ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিবুর রহমান স্বপন

দুর্নীতি বন্ধে দুদকের সুপারিশ প্রাসঙ্গিক

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৯ জুন ২০১৭

দুর্নীতি বন্ধে দুদকের সুপারিশ প্রাসঙ্গিক

রাষ্ট্রপতি বরাবর দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৬ এর বার্ষিক প্রতিবেদনে দুর্নীতি বন্ধে ৬৫ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। সরকারী বিভিন্ন বিভাগের ১০টি খাত চিহ্নিত করে এই সুপারিশ করা হয়েছে। বিভাগসমূহ হচ্ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি। দুর্নীতি রোধে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের সহযোগিতাও চেয়েছে দুদক। সর্বাধিক ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি রোধে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ৯ দফা, স্বাস্থ্য খাতে ৭ দফা, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় ৫ দফা, এনবিআরে ৪ দফা, হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগে ৩ দফা, রাজউক গণপূর্ত ও সরকারী নির্মাণ কাজে ৬ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন খাতে ১০ দফা, আর্থিক খাতে ৬ দফা এবং বিবিধ খাতের দুর্নীত রোধে ৫ দফাসহ মোট ৬৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সচিবালয়ে বিজনেস নিষ্পত্তির পদ্ধতি হিসেবে সনাতনী ফাইল উপস্থাপন প্রক্রিয়া বিলোপ করার সুপরিশও করা হয়েছে উক্ত সুপারিশমালায়। কোন ফাইল অবশ্যই এক সপ্তহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। সরকারী সেবা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রতিটি সংস্থায় ‘হেল্প ডেক্স’ ও ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ কার্যক্রম চালু করতে বলা হয়েছে। সুপেরিয়র সিলেকশন বোর্ড গঠন করে কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের পরিবর্তে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিবকে সদস্য অন্তর্ভুক্তিরও সুপারিশ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ২০১৫ সালেও এমন একটি সুপারিশমালা জমা দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতি বরাবর। উক্ত সুপারিশসমূহের কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে পুরোপুরি তা বাস্তাবায়ন হয়নি। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি জানান, গত এক বছরে বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করেই তার ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও সুপরিশসমূহ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পাবে বা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। শিক্ষা খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা রোধের সুপারিশ করা হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে একটি আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদিতে ঘুষ ঠেকানো বা স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য সুপারিশও করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় হিসাবের স্বচ্ছতা আনয়ন, শিক্ষার মান তদারকী করার জন্য সমাজের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে ‘নাগরিক কমিটি’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজসমূহে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা, সনদ প্রদান ইত্যাদির জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেয়ার জন্য নিয়ম আছে তা পরিবর্তন করে শিক্ষকদেরই স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অন্যত্র বা অন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে বদলের (পরীক্ষার দায়িত্ব) কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা খাতে সরকারী বাজেট বরাদ্দ সর্বাধিক। তাই দুর্নীতিও বেশি। কথাটি আবারও প্রমাণিত হলো দুদকের সুপরিশের মধ্য দিয়ে। কত প্রকার যে দুর্নীতি হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে তার পরিসংখ্যান রাখা দুস্কর। শিক্ষক নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করা জরুরী। যোগ্যতম ব্যক্তির পরিবর্তে ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় চাকরি পাচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্নরা। এতে প্রকৃত মেধাবীদের কাছ থেকে দেশ বা জাতি কিছু নিতে পারছে না। তারা বাধ্য হচ্ছে অন্য পেশা বেছে নিতে অথবা দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে। সম্প্রতি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (সরকারি) শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির খবর সংবাদ মাধ্যমে পকাশিত হয়েছে। তদন্তে তার প্রমাণও মিলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনেরও তদন্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নানা অপকর্মের খবরও আমরা অহরহ সংবাদ মাধ্যমে পড়ছি। এ কারণেই দুদক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করেছে। সবচেয়ে লজ্জা এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় শিক্ষকরাও যখন দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন! একজন আদর্শ শিক্ষক যিনি জীবনভর নীতি ও আদর্শের সঙ্গে শিক্ষকতা করে অবসরে গেছেন (প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুজ্জামান) বললেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। যখন শুনি শিক্ষকরা দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করছে তখন লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়।’ এ প্রসঙ্গে একজন প্রবীণ স্কুল শিক্ষক (মোঃ খোরশেদ আলম) বললেন, কলেজের শিক্ষককে যখন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন তার ‘লোভ’ দেখে অবাক হতে হয়। শিক্ষক থাকাকালীন তিনি থাকেন পুত-পবিত্র। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করেন। শিক্ষা বোর্ডের একাধিক চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নাম উল্লেখ করে তিনি বললেন ‘এই সব ব্যক্তি যখন কলেজের শিক্ষক ছিলেন তখন তারা ছিলেন সততার দৃষ্টান্ত। চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়ে টাকার লোভ সংবরণ করতে পারেন না। তারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে অবসরে যান।’ একই অবস্থা ভাইস চ্যন্সেলরদের। তারা শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যখন ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পান তখন ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেন। ভাইস চ্যান্সেলরদের দুর্নীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক সিরিজ প্রতিবেদন করেছিল। তাতে অনেক ভিসি যে অনেক অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছিল। ভিসি হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি যদি দুর্নীত করেন, তা হলে আস্থার জায়গা আর কোথায় থাকে! জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলে, সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভিসির (উপাচার্য) অপকর্মের খবর এখন নিয়মিত সংবাদ মাধমে প্রকাশিত হয়। হ্যাঁ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও ছিলেন বা আছেন দু’একজন ভাইস চ্যান্সেলর। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ভাইস চ্যান্সেলরদের কুকীর্তির খবর পড়ে জনসাধারণ শঙ্কিত। ভবিষ্যতে এদেশে মেধাবীরা থাকবে কি-না? তা ছাড়া এতে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকদের সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আলাদা রেগুলেটরি কমিটি গঠনের সুপারিশটিও যুক্তিযুক্ত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ভর্তি বিভিন্ন সময়ে হওয়ায় একই শিক্ষার্থীকে সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউতে অংশ নিতে হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ডোনেশনের (ইন্টারভিউতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পরেও) মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। যা মোটেই কাম্য নয়। এতে প্রকৃত মেধাবীরা মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থের দাপটে ভর্তি হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা। যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। বেসরকারী মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান যাচাই করা জরুরী। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি রোধে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও রোগীদের কাছ থেকে নেয়া ফি নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমা চালু করে এই অর্থেই স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতেও দুর্নীতি অনেক। ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নেই। মাঝে-মধ্যেই দুর্নীতির খবরাখবর ছাপা হয়। সরকারী চিকিৎসক ও নার্সদের পদোন্নতি, বদলি, পোস্টিং এ অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর সংবাদপত্রে পড়তে হয় আমাদের। থানায় সাধারণ ডায়েরি অথবা মামলা হওয়ার পর তার তদন্ত ও রিপোর্ট দাখিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের সুপারিশে। উক্ত সুপারিশে পাসপোর্ট পেতে জনগণের ভোগান্তি লাঘবের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীত বন্ধে এরকম ৫টি সুপারিশ করা হয়েছে। ভূমি একটি জটিল বিষয়। কারণ এই বিষয়ে সর্বাধিক মামলা বাংলাদেশের আদালতসমূহে। অতএব ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি দমনে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। একটি ছাতার নিচে ভূমির সহকারী কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সাবরেজিস্ট্রার অফিস, সেটেলমেন্ট অফিসের কার্যক্রম সমন্বয় করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন দফতরকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশনে পদ্ধতির অটোমেশন করা ও দালালদের দৌরাত্ম্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ‘মুয়ীদ কমিটির রিপোর্ট’ পর্যালোচনা করারও কথা বলা হয়েছে। খাস জমি বণ্টনে যে অনিয়ম হচ্ছে তা বন্ধ করতে খাস জমির ডাটাবেজ তৈরি করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় যেসব জটিলতা আছে তা নিরসন করার জন্য যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন আইনেরও সংশোধন দরকার। সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা দরকার ভূমি বিষয়ক সকল বিষয়ের। যোগাযোগ, সরকারী নির্মাণ, মেরামত কাজে স্বচ্ছতা আনতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নির্মাণকারী সরকারী সংস্থার উন্নয়ন কাজের জন্য প্রণীত নিজস্ব প্রাক্কলন (এস্টিমেট) তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনঃযাচাই করতে হবে। এটা ছাড়া টেন্ডার আহ্বান করা যাবে না। বিষয়টি প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট ভুক্ত করা আবশ্যক। নির্মাণকারী সরকারী সংস্থার কাজ কোনভাবেই বাকিতে বা অগ্রিম ভিত্তিতে কোন ঠিকাদারকে দিয়ে করানো যাবে না। বকেয়া বিল পরিশোধের পদ্ধতিও বন্ধ করতে হবে। সরকারের আর্থিক খাতের দুর্নীতি রোধে ৬ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। আর্থিক বছর শুরুর পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের যৌক্তিকতা যাচাই করা অর্থ বিভাগের একার পক্ষে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এর জন্য তা নিষ্পত্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি ‘অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ উপদেষ্টা কাউন্সিল’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশমালায়। এটি সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘ভেলু ফর মানি’ নিশ্চিত করবে। দুদকের উক্ত সুপারিশে দেশের সকল এমএলএম কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশের বহু মানুষ এতে প্রতারিত হচ্ছে। এমএলএম কোম্পনির প্রতারণা বন্ধ করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা দরকার। জমি, ফ্ল্যাট ও স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন ফি অর্ধেক করা দরকার। ওষুধ শিল্পে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে মান নিয়ে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক এবং আয়ূর্বেদিক ওষুধে ভেজাল রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতি উৎসসমূহ চিহ্নিত করে দুদক যেমন ৪ দফা সুপারিশ করেছে। তেমনই যদি ওষুধ শিল্পের দুর্নীতি চিহ্নিত করা যায় তা হলে জনগণের মঙ্গল হবে। দুদক কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি বন্ধ করতে যেসব সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য দরকার দক্ষ এবং সৎ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ডিজটাল পদ্ধতিতে যদি সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা হলে দুর্নীতি হ্রাস পেতে বাধ্য। যা বিভিন্ন দেশে প্রমাণিত হয়েছে। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কসহ ইউরোপের বহু দেশ এখন চলে ডিজিটাল সিস্টেমে। যেমন, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়েই প্রায় সকল বিষয় সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সকল সরকারী সেবা ও বেসকারী সার্ভিস এই কার্ডের মাধ্যমেই নেয়া যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বা তা অনলাইনে দেখে একজন নাগরিকের সকল বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। একটি মাত্র পরিচয়পত্র দ্বারা ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা, জমিসহ সকল রেজিস্ট্রেশন কাজ, যানবাহনের টিকিট ক্রয়-বিক্রয়, সার্ভিসসমূহের (গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ইত্যাদি) বিল পরিশোধ করা এমনকি একজন নাগরিকের কাছে নগদ অর্থ না থাকলেও তাকে সাময়িক সময়ের জন্য অর্থ কর্জ নেয়ার সুযোগ প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব। সরকারী সকল প্রকার হিসাব ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হলে দুর্নীতি বহুলাংশে কমবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। প্রসঙ্গত বলা যায়, প্রতিটি জেলায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি’ আছে। এই কমিটি দুদক কর্তৃক স্বীকৃত। উক্ত কমিটির কর্মকা- কিছু রুটিন কর্মসূচীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে প্রতীয়মান হয়। জেলায় সকল প্রকার দুর্নীতিমূলক কাজ চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করতে পারে। তা না করে কিছু ব্যক্তি এই কমিটির সদস্য হয়ে নিজেদের উপস্থাপন করে (শো-পিস্) প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যা মোটেই কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে দুর্নীতিকে যতই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে ততই তা বাড়বে। দুদকের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করে দেশ দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। লেখক : সাংবাদিক
×