ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তান স্বপ্নের ফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১৮ জুন ২০১৭

ভারত-পাকিস্তান স্বপ্নের ফাইনাল আজ

আইসিসির টুর্নামেন্ট হয় মূলত তিনটি। একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দ্বিতীয়টি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তৃতীয়টি টি২০ বিশ্বকাপ। এরমধ্যে প্রথম দুটি টুর্নামেন্ট হয় ৫০ ওভারের। আইসিসির ৫০ ওভারের কোন টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মাধ্যমে প্রথমবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়াই করবে দুই দল। আজ সেই ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। লন্ডনের ওভালে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচে জিতবে কোন দল? শিরোপাই বা কার? এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নও উঠছে, রানীর দেশে মুকুট কার? আজ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি শেষেই সেই মুকুটের ফয়সালা হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ড বলতেই একটি চেহারা সবার সামনে ভেসে ওঠে। দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথের চেহারা। যে চেহারায় সর্বদা হাসি থাকে। এই রানীর দেশেই আজ শেষ হাসিটা হাসবে কারা? কার হাতে উঠবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরের শিরোপা? ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি না পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাতে? এরআগে ভারত এ টুর্নামেন্টে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথমবার ২০০২ সালে। যদিও সেবার ফাইনাল ম্যাচটি বৃষ্টিতে শেষ হতে না পারায় শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সেবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এরপর ভারত আবার চ্যাম্পিয়ন হয় ২০১৩ সালে। সেবার ভারতের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেবারও টুর্নামেন্টটি হয়েছিল ইংল্যান্ডেই। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল ভারত। তাই ভারতকেই সবাই ফেভারিট ভাবছে। সৌরভ গাঙ্গুলীই যেমন বলেছেন, ‘গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে ১২৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান। তাতেই বোঝা যায় দুই দলের মধ্যে ব্যবধান কি রকম। ফাইনালেও ভারতকে হারাতে পারবে না পাকিস্তান। পাকিস্তানের চেয়ে ভারত অনেক এগিয়ে। দলটিতে কোন দুর্বলতা নেই।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি ছাড়া ভারতের কোন দুর্বলতাও ধরা পড়েনি। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে তো রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। আবার সেমিফাইনালে বাংলাদেশকেও পাত্তা দেয়নি। ভারতের মতো আবার পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও কখনও খেলেনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টিতে ভারতই এগিয়ে রয়েছে। দলটির ব্যাটিং লাইন আপ যে বিশ্বসেরা। পাকিস্তানকে সবার আগে এ বিষয়টি নিয়েই ভাবতে হবে। পাকিস্তান যত রানই করুক, নিরাপদ নয়। আবার ভারতকে অল্পতে আটকে রাখাও কঠিন। পাকিস্তান বিপদেই আছে। কিন্তু পাকিস্তানও কম নয়। গাঙ্গুলীই যেমন পাকিস্তানকে নিয়ে বলতে গিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি আশা করছি অসাধারণ একটি ফাইনাল ম্যাচ হবে। কারণ এটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচ। আশা করছি পাকিস্তানও লড়াই জমিয়ে তুলবে। দলটি যেভাবে ফাইনালে উঠেছে। বোঝাই যাচ্ছে কঠিন লড়াই ছুড়ে দেবে।’ ভারতের বিপক্ষে যদি পাকিস্তান কঠিন লড়াই ছুড়ে দিতে পারে তাহলে তো জিততেও পারে। আর জিতলেই তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে পাকিস্তান। তাতে পাকিস্তানকে নিয়ে ‘হায়-হায়’ রব উঠেছিল। কিন্তু এরপরই পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়ায়। এমনভাবে খেলতে থাকে ফাইনালেই উঠে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে। গ্রুপ পর্বের প্রতাপশালী দল ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে দাঁড়াতেই দেয়নি। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। তাই এ দলটিও যে চ্যাম্পিয়ন হবে না তা কে বলতে পারে। দলটির ব্যাটিং লাইন আপ ভারতের মতো না হলেও শক্তিশালী। আর বোলিংটা তো পাকিস্তানের সবসময়ই সেরা। আবার ফাইনালে খেলতে পারেন পেসার মোহাম্মদ আমির। তাহলে তো পাকিস্তানের বোলিং শক্তি আরও বেড়ে যাবে। যা দিয়ে ভারত ব্যাটসম্যানদের রুখে দিতে পারলেই তো হয়ে গেল। খেলা হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। যে টুর্নামেন্টেই কেবল ভারতকে হারাতে পেরেছে পাকিস্তান। আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা টি২০ বিশ্বকাপে ভারতকে এখন পর্যন্ত হারাতে পারেনি পাকিস্তান। শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই হারিয়েছে। চারবার লড়াই করে দুইবার জিতেছে। সেই জেতা ম্যাচগুলোও তো পাকিস্তানের জন্য প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। অবশ্য বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট বলে কথা। যেখানে ভারত সবসময়ই পাকিস্তানের বিপক্ষে ফেভারিট থাকে। ভারত আবার সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারবারই পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে। গ্রুপ পর্বে যে পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারিয়েছে ভারত, সেটি এ টুর্নামেন্টে রানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় জয় হয়ে আছে। ফাইনালে এখন কোন দল ঝুলে পড়ে সেদিকেই সবার নজর থাকছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার লড়াইয়ে অবশ্য পাকিস্তান এখনও এগিয়েই রয়েছে। দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে ১২৮টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়। ভারত যেখানে ৫২ ম্যাচে জিতে, পাকিস্তান সেখানে জিতে ৭২টি ম্যাচে। ৪টি ম্যাচের কোন রেজাল্ট হয়নি। তবে আইসিসির কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে কিন্তু পাকিস্তানের বেহাল দশা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে কখনই ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি পাকিস্তান। ৬টি ম্যাচ খেলে সবকটিতে হেরেছে। এরমধ্যে একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটি সেমিফাইনাল ম্যাচও আছে। গ্রুপ পর্বেও হারে পাকিস্তান। নকআউট পর্বেও হারে। চাপের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নেতিয়ে পড়ে পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চার ম্যাচের মধ্যে ২ ম্যাচে জিতে পাকিস্তান। তবে শেষ জয়টি ছিল ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। প্রায় আট বছর আগে। সর্বশেষ দুই ম্যাচে ভারতই জিতে। বর্তমান সাফল্যও ভারতের পক্ষেই কথা বলছে। তবে জিতলেই শিরোপা নিজেদের হবে। এমন ম্যাচে এবার কে জিতে দেখা যাবে। আইসিসির কোন ওয়ানডে টুর্নামেন্টে প্রথমবার ফাইনালে লড়াই করছে দুই দল, এটা দেখাই যেন আনন্দে রূপ নিচ্ছে। সেই আনন্দ দ্বিগুণ হবে কোন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীর তা রাতেই বোঝা হয়ে যাবে। রানীর দেশে মুকুট কার? এ প্রশ্নের উত্তর আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরের পর্দা নামার দিনেই মিলে যাবে।
×