ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্প- ৭ বছরে কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ জুন ২০১৭

খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্প- ৭ বছরে কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশ

আনোয়ার রোজেন ॥ খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে কেটে গেছে সাত বছর। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের জুন মাসে। এ হিসেবে প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র ১ বছর ২ মাস। অথচ মূল রেলপথ নির্মাণের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। রেললাইন নির্মাণস্থলের মাটি পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত এপ্রিলে। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রীয় ঋণের (এলওসি) আওতায় নেয়া এ প্রকল্পের ব্যয় এরই মধ্যে এক দফায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই, পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আর ব্যয় বেড়ে গেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মোটা দাগে এগুলো হলোÑ প্রকল্প চিহ্নিত করতে এক বছরের বেশি সময় ব্যয় হওয়া; প্রকল্প অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগে আরও এক বছর পার করা, জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা; ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব, নিয়োগকৃত ঠিকাদারের কাজ শুরুতে বিলম্ব, ভারত থেকে ৭৫-৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা এবং দরপত্র অনুমোদনে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের দীর্ঘ সময় নেয়া। এছাড়া রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা। প্রকল্প ব্যয়ের ৬২ শতাংশ ভারতের, ৩৮ শতাংশ বাংলাদেশের রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে এটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। পরে এর নির্মাণকাল বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে। আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার ৮০২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে ভারত সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা; যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬২ শতাংশ। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৩৮ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) থেকে জোগান দেয়ার কথা; যার পরিমাণ ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটি মূলত ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের জন্য প্রায় ৭৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। রেলসেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা এবং রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষের পথে। মূল রেলসেতু এবং মূল রেললাইন নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। ৭ বছরে ভারতের ব্যয় ৬ শতাংশ, বাংলাদেশের ব্যয় ২৪ শতাংশ প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি সাহায্য হিসেবে পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে নিজস্ব অর্থায়নেই এগিয়ে চলছে কাজ। বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান প্রকল্পসমূহের মাসিক অগ্রগতির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ করা হয়েছে ২৪ শতাংশ, বাকি মাত্র ৬ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে প্রকল্প সাহায্য থেকে। অর্থাৎ গত সাত বছরে গড়ে ১ শতাংশেরও কম পরিমাণ অর্থ প্রকল্প সাহায্য থেকে খরচ করা গেছে। প্রকল্পের বিপরীতে গত এপ্রিল পর্যন্ত সাহায্য ছাড় হয়েছে মাত্র ২৩৪ কোটি টাকা; একই সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯১২ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় চারগুণ বেশি। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রকল্পের বিপরীতে ৫২ কোটি টাকা সাহায্য ছাড় পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। তবে গত ১০ মাসে (এপ্রিল পর্যন্ত) পাওয়া গেছে মাত্র ৭৩ লাখ টাকা। ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগার কারণ জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এশিয়া উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম এলওসির আওতায় নেয়া ১৫ প্রকল্পের সাতটির কাজ এখনও চলমান। খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণসহ চলমান প্রকল্পগুলোর ছয়টিই আবার রেলওয়ের। এসব প্রকল্প চূড়ান্ত করতেই অনেক সময় পার হয়ে গেছে। এ খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা রয়েছে। প্রতিবছরই রেলওয়ের এডিপির বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়া হয়। অন্যদিকে, এলওসির প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের অনুমোদন লাগে, যা সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা, মামলায় অনেকটা সময় চলে গেছে। পরামর্শক নিয়োগেও ব্যাপক জটিলতা ছিল। আবার রেলের প্রকল্পে দরপত্র সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। জমির ক্ষতিপূরণ প্রদান, দলিল হস্তান্তর কাজ এখনও চলছে। আনুষঙ্গিক অনেক জটিলতা এখন কেটে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় মংলাই একমাত্র সমুদ্রবন্দর যার সঙ্গে রেললাইনের কোন সংযোগ নেই। খুলনা-মংলা রেললাইনটি চালু হলে বড় বড় কন্টেইনার পরিবহনসহ মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি এর মাধমে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের উন্নত ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।
×