ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণা খাতে বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ

ঢাবির ৬৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১৮ জুন ২০১৭

ঢাবির ৬৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য ৬৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার রাজস্ব ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনার আগামী এক বছরের ব্যয় হিসাব এ বাজেট। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সিনেটের ২০১৭ সালের বার্ষিক অধিবেশনে বাজেট পেশ করেন ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দিন। অধিবেশনে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের ৬৬৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত এই বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ১৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২ শতাংশ এবং বেতন-ভাতা-পেনশনে বরাদ্দ ৪১৭ কোটি ৫৯ লাখ ২২ হাজার টাকা যা বাজেটের ৭৯ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ব্যয় হবে ৭১ কোটি ৭৭ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। বরাবরের মতো এবারও বাজেটের আয়ের উৎস বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। এবার ইউজিসি দিবে ৬০৮ কোটি ১০ লাখ টাকা আর বাকি অংশ আসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ফি, দালান ও ভূসম্পত্তি থেকে আয় ও বিবিধ প্রাপ্তি। ঘোষিত এই ৬৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বাজেট যা গতবার ছিল ৬৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত বছরের চূড়ান্ত সংশোধিত বাজেটের হিসাবে এবারের বাজেটের আকার গতবারের চেয়ে ৩ কোটি ৮ লাখ কম। অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ এনামুজ্জামান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ ড. রহমত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া এবং সিনেট সদস্যবৃন্দ। অধিবেশনে বাংলা ভাষার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্বের বহু জাতি নিজেদের মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। নোবেল পুরস্কারে তারাই ভূষিত হচ্ছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষক সমাজ মাতৃভাষায় জ্ঞান পরিবেশনে কুণ্ঠাবোধ করেন। অনেকে পরিভাষার ধুয়া তুলে দায় এড়িয়ে যান। অথচ বিজ্ঞানের শিক্ষকরাই নিজ নিজ বিষয়ে উপযুক্ত পরিভাষা তৈরি করতে পারেন। উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বকীয়তা ও গুরুত্বের সঙ্গে অন্য কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের তুলনা চলে না। দেশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিই উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য। কিন্তু সেই বোধ ও অবস্থান থেকে আমরা সরে এসেছি। এখন আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের মানসিকতা পরিবর্তন ঘটানো, যেন তারা যে কোন সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কোন অবস্থাতেই বাণিজ্য কেন্দ্র নয়। এটি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার মান রক্ষা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে বা কোন ধরনের দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিলে তাতে যে ক্ষতি হবে তা সহজে পূরণ হবার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি বেরিয়ে আসে অদক্ষ পেশাজীবী গোষ্ঠী তাতে শুধু সমাজে নয়, জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুন প্রজন্ম, আগামী দিনের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শিক্ষাবান্ধব শেখ হাসিনা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে বলে এ সময় তিনি আশাপ্রকাশ করেন। বাজেট উপস্থাপনকালে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দীন বলেন, বাজেট শুধু কতিপয় আর্থিক প্রস্তাব কিংবা সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবৃতির সমষ্টি নয়। এটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এবং সম্পদ বণ্টনের একটি যুক্তি নির্ভর বাস্তব পরিকল্পনা। একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। সেই অর্থেও জোগান কোথা থেকে পাওয়া যাবে এবং কীভাবে তার সদ্ব্যবহার হবে- বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তিনি সন্ধ্যাকালীন প্রোগ্রামের আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা ও শিক্ষকদের গুণগত মান-উন্নয়নে ব্যয় করার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে নতুন খোলা বিভাগে তিন বছরের মধ্যে কোন বাণিজ্যিক বা সন্ধ্যাকালীন কোর্স চালু না করার প্রস্তাব করেন।
×