ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবে বাড়ে টাকার প্রবাহ

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৮ জুন ২০১৭

উৎসবে বাড়ে টাকার প্রবাহ

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তাই ঈদকে ঘিরে অর্থনীতিতে বাড়ে টাকার প্রবাহ। অসম্প্রদায়িক চেতনায় পালিত হয় এই উৎসব। তাই ফুটপাথ থেকে বৃহৎকার শপিংমল সব জায়গায় ক্রেতাদের ভিড়। বাড়তি টাকার প্রবাহে বাড়ে মূল্যস্ফীতি। তা সত্ত্বেও ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই প্রিয়জনদের জন্য উপহার কিনতে যাচ্ছে মার্কেটে। ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গোটা অর্থনীতি। প্রতিবছরই বড় হচ্ছে ঈদের বাজার। রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে এফবিসিসি আইয়ের সমীক্ষা অনুসারে রোজায় অতিরিক্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এই টাকার বড় অংশ ব্যয় হয় খাবার-দাবার, পোশাক, ভ্রমণ, ভোগ বিলাস ও প্রসাধনীতে। ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকা- কয়েক বছর আগেও পোশাক, খাবার ও জুতার মধ্যে সীমবদ্ধ ছিল। এখন মানুষ এই উৎসব উপলক্ষে কিনছে ঘরের আসবাব পত্র, ফার্নিচার সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ইত্যাদি। অনেকে ঈদকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে ভ্রমণেও যাচ্ছে। প্রত্যেকে সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করে এই উৎসবে। দেশের সাড়ে ১২ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রায় ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস যোগ হবে এই ঈদ অর্থনীতিতে। প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে বাড়তি ব্যয় মেটাতে পাঠায় প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে বাড়ে রেমিটেন্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে ২০১৪ সালের রোজা শুরুর আগে মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১২১ কোটি ডলার। রোজা শুরুর পর জুন মাসে তা ১২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। আবার জুলাইয়ে আরও বেড়ে ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। আগস্টে রেমিটেন্স কমে ১১৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০১৫ সালে ১৯ জুন থেকে রোজা শুরু হলেও এর আগের মাসে অর্থাৎ মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৩১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ওই বছর ১২ জুন পর্যন্ত দেশে রেমিটেন্স এসেছে ৬০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিস্তৃতির ফলে এই সময় প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এ উপলক্ষে অর্থনীতিতে যোগ হয় মানুষের সঞ্চয়ের টাকা। রোজার সময় বাড়তি ব্যয় মেটাতে সারা বছর মানুষ যে সঞ্চয় করে তার একটি অংশ খরচ করে। ফলে রোজা শেষে ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। বেড়ে যায় কলমানির সুদের হার। ঈদে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় তৈরি পোশাক। সারাদেশের ফ্যাশন হাউসগুলোয় আনুমানিক ছয় হাজার কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হয়। সারা বছর তাদের যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকই হয় রোজার ঈদে। রাজধানীর ইসলামপুরে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়। ঈদের আগে কখনো কখনও তা শতকোটি টাকায়ও হয়। রাজধানী ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের অনুমান, এখানে বছরে ১৮-২০ হাজার কোটি টাকার পোশাকের বেচাকেনা হয়। এর ৩০-৪০ শতাংশ বিক্রি হয় রোজার মাসে। রোজার ঈদে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরেও ঈদের পোশাকের একটা বিরাট বাজার দখল করে আছে ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা নানা পোশাক। ওই বাজারটা স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি হবে। এই পোশাকের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। রমজান ও ঈদের মতো উৎসব এলেই বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয়ে উঠে গ্রামের অর্থনীতি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকা যাচ্ছে। এতে বাড়ছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এই উৎসবে। ঈদ অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ঈদের সময় সারাদেশেই অর্থের প্রবাহ বাড়ে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাত হলেও সব মিলিয়ে তা বিশাল পরিমাণের অর্থনীতিতে রূপ নেয়। ঈদ ও রোজাকে কেন্দ্র করে শহর বা গ্রামের উভয় এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় ব্যয় করার জন্য দেশের সবাই কিছু না কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখেন। এতে অর্থের যোগান বাড়ে যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
×