ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী সুরক্ষা আইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি

ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ আসামির মামলার রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৮ জুন ২০১৭

ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ আসামির মামলার রায় শীঘ্রই

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষ আসামিদের বিচার শেষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৩৩ মামলায় ১৩৫ আসামির বিচার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের দানবীর রণদা প্রসাদ হত্যা মামলাও রয়েছে। ঈদের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা ট্রাইব্যুনালে আসবে। এর আগে বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২৮ মামলার রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে একটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ আসামির মামলাটি চলতি বছরের ৯ মে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। প্রসিকিউশন আশা করছে শীঘ্রই এ মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। অন্যান্য মামলার মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ, আমলে নেয়ার আদেশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনাল দ- দেয়ার পর আপীল বিভাগে আরও ১৮ জনের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৬ বছরের ৩০ আগস্ট মীর কাশেমের মামলার রিভিউয়ের রায় ঘোষণার পর আপীল বিভাগে আর কোন নতুন মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসেনি। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা আশা করছে শীঘ্রই এ সমস্ত মামলার শুনানি শুরু হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন ও সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্টার কার্যালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩ মামলার মধ্যে একটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। এটি হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৯তম রায়। গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ আসামির মামলার রায় শীঘ্রই ঘোষণা করা হতে পারে। প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, আশা করছি এ মামলাটির রায় শীঘ্রই ঘোষণা হতে পারে। আজিজ ছাড়া বাকি আসামিরা হলো রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), নাজমুল হুদা (৬০) ও আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতবছর ২৮ জুন এই ছয় আসামির বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের মধ্যে লতিফ ছাড়া সবাই পলাতক। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ মামলায় ১৩৫ আসামির বিচার শুরু হয়েছে। আর গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ আসামির মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঈদের পর আরও বেশ কিছু নতুন মামলা আসতে পারে। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আপীল বিভাগে মীর কাশেম আলীর মামলার পর আর কোন মামলার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসেনি। এখনও ১৮ মামলা আপীল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই আপীল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে আপীলকৃত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। তিনি আরও বলেন, আইন কমিশনের সুপারিশ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর সাড়ে ৬ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত আইন প্রণয়নের কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। জেলা পর্যায়ে কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিও রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (রাজনৈতিক) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে পুলিশ, র‌্যাব, ডিজিএফ আইএনএসআই, এসবি, তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি জেলা কমিটি রয়েছে। সাক্ষীদের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন এ কমিটি তা করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে, আইন মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন করলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাক্ষীর সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে সাতটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আর আপীলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ১৮ মামলা। এর সাতটি রায়ের মধ্যে ৬টিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন (মৃত্যুদ-), হবিগঞ্জের সৈয়দ মোঃ কায়সার (মৃত্যুদ-), রংপুরের এটিএম আজহারুল ইসলাম (মৃত্যুদ-), পিরোজপুরের আব্দুল জব্বার (আমৃত্যুকারাদ-), পাবনার আবদুস সুবহান (মৃত্যুদ-), চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান (আমৃত্যুকারাদ-), পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক (মৃত্যুদ-), বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার (মৃত্যুদ-) ও খান আকরাম হোসেন, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ও ওবায়দুল হক তাহের (মৃত্যুদ-), কিশোরগঞ্জের এ্যাডভোকেট সামসুদ্দিন আহম্মেদ (মৃত্যুদ-), হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া (মৃত্যুদ-), ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া (আমৃত্যুকারাদ-), জামালপুরের সামসুল হক ওরফে বদরভাই, ও এসএম ইউসুফ আলী (আমৃত্যুকারাদ-), যশোরের সাখাওয়াত হোসেনসহ দুই জন (মৃত্যুদ-)। এদিকে তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে ঈদের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারে। এ সমস্ত আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। মামলা তদন্তের স্বার্থে এদের নাম এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
×