ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বনমানুষ ও নদ্দিউ নতিম’ নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৮ জুন ২০১৭

‘বনমানুষ ও নদ্দিউ নতিম’ নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোজার মাসে যেন মঞ্চনাটকের খরা যায়। কয়েক বছর আগেও রমজান মাসজুড়ে নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন হলেও এখন বদলে গেছে সেই চিত্র। দর্শকস্বল্পতাসহ নানা বিষয় কেন্দ্র করে নাটকের দলগুলোও নাটক মঞ্চায়ন থেকে বিরত থাকে। তবে এই খরার সময়েও কিছু নাট্যদল ঠিকই নাটক নিয়ে হাজির হয় মঞ্চে। সেই রেশ ধরে শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার দুটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো দুই নাটক। মিলনায়তন পরিপূর্ণ না হলেও নিয়মিত নাটক দেখা দর্শকরা উপভোগ করেছেন দুই নাট্যদলের দুটি নাটক। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে প্রাচ্যনাটের নাটক বনমানুষ। মার্কিন নাট্যকার ইউজিন ও’ নিল রচিত নাটক ‘দ্য হেয়ারি এপ’ অবলম্বনে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন বাকার বকুল। স্টুডিও থিয়েটার হলেও ছিল ম্যাড থেটারের প্রযোজনা নদ্দিউ নতিম নাটকের ২৪তম প্রদর্শনী। নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। বনমানুষ নাটকের গল্পে উঠে এসেছে পুঁজিবাদের আগ্রাসন এবং শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনা ও জেগে ওঠার বয়ান। নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা করা একটি জাহাজকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে কাহিনী। জাহাজের ইঞ্জিনের চুল্লিতে কয়লা ভরার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের একজন ইয়াংক। দেখতে অনেকটা বনমানুষের মতো। কালিঝুলি মাখা অবস্থায় তাকে আরও বন্য দেখায়। এদিকে মিলড্রেড ডগলাস নামের এক নারী এই জাহাজের যাত্রী। সে পুঁজিপতির আদুরে কন্যা, যিনি জাহাজের পরিচালকম-লীর একজন। মিলড্রেড ঘুরতে ঘুরতে একবার জাহাজের খোলে নেমে ইয়াংককে দেখে ভয়ে চিৎকার দেয়। ইয়াংক যখন বুঝতে পারে যে তাকে দেখেই এই চিৎকার তখন তীব্র একটা ঘৃণাবোধ জন্ম নেয় তার মনে। জাহাজ বন্দরে ভিড়লে সে শহরে ঘুরতে বের হয় তার এক সঙ্গীকে নিয়ে। শহরের জৌলুস ও উচ্চবিত্তের জাঁকজমক তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। নানা রকম মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয় তার মধ্যে। একপর্যায়ে জেলে যেতে হয় তাকে। জেল থেকে পালিয়ে সে সরাসরি চিড়িয়াখানায় বনমানুষের খাঁচার কাছে গিয়ে জন্তুটাকে ডাক দেয় এবং তার সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করে। শেষে ওই বনমানুষের আক্রমণেই প্রাণ হারায় ইয়াংক। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শশাংক সাহা, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, সুলতানা নুসরাত এরিন, মোঃ লুৎফর ইসলাম নিপুন, সুদীপ বিশ্বাস, আজাহার উদ্দিন রিয়াজ, সোহেল ম-ল, সুবর্ণা শারমিন, চেতনা রহমান ভাষা, অর্ণব দাশ, আরিফ রেজা খান, নাইমি নাফসীন মুস্তফা ছায়া প্রমুখ। নদ্দিউ নতিম নাটকে একজন কবি ও একটি শিশুর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে কাহিনী। মানসিক প্রতিবন্ধী এই শিশুর সঙ্গে পরিচয় ঘটে মতিন নামের এক কবির। যে কিনা মনে মনে নিজেকে একজন উজবেক কবি হিসেবে কল্পনা করে। মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিন উদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। তার হৃদয়জুড়ে আছে সহপাঠিনী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও মতিন বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। এর মাঝে একদিন মতিনের চোখে পড়ে পত্রিকার ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপনÑ একজন সর্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়। আকর্ষণীয় বেতনের টানে মতিন তার কবিসত্তাকে সাময়িক স্তিমিত রেখে কমল নামের ওই মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর টিউটরের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু মতিনের কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে টিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে প্রতিবন্ধী শিশুটি কবিকে ভুলে না। কমল নামের শিশুটি জেদ ধরে, সে মতিনের সঙ্গে কথা বলবেই। একপর্যায়ে সুযোগ হয় কথা বলার। কমল মতিনের সঙ্গে তার জীবনের একটি গোপন বিষয় শেয়ার করে, যে সিক্রেটের জন্য মতিনকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াতে হয়। হাসপাতালের এক হিমশীতল ঘরে সে শুয়ে থাকে। তার কাছে মনে হয়, সে যেন অনন্তকাল এভাবেই শুয়েছিল। তিনটি চরিত্রে নির্মিত নাটকে অভিনয় করেছেন আসাদুল ইসলাম, সোনিয়া হাসান ও আর্য মেঘদূত।
×