ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শুভাকাক্ষীদের ভালবাসায় উদযাপিত আতাউর রহমানের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ জুন ২০১৭

শুভাকাক্ষীদের ভালবাসায় উদযাপিত আতাউর রহমানের জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলার নাট্যমঞ্চে তার বিচরণ বহুবিধ। কখনও আপন অভিনয়শৈলীতে বিভোর করে রাখেন দর্শককে। আবার কখনও নাটকের নেপথ্যে অবলোকন করতে হয় তার নির্দেশনার মুন্সিয়ানা। এভাবেই মঞ্চের প্রতি অবিরাম ভালবাসায় দীর্ঘ পাঁচটি দশক পার করেছেন কীর্তিমান এই নাট্যজন। মঞ্চের প্রতি নিবেদিত থাকার স্বীকৃতিস্বরূপ নাট্যবন্ধুদের ভালবাসায় পেয়েছেন মঞ্চসারথি উপাধি। বার্ধক্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পের সঙ্গে সংসার। তাই তো সত্তর পেরিয়ে এখনও তিনি তরুণ। বয়সে প্রবীণ ও মননে তরুণ এই নাট্যব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আতাউর রহমান। রবিবার তিনি পূর্ণ করলেন শিল্পের পথে ধাবিত দীর্ঘ এক জীবনের ৭৬ বছর। এদিন ছিল তার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী ও ৭৭তম জন্মদিন। শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় উদ্্যাপিত হলো মঞ্চসারথি আতাউর রহমানের ৭৬তম জয়ন্তী। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি গান, কবিতা ও নাটকের অংশবিশেষ পরিবেশনার সঙ্গে তাকে নিবেদিত কথায় জানানো হলো ভালবাসা। সেই সঙ্গে ছিল ফুলের শুভেচ্ছা। শুভাকাক্সক্ষীদের প্রাণখোলা আলোচনা ও আতাউর রহমানের রঙ্গ-রসিকতায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয় জন্মদিন উদ্্যাপনের আয়োজনে । তাই গুরুগম্ভীর না হয়ে উচ্ছ্বাসময় হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানটি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় স্টুডিও থিয়েটার হলে জন্মদিন উদযাপনের এ আয়োজন করে মঞ্চসারথি আতাউর রহমান কর্ম-উদ্্যাপন পরিষদ। জন্মদিনের অনুভূতি প্রকাশ করে আতাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষের ভালবাসায় অতিক্রম করেছি জীবনের অনেক বছর। তাই জীবনের এই পর্যায়ে এসে দেশের সব মানুষকে সুখী হিসেবে দেখতে চাই। দেখতে চাই না মানুষের দারিদ্র্যতা। মানবতার আলোয় দেখতে চাই না ধর্ম কিংবা বর্ণের বিভাজন। যেখানে থাকবে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। দেখতে চাই মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। যেখানে প্রতিটি মানুষ পাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা। তাহলেই অর্জিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নমাখা শহীদের রক্ত ঋণের সোনার বাংলাদেশ। তাহলেই সার্থক হবে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম। রাজধানীর বিভিন্ন নাট্যদলের নবীন-প্রবীণ কর্মীরা জন্মদিনের ফুলেল ভালবাসায় সিক্ত করেন আতাউর রহমানকে। আর মঞ্চসারথির বর্ণময় জীবনের নানা বিষয়ে আলোকপাতসহ স্মৃতিচারণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী, ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, গাজী রাকায়েত, কামাল বায়েজীদ ও নাসিরুল হক। তাদের আলোচনায় উঠে আসে আতাউর রহমানের অভিনয়শৈলী ও নৈপুণ্যময় নির্দেশনার নানা বিষয়। নাটকে সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি ইদানীং আতাউর রহমানের সৃষ্টিশীলতায় যুক্ত হয়েছে কবিতা রচনা। তার কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। অনুষ্ঠানে আতাউর রহমানের পছন্দের কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন ফারহিন খান জয়িতা। আয়োজনটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তরুণ অভিনয়শিল্পীদের উপস্থাপনায় আতাউর রহমান নির্দেশিত হ্যামলেট ও বাংলার মাটি বাংলার জল নাটকের অংশবিশেষ পাঠে। যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে ‘কাব্যছন্দে মঞ্চসারথিকে জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যকর্মী আমিনুর রহমান মুকুল। আতাউর রহমান শতবর্ষ পূর্ণ করে দীর্ঘ জীবনে ধাবিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ঝুনা চৌধুরী বলেন, অভিনয় বা নির্দেশনার পাশাপাশি আতাউর রহমানের আরেকটি গুণ হলো তিনি চমৎকার করে কথা বলেন। দেশ-বিদেশের নাট্যজগত সম্পর্কে আমরা অনুজরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি। ৭৬ বছর বয়সেও তিনি নানাভাবে সদর্পে বিচরণ করছেন মঞ্চে। এসবের পাশাপাশি তিনি কবিতাও লিখে যাচ্ছেন। তার কবিতার প্রতিও রয়েছে আমার বিশেষ অনুরাগ। নাট্যশিল্পীসহ সংস্কৃতির নানা ভুবনের মানুষের করতালির মধ্য দিয়ে মঞ্চে আসেন আতাউর রহমান। নিজের জীবনের নানা ঘটনার উল্লেখের পাশাপাশি রসিকতায় মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। কথার একপর্যায়ে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রসিকতা করে হাসিয়ে তোলেন শুভাকাক্সক্ষীদের।
×