ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্ডার বেড়েছে ৩০ শতাংশ

অনলাইনে কেনাকাটা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৯ জুন ২০১৭

অনলাইনে কেনাকাটা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎসবকালীন কেনাকাটাকে সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। এখন আর যানজট ঠেলে এবং ভিড়-ধাক্কাধাক্কি পেরিয়ে শপিং করতে যাওয়ার ঝক্কি পোহাতে হয় না। চাইলে ঘরে বসেই এখন পছন্দের শপিং সেরে ফেলা যায়। এই আনন্দ এনে দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। বাড়িতে বসে আনন্দের ছলে কেনাকাটা করার এই নতুন সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে তরুণ প্রজন্মের ওপর।ঈদকে উপলক্ষ করে এই কেনাবেচার অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে ৩০০ কোটি টাকা! আর অন্যান্য সময়ের তুলনায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন ধারণা। জানা যায়, উৎসববিহীন সময়ে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো ই-কমার্সে লেনদেন হয়ে থাকে। উৎসবের সময়ে তা গিয়ে দাঁড়ায় তিনগুণ তথা ৩০ হাজারে। অন্যদিকে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় সংশ্লিষ্টদের আশা, ভবিষ্যতে লেনদেনের হার আরও বাড়বে। বছর পাঁচেক ধরে জমে ওঠা ই-কমার্সে জামা-কাপড় থেকে শুরু করে স্যুট, গৃহস্থালি পণ্য, শৌখিন পণ্য, জুতা-স্যান্ডেল, পালং শাক থেকে চিংড়ি মাছ, দেশীয় মোবাইল ফোন সেট থেকে আইফোন, গ্যাজেটস, ফাস্টফুড, কাঁচাবাজার সবই পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। তবে এর মধ্যে সক্রিয় আছে অর্ধশতাধিক। অন্যদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স উদ্যোক্তার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। ঈদের উপলক্ষে প্রায় সবারই বিক্রি বেড়েছে। দেশের মোট ই-কমার্সের প্রায় ৪০ ভাগ হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। রমজান মাস এলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি শামীম আহসান। তিনি বললেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা এই প্রবণতা দেখছি। এবারও অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ। ঢাকার বাইরে থেকেও বিক্রির অর্ডার আসছে, এই খাতের জন্য এটি ইতিবাচক দিক। ই-কমার্স তথা অনলাইনে ঈদকেন্দ্রিক বিক্রির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার মতো। এদিকে আজকের ডিল-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর বলেন, গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি বেড়ে চলেছে। কাশব্যাক অফার চলায় বিকাশে পেমেন্ট বেশি হচ্ছে। তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে এবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৩০ ভাগ বিক্রি বেড়েছে। সাধারণ সময়ের তুলনায় ঈদের সময়ে (দুই সপ্তাহ) প্রতিদিনের বিক্রি দ্বিগুণের মতো। একাধিক ই-কমার্স উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেনাকাটায় গ্রাহকদের পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বিকাশ। এরপরেই রকেটের অবস্থান। উৎসব উপলক্ষে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন বর্তমানে গড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাহেদুল ইসলাম জানান, এবার ঈদ উৎসব উপলক্ষে বিকাশ ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৮টিই হলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। সেসব জায়গার গ্রাহক সাড়াও ভালো। তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে আমরা ক্রেতাদের এ ধরনের সুযোগ দিয়ে থাকি। অনলাইনে স্মার্টফোনেরও বিক্রি বেড়েছে বলে জানা গেছে। পিকাবু ডটকম, কিকশাসহ অন্যান্য ই-কমার্স সাইটেও ঈদ উপলক্ষে দেদার বিক্রি হচ্ছে স্মার্টফোন ও মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ। হালের ক্রেজ শাওমি মোবাইল ফোনের এ দেশীয় পরিবেশক সোলার ইলেকট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের (এসইবিএল) প্রধান নির্বাহী দেওয়ান কানন বলেন, আমাদের ‘মি ফ্ল্যাগশিপ স্টোর’ ছাড়াও অনলাইনে ‘মি স্টোরে’ বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ। রোজার শুরুতে বাজার ধীরগতির থাকলেও শেষের দিকে এসে বাজার জমে ওঠে। ফলে অনলাইনও জমজমাট হয়ে যায়। স্মার্টফোন কেনার বিষয়েও মানুষ এখন শৌখিন। মোবাইলে বা ল্যাপটপে দেখে সেখান থেকেই অর্ডার করেন গ্রাহকরা। বাগডুম ডটকমের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মিরাজুল হক বলেন, বাগডুমের লক্ষ্য হলো, ক্রেতারা দেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, সাশ্রয়ী মূল্য ও কম সময়ে সেরা পণ্যটি তাদের কাছে পৌঁছানো। তিনি আরও বলেন, এবারের ঈদে গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি বিক্রির অর্ডার পাচ্ছি। এর মধ্যে ৪-৫ শতাংশ পেমেন্ট আসছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে। আর শতকরা ৮০ ভাগ হচ্ছে পণ্য বুঝে পেয়ে পরে দাম পরিশোধের মাধ্যমে (ক্যাশ অন ডেলিভারি)।
×