ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী শনাক্তে রাডার

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২০ জুন ২০১৭

জঙ্গী শনাক্তে রাডার

আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারির পরও প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী কার্যক্রম ও তৎপরতার খবরাখবর পাওয়া যায়। গত কয়েক মাসে রাজধানীর বাইরে রাজশাহী, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও অন্যত্র কিছু কিছু জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। কয়েকটি স্থানে সন্ধান পাওয়া গেছে আত্মঘাতী জঙ্গীরও। উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বিপুল পরিমাণের গোলা-বারুদ, অস্ত্রশস্ত্র, বোমা ও গ্রেনেড, সুইসাইডাল ভেস্ট, জিহাদী বই ইত্যাদি। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব শনাক্ত করা খুব সহজসাধ্য ছিল না। কেননা, জঙ্গীরা গোপনে গোপনে সংগঠিত হয়। নাম-পরিচয় গোপন করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু করে জঙ্গী তৎপরতা। সংগ্রহ করে অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুলিশের দাবি, পুরনো জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ, জামা’আতুল মুজাহিদীন বা জেএমবি নামের জঙ্গীরা নব্য জেএমবি নামে সংগঠিত হওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অবশ্য তারা কমবেশি পুলিশী ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের আওতায়ই রয়েছে। এবার তাদের যাতে সহজে শনাক্ত করা যায় সে জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে রাডার। রাডারের মাধ্যমে অদৃশ্য বস্তুসামগ্রী ও মানুষকে সহজে শনাক্ত করা যায়। এই মাধ্যমটি বিমান, জাহাজ, আবহাওয়া কেন্দ্র ও অন্যত্র ব্যবহৃত হয়। তবে এমন রাডারও আছে যাতে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব জঙ্গীদের গোপন আস্তানাসহ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের ডিপো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোটবড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আল শামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। এরই একটি অংশ রাডার ক্রয়। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি ইতিবাচক বৈকি। রাডার ক্রয়ও জঙ্গী দমনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা।
×