ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামদানি প্রদর্শনী জাদুঘরে

গৌরবময় ঐতিহ্য, ঈদের শৌখিন কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৮ জুন ২০১৭

গৌরবময় ঐতিহ্য, ঈদের শৌখিন কেনাকাটা

মোরসালিন মিজান ॥ কেনাকাটা চলে সারাবছরই। তবে ঈদ যারপরনাই স্পেশাল। মহাউৎসবের জন্য সেরা পোশাকটির খোঁজ করেন ক্রেতা। এখনও সে চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে বাঙালীর জন্য জামদানির চেয়ে ভাল কিছু আর হয় না। প্রাচীন বাংলার এ ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে বাঙালী। দেশের বাইরেও দারুণ প্রশংসিত। এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত রুচি ও আভিজাত্যকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলে জামদানি। মসলিনের উত্তরাধিকার জামদানি ইউনেস্কোর ইনটেজিবল কালচারাল হেরিটেজের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সব মিলিয়ে অতুলনীয়। দেশীয় মার্কেটে বিদেশী পোশাক আর চাকচিক্য যতই থাকুক, জামদানির দিকে তাকালে সব ভুলে যেতে হয়। স্বতন্ত্র এ আবেদনের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর রমজানে জাতীয় জাদুঘরে বিশেষ জামদানি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। নিজস্ব ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে, শিল্পীদের উৎসাহিত করতে বিসিক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সহায়তা করে জাদুঘর। ঈদ সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে এবারের প্রদর্শনী। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প পরিসরে স্টল সাজিয়েছে মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠান। নিজেদের তৈরি জামদানি নিয়ে এসেছেন রূপগঞ্জের কারিগররা। জামদানির বেলায় দাম বড় বিষয়। প্রদর্শনীতে জামদানি শাড়ির দাম শুরু হয়েছে দুই হাজার টাকা থেকে। আছে এক লাখ টাকা দামের জামদানিও। যে শাড়িতে বেশি কাজ সে শাড়ি তৈরিতে সময় লাগে বেশি। একই কারণে দামও বেশি হয়। তবে প্রদর্শনী ঘুরে মনে হয়েছে, জামদানির দাম পরিশ্রমের তুলনায় কমই নিচ্ছেন শিল্পীরা। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন রঙের শাড়ি। লাল, কমলা, সবুজ, বেগুনীর মতো উজ্জ্বল রংগুলো যে কোন উৎসবকে রঙিন করে তুলতে পারে। মূল রঙের সঙ্গে যায় এমন রঙের সুতা দিয়ে জমিন ও আঁচলে নক্সা করা হয়েছে। হালকা অনুজ্জ্বল রঙের শাড়িগুলোর আবার অন্যরকম আবেদন। বেশি দেখা গেল অফ হোয়াইট। অফ হোয়াইট রঙে আধুনিক মানস ও শিল্পরুচির সুন্দর প্রকাশ ঘটিয়েছেন কারিগররা। কিছু শাড়িতে ভরপুর কাজ। জমিনের কোন অংশই শূন্য পড়ে নেই। লোকজ নানা মোটিফ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নক্সা করা হয়েছে। কিছু নক্সা এত পুরনো যে, ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এসব ঐতিহ্য সবাই কম-বেশি অনুসরণ করেন। খ্যাতিমান জামদানিশিল্পী সবুজ মিয়া ছিলেন নিজের স্টলেই। বললেন, কিছু ডিজাইন আমাদের বাপ-দাদাদের আমল থেকে আছে। এই যেমনÑ করলা পাইড়, ইঞ্চি পাড়, পানপাতা পাড়, বেলপাতা পাড়, হাঁসফুল, সন্দেশ ফুল, পোনা ফুল, হজপাতা তেড়ছি এবং ডালিম তেড়ছি। প্রকৃতি ও প্রতিদিনের জীবন থেকে নেয়া আরও কিছু মোটিফ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। শিল্পীরা নিজেরাও বিভিন্ন নিরীক্ষা চালান বলে জানান তিনি। একটি শাড়ি দেখিয়ে বলেন, মাঝখানে বাড়তি পাড় যোগ করেছি আমি। এ কারণে শাড়িটা গায়ে জড়ালে অন্যরকম লাগবে। প্রদর্শনীর জামদানিগুলো দুই ধরনের। কিছু সুতি। কিছু হাফসিল্ক। হাফসিল্ক শাড়িগুলোতে একটা আলো ঝলমলে ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। গ্লেসটা চোখে পড়ে। আর সুতি কাপড়ে দেশজ ভাবটা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। তবে ক্রেতাদের অনেকের জামদানি সম্পর্কে ধারণা নেই। ফলে তারা বাজারের অন্য কেনাকাটার সঙ্গে এর তুলনা করেন। কোন কোন বিক্রেতা তাই বিরক্ত বলেই মনে হয়েছে। ইসমাইল জামদানি ওয়েভিংয়ের কর্ণধার ইসমাইল তো মজার তথ্য দিলেন। বললেন, একটা ভাল জামদানি করেছি। নিয়েও এসেছি। কিন্তু প্রদর্শন করছি না। এক লাখ টাকা দাম পড়বে। এ দাম দিয়ে শাড়ি কেনার ক্রেতা কই পাবেন? তবে কোন শৌখিন মানুষ খোঁজ করলে দেখান বলে জানান তিনি। প্রদর্শনীতে জামদানি শাড়ির পাশাপাশি আছে মেয়েদের জামা ও ছেলেদের পাঞ্জাবির কাপড়। জামদানি সালোয়ার-কামিজ কিংবা জামদানি পাঞ্জাবির খবর অনেকেই জানেন না। যারা জানেন, তারা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমী জামদানি উইভিংয়ের স্বত্বাধিকারী নজরুল জানান, শাড়ির তুলনায় কম কাপড় হলেও অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়। আমরা বিক্রি করি দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫শ’ টাকায়। কিন্তু ক্রেতারা অনেকে দাম বেশি বলে চলে যান। এ কারণে জামা বা পাঞ্জাবি কম করেন বলে জানান তিনি। প্রদর্শনী ঘুরে পছন্দের শাড়ি খুঁজছিলেন সুরাইয়া বেগম। এ গৃহিণী এসেছিলেন খিলগাঁও থেকে। বললেন, আমি সব সময়ই জামদানির ভক্ত। এটা তো একদমই আমাদের। খুব ভাল লাগে পরতে। আনিসুর রহমানও বিভিন্ন স্টলে ঘুরছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রী। বললেন, বিশেষ দিবসে বিশেষ কিছু গিফট দিতে চাই। আর এক্ষেত্রে জামদানির তো কোন তুলনা হয় না। প্রদর্শনী ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে।
×