ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদ হাসান

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জীবন...

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৮ জুন ২০১৭

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জীবন...

বিশ্ববিদ্যালয় মানেই ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, প্রাকটিক্যাল, এ্যাসাইমেন্ট আর পরীক্ষার চাপ। এক প্রকার যান্ত্রিক জীবন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মানে অন্য আরেক অর্থও আছে। সে অর্থ বন্ধুত্বের। সে অর্থ হাসি-আড্ডা-গানের। সে অর্থ জীবনের সবচেয়ে সেরা সময়ের। ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিক্ষাঙ্গন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে সবুজের অপরূপ শোভায় শোভিত এ ক্যাম্পাস। প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরেই তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পাসটিতে। নদীর তীর ঘেঁষে সাদা কাশফুল আর খোলা আকাশের নিচে চাঁদের হাটই যেন বসে প্রতি পূর্ণিমায়। দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ, সারি সারি গাছ-গাছালি আর রাতের অন্ধকারে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা জোনাকিরা খুব সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলে যে কাউকে। আমাদের ক্যাম্পাস পরিবারের সদস্য প্রায় ৬ হাজার। সবার সঙ্গে সখ্য, বন্ধুত্ব এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিবছর নবীনদের পদচারণায় একদিকে যেমন মুখর হয় ক্যাম্পাস, আর অন্যদিকে বড় ভাইয়া-আপুদের ক্যাম্পাস জীবন শেষ করে চলে যাওয়া। এক রকম হাসি-কান্নার খেলাই চলে ক্যাম্পাসে। তার পরও সারা বছর মেতে থাকে ক্যাম্পাস, তাদেরই মতো সত্তাদের ঘিরে। ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে বোরিং ব্যাপারটা হলো ক্লাস করা। সঙ্গে আবার বিভিন্ন এ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আরও কত কিছু! কিন্তু এত কিছুর পরও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কোন কমতি থাকে না। ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় পেলেই বসে পড়ি রেললাইনে, কখনও বা লাইব্রেরিতে বা কখনও ডিপার্টমেন্টেরই কোরিডরে। জমে ওঠে গল্প-আড্ডা-গান। বন্ধুদের মাঝে কাকে কিভাবে পচানো যায়, চলতে থাকে তারও বন্দোবস্ত। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পেলেও তা হাতছাড়া করা হয় না কোনভাবেই। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী পান্থ আজাদ বলেন, ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর গল্প না হলে যেন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহই বাড়ে না। অনুষদ থেকে বছরে দু’-একটা ট্যুর ছাড়া তেমন কোথাও কোন ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয় না। মাঝে মাঝে বা সেটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাধ্যমে মনটাকে পড়াশোনার প্রতি দৃঢ় করতেই তো হলো থেকে প্রতিদিন ছুটে আসি এ আড্ডাখানায়। কৃষি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী মারজানা ঋতু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়ার মতো যথেষ্ট সুন্দর জায়গা এখানে আছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় হলো এক যান্ত্রিক জীবন। তার পরও সময়-সুযোগ পেলেই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাই, মেতে উঠি গল্পগুজব-আড্ডায়। তবে আড্ডাটা যে সব সময় দুষ্টুমি বা খামখেয়ালিপনায় ভরা থাকে, তাও কিন্তু না। আড্ডার বেশিরভাগ আলোচনাই হয় ক্যারিয়ারভিত্তিক। আড্ডার ভেতরে উঠে আসে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়। উঠে আসে কারও হেরে যাওয়া কিংবা সফলতার কাহিনী। সারা বছরই বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে মুখর থাকে ক্যাম্পাস। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ছাড়াও র‌্যাগ ডে, রি-ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাজ সাজ রব বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠানে মাতিয়ে রাখে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস জীবনের আরেকটা বড় অংশজুড়ে থাকে হলজীবন। হলে কাটানো সময়গুলো কেউ কখনই ভুলতে পারে না। আর বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে, সবচেয়ে দৃঢ় ও গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এই হলের বন্ধুদের সঙ্গেই। দুষ্টুমি, খামখেয়ালিপনার সবক্ষেত্রেই এক ডাকে সাড়া পাওয়া যায় এই বন্ধুদের। খাবার-দাবাড় থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভাগ বসায় যারা, কোন বিপদ-আপদ হলে ছায়ার মতো পাশে পাওয়া যায় সেই তাদেরই। ‘বন্ধু ছাড়া লাইফ ইমপসিবেল’ কথাটা একসময় বিশ্বাস হতো না। কিন্তু এখন মনে হয় কথাটা অনেকাংশেই সত্য। পরিবার ছেড়ে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থীর কাছে এ ক্যাম্পাসই আরেক পরিবার। এক অন্যরকম পরিবার, যেখানে বন্ধুরাই অভিভাবক, বন্ধুরাই আত্মীয়স্বজন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সব সময় পাশে থাকে এই বন্ধুরাই। তাই তো দিনশেষে সেই চিরচেনা কথাটিই বলতে হয়Ñ তোরা ছিলি, তোরা আছিস, তোরাই থাকবি।
×