গেছে, দেশের ৫৭টি ব্যাংকে বর্তমানে হিসাব রয়েছে ৮ কোটি ১৪ লাখ। এসব এ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর অর্ধেকের বেশি মেয়াদি আমানত। সঞ্চয়ী আমানত রয়েছে ২০ শতাংশের মতো। মোট আমানতের মধ্যে বেসরকারী খাতের অংশ ৮৩ শতাংশ। বাকিটা সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হিসাবে গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে মোট আমানত রয়েছে নয় লাখ ১৭ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল আট লাখ আট হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এতে করে গত এক বছরে আমানত বেড়েছে এক লাখ আট হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। একই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। মার্চে আমানত বৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এভাবে ধারাবাহিকভাবে আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারী মেঘনা ব্যাংকের এমডি নুরুল আমিন বলেন, গ্রাহক থেকে ব্যাংকগুলো এমনিতেই বার্ষিক চার্জ, অনলাইন ফি, এটিএম চার্জসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে চার্জ নিচ্ছে। এর বাইরে আমানত রেখে পাওয়া সুদের বিপরীতে সরকারকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। এখন আবার আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। অনেকে ব্যাংকে টাকা না রেখে নিজের কাছে বা অনত্র রাখার চেষ্টা করবেন। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক আমানতের সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাংকগুলোতে মেয়াদি আমানত রেখে এখন সুদ পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা রাখলে দেয়া হচ্ছে নামমাত্র সুদ। সব মিলিয়ে গত এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমেছে। অথচ বর্তমানে গড় মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এখন ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। মার্চে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। দুই বছর আগের একই সময়ে ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ছিল ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওই সময় মেয়াদী আমানতে টাকা রেখে সাড়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার অনেক কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংক আমানতের ওপর কর, আবগারি শুল্কসহ বিভিন্ন চার্জ রয়েছে। এ কারণে অনেকের মধ্যে সঞ্চয়পত্রসহ বিকল্প জায়গায় বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়তে পারে। ব্যাংক আমানতে সুদহারের নিম্নমুখিতা ঠেকাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ ঋণের সুদের তুলনায় দ্রুত কমে অনেক ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আমানতের সুদের অত্যাধিক হ্রাস সঞ্চয় প্রবণতাকে ক্ষুণœ করছে এবং সঞ্চয়ের বদলে অপচয়মূলক ভোগ ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের প্রবণতার ঝুঁকি বাড়ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে দায় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। এমন প্রেক্ষাপটে আমানতের ওপর সুদের নিম্নগামী প্রবণতা রোধের বিষয়ে সক্রিয় থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণের সুদ নিম্নগামী রাখতে ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমাতে বলা হয়। এছাড়া খেলাপী ঋণ আদায়সহ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেয়া হয়। তবে কার্যত এই পরামর্শ আমলেই নেয়নি কোন ব্যাংক। ফলে পুরো ব্যাংক খাতে আমানতের সুদ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
×