ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ বাজার;###;বিত্তবানরা দল বেঁধে যাচ্ছেন ভারত থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুর

ঈদ শপিংয়ে এবার ভাগ্যবানরা ছুটছেন কলকাতা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ জুন ২০১৭

ঈদ শপিংয়ে এবার ভাগ্যবানরা ছুটছেন কলকাতা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি! আর তাইতো শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সুপার মার্কেট থেকে ফুটপাথ পর্যন্ত সর্বত্রই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদ সামনে রেখে প্রিয়জনের জন্য সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের এবং শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রতিবছর দুই ঈদ সামনে রেখে প্রস্তুতি থাকে পোশাক ব্যবসায়ীদের। পণ্য বেশি বিক্রি করে অপেক্ষায় থাকেন বেশি লাভের। কিন্তু এবার তাদের সে ‘আশায় গুড়েবালি’। ভিসাপ্রক্রিয়া ও যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায়, ঈদ কেনাকাটায় এবার বিত্তবানরা অধিক হারে কলকাতামুখী হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বিত্তবানদের অনেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন কলকাতায়। এমনকি উচ্চ-মধ্যবিত্তরাও ছুটছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে। কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার সুযোগে কাজে লাগিয়ে অনেকে ভারত যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে কলকাতার নিউমার্কেট ও গড়িয়াহাটে কেনাকাটা করছেন। এদিকে, ক্রেতারা বলছেন, সেখানে জিনিসের মান ভাল, দামও কম আর নির্বিঘেœ কেনাকাটা করা যায়। আর ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় পর্যটন ভিসা সহজ করায় বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশীদের যাতায়াতও বেড়েছে বেশ। প্রায় সবাই ফিরছেন ব্যাগভর্তি পণ্য নিয়ে। রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, রাফা প্লাজা, অর্কিড প্লাজা, প্লাজা এ আর, টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাজা, গাউছিয়া ও ধানম-ি হকার্সসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ দল বেঁধে মার্কেটে আসছেন কেনাকাটা করতে। যদিও বিক্রেতাদের দাবি, বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। তাদের অভিযোগ, বড় ক্রেতারা এখন আর দেশের মার্কেটে আসেন না। ঈদের কেনাকাটায় তারা বিদেশের মার্কেটকেই বেশি পছন্দ করছেন। দল বেঁধে চলে যাচ্ছেন ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে। বিশেষ করে যোগাযোগ এবং ভিসাপদ্ধতি সহজ হওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করতে কলকাতায় ছুটে যাচ্ছেন বলে জানান তারা। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির নিউ অপরাজিতা শাড়ি কুটিরের ব্যবসায়ী রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রোজার শুরু থেকেই অল্পসংখ্যক ক্রেতা পোশাক দেখলেও বেচাবিক্রি কম ছিল। তবে পনেরো রোজা থেকে বেচাকেনা বেশ ভাল। যদিও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বিক্রি কম হবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ দেশের স্বচ্ছল ক্রেতারা দেশের মার্কেট রেখে বিদেশের মার্কেটের দিকে ঝুঁকছেন। কেনাবেচার জন্য তারা ছুটে যাচ্ছেন ভারত কিংবা থাইল্যান্ডে।’ একই কথা বললেন আজমির শাড়ি মহলের ব্যবসায়ী। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম হচ্ছে। অনেক রেগুলার কাস্টমারদেরও দেখা মিলছে না। এমনকি ফোন করে জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর দিচ্ছেন, কলকাতা থেকে না কি শপিং করেছেন। বেশিরভাগ ক্রেতারা যদি কলকাতামুখী হন তাহলে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল।’ গত দু-তিন বছর থেকে রাজধানীসহ দেশের মানুষ ঈদের কেনাকাটার জন্য যেভাবে কলকাতামুখী হয়েছে তাতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ আগে কলকাতা থেকে ঈদের কেনাকাটা করে ফিরেছেন মিরপুর-২ এর বাসিন্দা নুসরাত মৌলী ও তার বোন নওরীন আহমেদ। দেশে না কিনে কেন ভারতে ঈদ শপিং করছেন জানতে চাইলে তারা বললেন, ‘গত বছরও ঈদের কেনাকাটা করতে কলকাতার গড়িয়ারহাটে গিয়েছিলাম আর এবারও। বর্তমানে ঢাকা টু কলকাতা যাওয়ার যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল। দুইদিন সময় নিয়ে কলকাতা গেলেই ব্যাগভর্তি করে শপিং করা যায়। আর জিনিসপত্রের দামও তুলনামূলক নাগালের মধ্যে। আর যাতায়াত খরচও কম। তাছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটেই জিনিসপত্রের গলাকাটা দাম। যে থ্রি-পিছ এখানে ৩ হাজার টাকা, কলকাতায় সেটি ১ হাজারের মধ্যেই পাওয়া যায়। সঙ্গে বিভিন্ন ভ্যানিটি ব্যাগের দামও এখানকার থেকে কম মূল্যের। এছাড়া, এ্যাপেক্স বা বাটার যে জুতা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, কলকাতায় একই মানের জুতা দেড় হাজার রুপী। এ কারণেই কলকাতায় মার্কেট করছি। আর কলকাতা নিউমার্কেটের পাশে বেশকিছু ভাল আবাসিক হোটেলও আছে। আর এগুলোর ভাড়া ৫০০-৭০০ রুপীর মধ্যে। তাই সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে দু-একদিন কাটিয়ে আসা যায়।’ কলকাতা থেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে গত দুদিন আগে ঢাকা ফিরেছেন ধানম-ির বাসিন্দা রোকসানা হাবিব। স্বামী-সন্তান নিয়ে তিন দিনের সফরে ঈদ কেনাকাটা করে ফিরলেন তিনি। দেশের মার্কেট রেখে বিদেশে কেনাকাটার সুবিধা উল্লেখ করে তিনি জনকণ্ঠকে বললেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের যোগাযোগ বেড়েছে কলকাতার সঙ্গে। প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে ও বিমানে অনেক দেশী মানুষ কলকাতা যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রয়োজনে। আমি গত কয়েক দিন আগে ঘুরে এলাম কলকাতা থেকে। সেখানে দেশী মানুষের পদচারণা অনেক। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে এখন অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতায়। উদ্দেশ্য ঈদ কেনাকাটা। গত দু’বছর ধরে আমার পরিবারের জন্য কলকাতা থেকেই শপিং করি। রোজার ঈদের আগে যাই এবং দুই ঈদের জন্য একবারে শপিং করি। বিভিন্ন ইন্ডিয়ান ড্রেস যেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ১০-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়, সেগুলো ওখানে ৪-৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ব্যাগ, জুতা, কসমেটিক্স তো আছেই, সবই সাধ্যের মধ্যে। একই জিনিস যেখানে অর্ধেকেরও কমে পাচ্ছি আমরা তো সেখানেই যাব! দেশের ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হতে হবে কারণ ক্রেতারা এখন আর বোকা না।’ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভারতীয় পোশাকের প্রাধান্য বেশি। রয়েছে পাকিস্তানি পোশাকের অবস্থানও। আবার দেশী পোশাককে বিদেশী বলে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে দোকানিদের বিরুদ্ধে। দেশী কিংবা বিদেশী, বিভিন্ন সিরিয়াল ও সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের নামে আসা পোশাকের বিক্রি বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। মার্কেটভেদে প্রতিটি স্টোন থ্রি-পিছ ৭ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা, স্টোন কেপ থ্রি-পিছ সাড়ে ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা, স্টোন ওয়ান পিস সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানি পার্ল থ্রি-পিছ ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা, কেপ সাড়ে ১১ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মান ও রঙের গাউন পাওয়া যাচ্ছে ৭ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। সিঙ্গেল পিস কুর্তি ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কটন কুর্তি, সামু সিল্ক, স্টিচ ও আনস্টিচ থ্রি-পিছের বাহারি কালেকশনও রয়েছে। বড়দের পাঞ্জাবি সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা, ছোটদের পাঞ্জাবি আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে।
×