ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে ইফতার পার্টি রাজনীতি- দুশ্চিন্তায় ‘চার্মিং’ এমপিরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ জুন ২০১৭

রমজানে ইফতার পার্টি রাজনীতি- দুশ্চিন্তায় ‘চার্মিং’ এমপিরা

সমুদ্র হক ॥ মাঠ পর্যায়ে ঈদের আনন্দের শোরগোল আগামী নির্বাচনের মৃদু বাদ্যকে চাপা দিতে পারেনি। রমজান মাসের শুরুতেই ইফতারের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবার বেশ জেঁকে বসেছে। রেশ চলবে ঈদের পরও। তখন নির্বাচনী সুরের তাল জোরেশোরে বাজলেও অবাক হওয়ার নেই। রাজনৈতিক দলের ওপরের সারির নেতারা আভাসে ইঙ্গিতে এমন বারতাই দিচ্ছেন। সরকারী দলের অনেক এমপি (সংসদ সদস্য) বলছেন, এ বছর ডিসেম্বরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই প্রহর গোনা ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড়াতেও পারে। রাজনৈতিক মঞ্চের এমন সংলাপ সাধারণ মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্বাচনী দৃষ্টিও প্রসারিত করেছে। একই সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দলও নড়েচড়ে বসছে। যারা জোটের শরিক তারা কিছুটা ভাবনার মধ্যেও আছে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক যারা জিরো পয়েন্ট থেকে গোল দিতে পেরেছেন তারা ‘এমন ফেসিলিটি’ এবার পাবেন কি না এ নিয়ে উসখুস ও মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন। গত নির্বাচনে রাজনৈতিক শরিকের এমন প্রার্থীও ছিলেন যিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি তিনি এমপি হয়েছেন। শরিকের কোন প্রার্থী ‘ওয়ান ফাইন মর্নিং’ ঘুম থেকে উঠে দেখেন এমপি। গায়ে চিমটি কেটে দেখেছেন সত্যিই কি! এইসব চার্মিং এমপি বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। এবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে জনগণের ভোট পেতেই হবে। একাদশ সাধারণ নির্বাচন কোন ব্যক্তির মার্কায় হবে না। এবার হবে জনগণের মার্কায়। জনগণ যার পেছনে থাকবেন তিনি হবেন এমপি। মাঠ পর্যায়ের লোকজন বলাবলি করছে, যে এমপি ভাল কাজ করেছেন, যিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা এবারও নির্বাচিত হবেন। আর যারা এমপি হয়ে সোনার পাথর বাটি পেয়ে সংকীর্ণ চতুরতায় ফন্দিফিকির করে ক্ষমতা ছুঁয়ে থাকতে চেয়েছেন তারা বেশ বিপাকেই পড়বেন। স্বপ্নেরও মেয়াদ থাকে। সময় পেরুলেই স্বপ্ন মাটি। সাধারণ মানুষ এখনই এইসব ‘চার্মিংদের’ ধিক্কার দিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, মহাজোটের এসব এমপির অসঙ্গতিপূর্ণ কাজের ফিরিস্তি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। একই ভাবে দেশের প্রতি এলাকায় যারা ভাল কাজ করে নিয়মিত এলাকায় থেকে সাধারণের মন জয় করেছেন তাদের তালিকাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করার খেসারত দিতে হচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে গত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ক্ষোভ তুষের আগুনের মতো হয়ে আছে। এক সময় বগুড়াকে বলা হতো ‘বিএনপির ঘাঁটি’। গত নির্বাচনেই ভোটের এই ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙ্গে গেছে। এই ঘাঁটি যে ‘কথিত ঘাঁটি’ হয়ে গেছে তা বগুড়ার রাজনৈতিক চিত্রই বলে দেয়। ভুল রাস্তায় চলে তারা এখন খাদের কিনারে। ‘কুহুকিনী আশার পেছনে ছুটে লাভ কি’ এমনই অবস্থা তাদের। কয়েক কর্মীর কথা- বিকল এরোপ্লেনের চেয়ে ভাঙ্গা সাইকেল অনেক ভাল। বগুড়ায় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী এখন নবাববাড়ি রোডের অফিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কখনও এই ঘরের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ওপর মহলে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠায়। ওপর মহলও শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাৎক্ষণিক তা আবার প্রত্যাহারও করে। বিএনপির সম্প্রীতির রাজপথ সরু হয়ে বিভেদের সুরঙ্গে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস অবরোধ ও হরতালের নামে তারা যে ভাবে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, শরীর ঝলসে দিয়েছে, রেল লাইন উপড়ে ফেলেছে, জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে সেই কথা মনে হলে লোকজন এখনও শিউরে ওঠে। ওই সময়ই বগুড়ায় বিএনপির রাজনৈতিক মনোপলিতে দাড়ি পড়েছে। নিঃসঙ্গ হয়ে তারা এখন বন্ধু খুঁজছে। ভবিষ্যতই বলে দেবে তাদের অবস্থা কি হবে। এদিকে আওয়ামী লীগ যে খুবই ভাল অবস্থানে আছে তাও নয়। তবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তাদের ছোট ছোট ভুলগুলো ঢেকে দিচ্ছে। বগুড়ার প্রেক্ষাপটে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়- গত নির্বাচনে বগুড়ার সাত আসনের মধ্যে বগুড়া-১ ও বগুড়া-৫ আসন পায় আওয়ামী লীগ। চার জাতীয় পার্টি ও একটি জাসদ। জোটের শরিকের এমপিরা রাজনৈতিক স্কুলের ক্লাসে পেছনের বেঞ্চেই আছেন। এগোতে পারেননি। পরীক্ষার ফলও জিপিএ-এফ। বগুড়ায় আওয়ামী লীগকে ওপরের দিকে নিয়ে গেছেন একমাত্র এমপি মোঃ আব্দুল মান্নান। তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের এমপি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রথম দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গোটা এলাকায় সাধারণ মানুষ চাষাভুষা প্রত্যেকের সঙ্গে সমানভাবে মিশেছেন। প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় এমপি হওয়ার এলাকার তার কাজের গতি বেড়ে যায়। নিভৃত গ্রাম ও চর গ্রামেও পাকা সড়ক, প্রতি এলাকায় পল্লী বিদ্যুত সমিতি ও সোলার প্যানেলে বিদ্যুত, নারী উন্নয়ন, কৃষকদের উন্নয়ন ব্রিজ বাঁধ ও রিভেটমেন্ট নির্মাণসহ উন্নয়নের প্রতিটি ধাপেই তিনি এগিয়েছেন। এই আসনটি উন্নয়নের প্রতীক হয়ে আছে। তিনি সাধারণ মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করেন। এমপির মর্যাদা বাড়াতে প্রতিশ্রুতি কিভাবে রাখতে হয় আব্দুল মান্নান তার রোল মডেল হয়েছেন। এলাকাবাসী দাবি করে, তিনি কেন মন্ত্রী হলেন না। আগামী নির্বাচনে ভোটাররা পুনরায় তাকে নির্বাচিত করে মন্ত্রীর আশা রাখে। ঠিক উল্টো চিত্র বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে। অওয়ামী লীগ দলীয় আরেক এমপি হাবিবুর রহমানের ওপর এলাকার লোক এতটাই ত্যক্তবিরক্ত যে আগামী নির্বাচনে এই আসনে দল ভাল প্রার্থী না দিলে ভোটাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমানের নামে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। পত্রিকায় তার দুর্নীতির ফিরিস্তি ছাপা হয়েছে। লোকজন বলাবলি করেন বগুড়া-১ আসনে আব্দুল মান্নান দলকে অনেক উপরে নিয়ে গেছেন। বগুড়া-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান দলকে নিচে নামিয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন যে এগিয়ে আসছে তার অনেক দৃশ্য মাঠ পর্যায়ে ফুটে উঠেছে। নির্বাচনে অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে বিএনপিকে আসতেই হবে। এমন মন্তব্য ভোটারদের। এবারও যদি কোন কারণে বিএনপি নির্বাচন না করার টালবাহানা শুরু করে তার পরিণাম দলকে বিধ্বস্ত করে দেবে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে গত নির্বাচন না করার যে ক্ষোভের আগুন ছাই চাপা হয়ে আছে তা জ্বলে উঠতেও সময় লাগবে না। এখন তারা ‘ধমকে’ ঘর ছাড়তে ভয় পাচ্ছে। তা ছাড়া তারা যাবে কোথায়! নির্বাচন না হলে তাদের অবস্থা হবে রাজনৈতিক শরণার্থীর মতো। এইসব মন্তব্য মাঠ পর্যায় থেকেই এসেছে। একই সঙ্গে সুর ধ্বনিত হচ্ছে নির্বাচনের আর বোধ হয় খুব বেশি দেরি নেই। শীঘ্রই কড়া নাড়বে দুয়ারে।
×