ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলার সাহেব, দয়া করে ফেন্সিডিলের বোতলটা আমাকে দিয়ে দেন...

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১৮ জুন ২০১৭

জেলার সাহেব, দয়া করে ফেন্সিডিলের বোতলটা আমাকে দিয়ে দেন...

মশিউর রহমান খান ॥ জেলার সাহেব দয়া করে ফেনসিডিলের বোতলটা আমাকে দিয়ে দেন। আর না হয় আমি মারা যাব। ফেনসিডিল না খেলে আমার দিনে বা রাতে একবারের জন্যও ঘুম হয় না। ঠিক এমনই করে বারবার ফেনসিডিলের বোতলটা পেতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামের কাছে আবেদন করছিলেন বাংলাদেশের ইয়াবা সম্রাট খ্যাত কারাবন্দী আমিন হুদা। শুধু তাই নয়, ফেনসিডিলের নিয়মিত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জেলারকে ঘুষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া আসার খরচ দিতেও অফার করেন আমিন হুদা। বিনিময়ে তার নেশার চাহিদা পূরণ করার দাবি করেন কিন্তু কোন অফারেই কাজ হয়নি জনকণ্ঠের কাছে এমনটাই দাবি করেন জেলার মাহবুবুল ইসলাম। বিভিন্ন মামলায় মোট ৭৯ বছর সাজাপ্রাপ্ত এ বন্দী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের অভ্যন্তরে স্থাপিত হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডে অসুস্থ বন্দী হিসেবে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অসুস্থ দাবি করলেও কারাভ্যন্তরে বসে নেই দেশের অন্যতম এ ইয়াবা ব্যবসায়ী। ভেতরে বসেই নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে নিজের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কৌশলে মাদক সরবরাহ করতে সচেষ্ট রয়েছেন। আমিন হুদা একজন নিয়মিত ফেনসিডিল খোর বলে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, ১৪ জুন বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির সুপারিশে আমিন হুদার কাছে খাবার পাঠানো হয়। কারা ফটকে এসব খাবার পরীক্ষার জন্য নেয়া হলে দেখা যায়, খাবারের সঙ্গে কোমল পানীয় হিসেবে একটি কোকা কোলার বোতলও দেয়া হয়েছে। সোর্সের দেয়া পূর্ব তথ্য অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষীরা এই বোতলটি খোলা বলে সন্দেহ করেন। এরপর তারা পানীয় পরীক্ষা করে দেখেন বোতলটিতে কোকাকোলার পানীয়ের পরিবর্তে ফেনসিডিল ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। কারা সূত্র জানায়, জেলার মাহবুবুল ইসলামের কঠোর নির্দেশে, উক্ত খাবারসহ ফেনসিডিল বোতলটি যেন কোনক্রমেই কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে একই সঙ্গে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যার পরিচয়ে এই খাবার পাঠানোর কথা বলা হয়েছে উক্ত প্রভাবশালী লোক আমিন হুদার কাছে খাবার পাঠানোর কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। ফেনসিডিলসহ সমস্ত খাবার আটকে দেয়ায় আসামি আমীন হুদা জেলারের সঙ্গে সাক্ষাত করে ফেনসিডিল বোতলটি দেয়ার জন্য আকুতি করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমিন হুদা বলেন, জেলার সাহেব আপনার বোন তো অস্ট্রেলিয়া থাকেন ওখান থেকে ঘুরে আসেন। খরচ যা লাগে আমি দেব, বিনিময়ে আপনি আমার দিকে একটু দৃষ্টি দিয়েন। একপর্যায়ে জেলার উক্ত বন্দীকে তার কোন আবদার না রেখেই তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে আমিন প্রতিনিয়তই ফেনসিডিল সেবন না করতে পারার কারণে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, আমিন হুদার হার্টে রিং পরানো রয়েছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তবে নিয়মিত ফেনসিডিল পাণ করতে না পারলেই ঘটে বিপত্তি। এর আগে বিভিন্ন রোগে একটানা ১৮ মাস কারাগারের বাইরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই ইয়াবা সম্রাট। সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কারাগারে পাঠায়। উল্লেখ্য, আমিন হুদাকে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর গুলশানের একটি বাড়ি থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, আসামি আমিন হুদার জন্য অতি প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে কারাগারে খাবার পাঠানো হয়। উক্ত খাবার পরীক্ষাকালে দেখা যায়, কোমল পানীয় হিসেবে দেয়া কোকাকোলার মুখ খোলা একটি বোতলে ফেনসিডিল দেয়া হয়েছে। যা দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এরপর উক্ত আসামিকে আমরা ফেনসিডিল সরবরাহ না করায় আমার কাছে এসে আমিন হুদা নিজে নানা কৌশলে ফেনসিডিলের বোতলটা দিতে অনুরোধ করেন। তিনি আমাকে বলেন যে, ‘আমাকে ফেনসিডিল খেতে না দিলে আমি বাঁচব না। আমার দিনে বা রাতে একবারের জন্যও ঘুম হয় না।’ তার কাছে ফেনসিডিলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য তিনি আমাকে নিয়মিত মোটা অংকের টাকা প্রদানসহ প্রমোদ ভ্রমণে অস্ট্রেলিয়া বেড়ানোর সকল খরচ দেয়ার প্রলোভন দেখান। আমি তাকে কোন কিছুতেই কাজ হবে না বলায় তিনি নাখোশ হয়ে চলে যান। ৭৯ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী আসামি আমিন হুদা বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারে পাঠায়। বর্তমানে তিনি কারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×