ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ দলের এমপিদের ক্ষোভের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন মে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৯ জুন ২০১৭

ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন মে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রেক্সিট নিয়ে টালবাহানা করলে ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন। কনজারভেটিভ পার্টির সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় এমপিরা টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বলেছেন, মে যদি তার মূল পরিকল্পনা থেকে ফিরে যান তবে তার নেতৃত্বের অবসান ঘটানোর জন্য চাপ জোরদার করা হবে। গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকা- পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে মে কঠিন একসময় পার করার মধ্যেই দলের মধ্যেই খবরটি এলো। মন্ত্রিসভার সদস্যসহ কনজারভেটিভ এমপিরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত থাকবেন না। তিনি কবে বিদায় নেবেন সেটি তারা এখন ঠিক করবেন। দলের ইইউবিরোধী এমপিরা হুমকি দিয়েছেন, মে যদি হার্ড ব্রেক্সিট বা ইউনিয়নের সঙ্গে সবধরনের সম্পর্ক অবসান ঘটানোর পথে না গিয়ে কাস্টম ইউনিয়ন বা একক বাজারের ভেতর থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন অথবা ব্রিটেনকে কোন না কোনভাবে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের মধ্যে রেখে দেন তবে মে’র বিরুদ্ধে ‘রাতারাতি’ অভ্যুত্থান ঘটে যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিকে কেউ কেউ ১৯৮৯ সালে মার্গারেট থ্যাচারের বিরুদ্ধে এ্যান্টোনি মেয়ার্সের নেতৃত্বাধীন এমপিদের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে তুলনা করছেন। একজন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে পেছন দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলছে, এই বার্তাটুকু তার কাছে পৌঁছালেও সেটি হবে তারজন্য একটি বড় ধরনের বিপদ সঙ্কেত।’ তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, মে সঙ্গত কারণেই পার্লামেন্টারি পার্টির সমর্থন হারিয়েছেন। বলতে গেলে দলের কোন এমপিই এখন আর তার পক্ষে নেই। দলের মধ্যে এখন তার বিকল্প খোঁজার সময় এসে গেছে। থ্যাচারের সময় যেটি হয়েছিল সেটি হলো মেয়ার্স জিততে পারেননি। থ্যাচার সব এমপির সমর্থন হারিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে থ্যাচারের বিরুদ্ধে দলে যখন ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল তখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে থ্যাচারের জনপ্রিয়তা বতর্মান প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত গ্রেনফিল টাওয়ারে অগ্নিকা-ের পরপরই লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন গিয়ে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন মে সেটি করেননি। এ নিয়ে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সিনিয়র মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিন বলেছেন, অগ্নিকা-ের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়নি। ঘটনা যাই হোক অগ্নিকা-ের বিষয়টি সরকার যেভাবে সামাল দিয়েছে তাতে মে’র ভাবমূর্তি যে ব্যাপকভাবে ক্ষুণœœ হয়েছে দলের অনেক সদস্যও তা মনে করেন। মে’র নতুন সরকারের বয়স এখনও পক্ষকাল পূর্ণ হয়নি। এরমধ্যেই মে শনিবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন রানী ২০১৮ সালে পার্লামেন্টে কোন বক্তৃতা দেবেন না। এর অর্থ পার্লামেন্ট অধিবেশন এক বছরের জায়গায় দু’বছর চলবে। ব্রেক্সিট সম্পর্কিত আইনকানুনগুলো এ সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য মে’র প্রতি চাপ বাড়ছে বলে আগে খবর বেরিয়েছিল। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক নেতাই বলেছেন, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দলটির কেউ কেউ ব্রেক্সিট কমিটিতে সবদলের অংশগ্রহণের কথাও বলেছেন। মে সম্ভবত এসব কথায় কান দিচ্ছেন না। তিনি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার থেকে এই আলোচনা শুরু করতে চান। মে ব্রেক্সিটের যে রূপরেখা তুলে ধরেছেন তাতে ইইউর একক বাজার, কাস্টমস ইউনিয়ন (এটি বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবসদস্য দেশের জন্য একক শুল্ক নির্ধারণ করে) এবং ইউরোপীয় বিচার আদালতের অধীনতা ত্যাগের কথা বলা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে সবসময় বলে আসছেন, ইইউর সঙ্গে কোন খারাপ চুক্তি করার চেয়ে বরং চুক্তি না করেই বের হয়ে আসবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত সপ্তাহে পোল্যান্ডে ব্রেক্সিট ইস্যুতে মে’কে অবস্থান বদলানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করা উচিত। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগও একই পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মে এখনও সরকার গঠনই নিশ্চিত করতে পারেননি। নতুন পার্লামেন্টে তার অনমনীয় অবস্থান টিকে কি না তা নিয়েও আছে সংশয়।
×