ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই হাজার কোটি টাকার ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পে অগ্রগতি নেই

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৮ জুন ২০১৭

আড়াই হাজার কোটি টাকার ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পে অগ্রগতি নেই

ফিরোজ মান্না ॥ সাশ্রয়ী মূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিডেনসিটি ও টেলিএক্সেস সুবিধা সম্প্রসারণ করার জন্য ‘মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ নামে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে এক হাজার ৮১৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা দেবে চীন। বাকি টাকা সরকার দেবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে, ই-গবর্নেন্স, ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-সায়েন্স, ই-কৃষিসহ অন্যান্য সেবা সহজেই পাওয়া যাবে। অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ছাড়া এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের খুব বেশি অগ্রগতি নেই। বিটিসিএল সূত্র জানায়, নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে অপটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। নেটওয়ার্ক অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রসহ কারিগরি প্রশিক্ষণও থাকবে প্রকল্পে। গড়ে তোলা হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এর মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বল্প খরচে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন বিটিসিএল দেশজুড়ে গড়ে তুলছে আধুনিক ও শক্তিশালী আইপি নেটওয়ার্ক। বিটিসিএল তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এই প্রথম এত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পাশাপাশি বিটিসিএল সেবা দিলে জনসাধারণ সহজেই তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারবেন। কারণ বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক আগে থেকেই সারাদেশে রয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নিতে বেশ খরচ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কম মূল্যে জনসাধারণ সেবা পাবেন। দেশের ৭ বিভাগের জেলা, উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারে স্থাপিত টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো নতুন করে স্থাপন করা হবে। এসব এক্সচেঞ্জ পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ছাড়া সেবা দেয়া যাবে না। বিটিসিএলের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০ কিলোমিটার ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ৫ হাজার কিলোমিটার কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপিত হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। তখন শহর ও গ্রামের বৈষম্য অনেকাংশে কমে যাবে। গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা না দিলে শহরের মানুষের চেয়ে তারা পিছিয়েই থাকবে। ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অধিকারের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করছে। তাই এই সেবা সবার জন্য সমান হতে হবে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলার ৬৭ উপজেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৫৯ উপজেলা, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৩৮ উপজেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৭ উপজেলা, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৪২ উপজেলা, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ২৬ উপজেলা এবং বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২১ উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। জানা গেছে, প্রকল্পের কেবল কেনা হবে খুলনা কেবল কোম্পানি থেকে। তবে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ করবে বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মাটি খননের কাজ করবে স্থানীয় ঠিকাদার। ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল কেবল জেলা এক্সচেঞ্জের সঙ্গে উপজেলা এক্সচেঞ্জের সংযুক্ত করবে। উপজেলা এক্সচেঞ্জ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে যে কোন সময় এ নেটওয়ার্ক বিস্তার করা যাবে। বেসরকারী অপারেটররাও এই অপটিক্যাল কেবলের সংযোগ সুবিধা নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে ল্যান্ড টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথের মূল্য কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই মূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে। অন্যদিকে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এক হাজার ইউনিয়ন সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা এমনিতেই পৌঁছে যেত। বর্তমানে ইউনিয়ন প্রকল্পটি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে চলে গেছে। এখন আর এই প্রকল্প ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের হাতে নেই। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে।
×