ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ জুন ২০১৭

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ মাহে রমজানের ২২তম দিবস। মাগফিরাতের দশকের শেষ পর্যায় আমরা অতিক্রম করছি। রমজান আমাদের সংযত জীবন চর্চায় অনুপ্রেরণা যোগায়। ইসলাম মানে শান্তি। আর এ শান্তি জায়নামাজ ও মসজিদ থেকে জীবনের সব কর্মস্থলে ব্যাপৃত। আমরা যদি ইসলামের অনুসরণ করি তাহলে শান্তি শুধু অনুভবে নয় আমাদের কর্মময় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাম্য, মৈত্রী, ভালবাসা, মানবতাবোধ প্রকাশিত হয়ে থাকে। এমনকি আমার পাশে কোন অমুসলিম যদি থাকেন তিনিও আমার পবিত্র শান্তির ভাগীদার। মহানবী তো তাই বলেছেন। তিনি সুন্দর বলেছেন: আল মু’মিনু মান আমিনা হুননাসÑ সত্যিকারের মুমিনতো সেই, যার পাশে আসলে সাধারণ যে কোন মানুষ নিরাপদ বোধ করতে পারে, প্রশান্তি লাভ করতে পারে। একজন মুসলমান অন্য মজলুম মানুষের জন্য একটি বটবৃক্ষের মতো। তার ছায়ায় যে কেউ আশ্রয় লাভ করে ধন্য হতে পারে। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা সে ধরনের মহান আত্মার অধিকারী হওয়ার অনুশীলন করে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যে এক শ্রেণীর উগ্র মুসলমান ধর্মের নামে, জেহাদের নামে অন্য মুসলমানের ওপর হামলা চালায়। যা প্রকৃত ইসলামী শান্তিবাণীর বিরোধী। পবিত্র ইসলাম ধর্ম শুধু মুসলিম নাগরিক নয়, কোন অমুসলিমের ওপরও অকারণে হামলা করা বৈধ মনে করে না। বিখ্যাত আইনগ্রন্থ কিতাবুল খারাজের ৮২ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত আছে, আমাদের নবীজী হযরত মুহম্মদ (স.) বলেছেন: মনে রেখ যে ব্যক্তি কোন অমুসলিম (মোয়াহিদ) নাগরিকের প্রতি অত্যাচার করে, তাকে কষ্ট দেয়, তার সম্মানহানি করে অথবা তার কোন সম্পদ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধ পক্ষ অবলম্বন করব। বুখারী ও মিশকাত শরীফে বর্ণিত হয়েছে: যদি কোন ব্যক্তি কোন অমুসলিমকে হত্যা করে তবে জান্নাতের ঘ্রাণও তার নসীব হবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্বে থেকেও জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। ইসলামের মহান খলিফা হযরত ওমর (রা.) সিরিয়ার গবর্নর আবু ওবায়দাকে এক ফরমানে বলেছিলেন: কোন মুসলমান অমুসলিম নাগরিকদের ওপর কোন প্রকার জুলুম, মারধর (তাদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন) এবং তাদরে ধন-স¤পদ ভোগ-দখল করা থেকে নিষেধ কর। এভাবে ইসলামের দীর্ঘ ধারাবাহিক ইতিহাস সাধারণ নাগরিকের নাগরিক অধিকার যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়ার ইতিহাস। আজ আমরা সেসব সোনালি ইতিহাস থেকে অনেক দূরে। আমরা মুসলমানরা একদিকে দেশে দেশে নির্যাতিত নিষ্পেষিত অধিকারহারা ও বঞ্চিত; অপরদিকে যেসব দেশে মুসলমানদের প্রাচুর্য রয়েছে, তারা এসব ভোগে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। মুসলিম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের হাতে আজ সত্যিকার অর্থে পবিত্র ইসলামের যথাযথ বিকাশ সাধিত হচ্ছে না। আবার এক শ্রেণীর মুসলমানরা এমন এক চরম উগ্রতা ও উন্মত্ততায় থাকেন তাদের আচার আচরণ ও কর্মসূচী দেখলে অন্যান্য যে কোন মতাদর্শী ও ধর্মাবলম্বী মাত্রই পেরেশানগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পবিত্র মাহে রমজান আমাদের যেন একটি আদর্শ ও সুশীল সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে নিয়ে যায় এ কামনা আজকে।
×