ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৯ জুন ২০১৭

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে লজ্জায় ডুবিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল পাকিস্তান। কেনিংটন ওভালের একতরফা ফাইনালে সরফরাজ আহমেদের দল জিতল ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে। তরুণ ফখর জামান (১১৪), অভিজ্ঞ আজহার আলী (৫৯) ও মোহাম্মদ হাফিজের (৫৭*) দুরন্ত ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। জবাবে মোহাম্মদ আমির (৩/১৬), হাসান আলীর (৩/১৯) দুর্ধর্ষ বোলিং সামলাতে ব্যর্থ গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানেই অলআউট! গ্রুপ পর্বে বড় হারের পর অনেকে শত্রুদেশের বিপক্ষে পাকিদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওভালে সেই তাদেরই উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের শিরোপা সরফরাজদের হাতেÑ এর চেয়ে ভাল জবাব আর হতে পারত না! পাকিস্তান বড় স্কোর গড়ার পরও প্রতিপক্ষ ভারত বলেই ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাল ক্রিকেট দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। তাতে অবশ্য গুড়ে বালি। ৩৩ রানের মধ্যে টপ-অর্ডারের তিন তারকা রোহিত শর্মা (০), বিরাট কোহলি (৫), আর শিখর ধাওয়ানকে (২১) সাজঘরে ফিরিয়ে শুরুর আগেই ম্যাচ শেষ করে দেন আমির! নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ভারতকে ক্ষণিকের আনন্দ দিয়েছেন হারদিক পা-িয়া। ৪ চার ও ৬ ছক্কায় ৪৩ বলে ৭৬ রান করে রানআউট হন তিনি। যুবরাজ সিং ২২ ও রবিন্দ্র জাদেজা ১৫ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। লেগস্পিনার শাদাব খান নিয়েছেন ২ উইকেট। এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া পাকিস্তানের ইনিংস ছিল ফখর জামানের সেঞ্চুরিতে ভাস্বর। অবশ্য শুরুটা ছিল সতর্ক। দুই ব্যাটসম্যানকে বেঁধে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষ পেসার ভুবনেশ্বর কুমার। তার ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে ডট ছিল ২৩টি। জাসপ্রিত বুমরাহর এলোমেলো বোলিংয়ের সঙ্গে ভাগ্যেরও খানিকটা সহায়তা পায় পাকিরা। ব্যক্তিগত ৩ রানে ক্যাচ দিয়েও ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যান জামান। বুমরাহর করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ফখর জামান। এর পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছিলেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, বুমরাহর করা বলটি লাইনের বেশ বাইরে ছিল। ফলে একটি জীবন পেয়ে যান ফখর। সেই সুযোগটা ভালমতোই কাজে লাগিয়েছেন তরুণ এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ওপেটিং পার্টনার আজহার আলীর সঙ্গে ২৩ ওভারে ভিত গড়ে দেয়া ১২৮ রানের চমৎকার জুটি। দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা ও রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে দুই জনে খেলেছেন খুব সহজে। আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের শতরানের প্রথম উদ্বোধনী জুটি। ১৯৯৬ সালে সাঈদ আনোয়ার, আমির সোহেলের ৮৪ ছিল আগের সেরা। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে ভাঙ্গে পাকিস্তানের স্মরণীয় এ জুটি। ৬টি চার আর একটি ছক্কায় ৭১ বলে ৫৯ রান করে ফেরেন আজহার। তার বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন ফখর জামান। দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে গড়েন ৭২ রানের দারুণ এক জুটি। ৬০ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করা ফখর জামান তিন অঙ্কে যান ৯২ বলে। ফেরার আগে শেষ পর্যন্ত ১০৬ বলে ১২টি চার আর তিনটি ছক্কায় উপহার দেন ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ওয়ানডেতে বাঁ-হাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের এটাই প্রথম শতক। ২৭ বছর বয়সী বাঁ-হাতির অভিষেক যে এই টুর্নামেন্টেই। ভুবনেশ্বরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কেদার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১২ রান করা শোয়েব মালিক। অকেশনাল কেদারের শিকার বাবর আযম। ৪ চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন তিনি। ইনিংসের তখনও ৭.৩ ওভার বাকি। অবাক করে দিয়ে অধিনায়ক সরফরাজের জায়গায় ব্যাটিংয়ে আসেন ইমাদ ওয়াসিম। প্রমোশন পাওয়া এই অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৭১ রানের দুর্দান্ত জুটি। ৩৪ বলে অর্ধশতক পাওয়া হাফিজ অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। ৩৭ বলে খেলা তার ঝড়ো ইনিংসটি গড়া ৪টি চার আর তিনটি ছক্কা দিয়ে। ৩৩৮/৪Ñ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে এটাই ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের দলীয় সর্বোচ্চ রান।
×