ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের মামলা করে বিপাকে গৃহবধূ

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১৯ জুন ২০১৭

ধর্ষণের মামলা করে বিপাকে গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছেন জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব পয়সা গ্রামের দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ। ধর্ষিতার প্রতিবন্ধী স্বামীকে অভিযুক্ত ধর্ষক তার বাড়িতে আটকে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ধর্ষিতা গৃহবধূর চরিত্র হননের অভিযোগ এনে উল্টো আদালতে প্রতিবন্ধী স্বামীকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আদালতে দায়ের করা ধর্ষিতা গৃহবধূর এজাহারে জানা গেছে, প্রতিবন্ধী স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে পূর্ব পয়সা গ্রামের কুমোদ দেওয়ানের পুত্র পয়সারহাট বাসষ্ট্যান্ডের হোটেল ব্যবসায়ী আয়নাল হক দেওয়ান দীর্ঘদিন থেকে ওই গৃহবধূকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। দিনমজুর ওই গৃহবধূ আয়নালের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৬ মে রাতে বাদির খুপরি বসত ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক আয়নাল তাকে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষিতার ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে আয়নাল পালিয়ে যায়। সূত্রে আরও জানা গেছে, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বিচারের আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘ প্রহসনের পর গত ১৪ মে ধর্ষিতা গৃহবধূ বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় আয়নালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওইদিন রাতেই অভিযুক্ত আয়নালকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসলেও রহস্যজনকভাবে স্থানীয় লোকজন ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিচারের আশ্বাসে অভিযুক্ত আয়নালকে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিনেও ধর্ষিতা কোন বিচার না পেয়ে গত ২২ মে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আয়নাল হক দেওয়ানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক শেখ আবু তাহের অভিযোগটি আমলে নিয়ে আগৈলঝাড়া শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ধর্ষিতা গৃহবধূ অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত আয়নাল ও তার সহযোগীরা স্থানীয় গ্রাম্যমোড়লদের ম্যানেজ করে তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে কৌশলে তার (আয়নাল) বাড়িতে আটক করে রাখে। পরে অতিসম্প্রতি বরিশাল আদালতে নাটকীয়ভাবে তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে দিয়ে স্ত্রীর (ধর্ষিতা) চরিত্র হনন করে স্থানীয় ইট ও বালু ব্যবসায়ী আবুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করানো হয়। আদালতের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য আগৈলঝাড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। থানার ওসি মনিররুল ইসলাম জানান, আদালতের নির্দেশে তিনি নিজেই প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করে আবুল মিয়ার বিরুদ্ধে নির্যাতিতা নারীর প্রতিবন্ধী স্বামীর দায়ের করা মামলার কোন সত্যতা পাননি। ওসি আরও জানান, নিদৃষ্ট তারিখের মধ্যেই তিনি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, আদালতে আয়নালের বিরুদ্ধে দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৮মে সকালে আয়নাল তার সহযোগীদের নিয়ে বাদির বাড়িতে গিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ধর্ষিতা গৃহবধূকে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা গৃহবধূ গত ৩১ মে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১১জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। ধর্ষিতা গৃহবধূ জানান, দীর্ঘদিন থেকে তিনি আবুল মিয়ার ইট, বালু, খোয়া টেনে দৈনিক শ্রম বিক্রি করে প্রতিবন্ধী অসুস্থ্য স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। তার ওপর আয়নালের কু-দৃষ্টি ও আবুলের প্রতিষ্ঠানে কাজ করা আয়নাল ভাল চোখে না দেখায় এ মিথ্যা মামলা দায়ের করানো হয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারের জন্য ওই গৃহবধূকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে ধর্ষক আয়নাল ও তার ভাড়াটিয়া লোকজনে। তিনি (ধর্ষিতা গৃহবধূ) তার প্রতিবন্ধী অসুস্থ্য স্বামীকে আয়নালের বাড়ি থেকে উদ্ধারসহ ধর্ষক আয়নালকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×