ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের প্রস্তুতি শুরু, সাজছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ জুন ২০১৭

ঈদের প্রস্তুতি শুরু, সাজছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি। শেষ হয়ে আসছে মাহে রমজান। দ্বারে সমাগত ঈদ। তাই ঈদের নামাজের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন ঈদগাহ ময়দান সাজছে নতুন সাজে। অন্যবারের মতো এবারেও দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ঈদকে সামন্যে রেখে কেনাকাটার যেমন ধুম পড়েছে। তেমনি ঘরে ফেরার প্রস্তুতি রয়েছে সবার মাঝেই। আর কয়দিন পরেই শুরু হবে ঘরে ফেরার পালা। ইতোমধ্যে অনেকে ঘরে ফিরতেও শুরু করেছেন। ঈদযাত্রা ঘরে ফেরা ঝামেলা মুক্ত করতে অনেকেই তাদের পরিবার পরিজন আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। রমজানের ২১ দিন অতিবাহিত হয়েছে। আর মাত্র ৮ বা ৯ রমজান পরেই অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে অনেকে বাস লঞ্চ ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করেছেন। অপেক্ষা শুধু ঈদ উদযাপনের। এদিকে দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি ও বিদেশীরা কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে অংশ নেবেন। এছাড়া নারীরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এ উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রস্তুতে পুরোদমে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। ২৭ রমজানের মধ্যে সামিয়ানা টাঙানোসহ অধিকাংশ কাজ শেষ করা নির্দেশনা রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। বর্ষা মৌসুমে ঈদ জামাত হবে, তাই বৃষ্টি হলেও যেন মুসল্লিরা নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারেন সে কথা মাথায় রেখেই এবার ঈদগাহ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, জাতীয় ঈদগায় দেশের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে যে মুসল্লিরা আসবেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং র‌্যাব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সিসি ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু রাখা হবে উল্লেখ করেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে ৮৪ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। পাঁচ হাজার নারীও ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন। চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতের জন্য মুসল্লিদের অজু করার ব্যবস্থা রাখা হযেছে। মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা দিতে ঈদগাহ ময়দানে রাখা হচ্ছে, এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিমও। গাড়ি নিয়ে আসা মুসল্লিদের গাড়ি রাখার জায়গার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, ঈদের প্রধান জামাতে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশাপাশি ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি করে ঈদের জামাত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। তারা জানায় রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের নামাজ সুষ্ঠুবে পরিচালনার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্ধারিত জায়গাই ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তারা জানায় এবার ঢাকা দক্ষিণে জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠসহ ২৩০টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডের ১৮০টিসহ মোট ৪১০ স্থানে ঈদ জামাত হবে। ওয়ার্ডের সবচেয়ে পরিচিত ও জনবহুল জায়গায় হবে এসব জামাত। ঈদের জামাতের জন্য সিটি কর্পোরেশনের মাঠ, স্কুলের মাঠ, মসজিদ, মাদ্রাসার মাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি করে ঈদের জামাত হলেও উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জামাত হবে ৫টি করে। ঈদুল ফিতরকে সামন্যে রেখে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতির জন্য ঈদ জামাতের পাশাপাশি শুরু হয়ে পাড়া-মহল্লায় শুভেচ্ছা তোরণ তৈরি। বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার টানানোও শুরু হয়ে গেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রতিবারের মতো এবারেরও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও অন্যবারের মতো এবারও জাতীয় সংসদ প্লাজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদেও ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। ইসলামি বিধান অনুযায়ী ২৯ রমজানই শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে হবে। যদি ২৯ রমজানে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যায় তাহলে রমজান ৩০ দিন পূর্ণ করতে হবে। তবে কোনক্রমেই তা ৩০ দিনের বেশি হবে না। গত ২৮ মে থেকে শুরু হয় এবারের পবিত্র সিয়াম-সাধনা। হিসাব অনুযায়ী আগামী ২৬ অথবা ২৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ইসলামি বিধান অনুসারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুসলমানদের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এটি এক ধরনের সাদকা বা দান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে রোজার ভুলত্রুটি দূর করার জন্য আদায় করা হয় ফিতরা। ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফিতরার পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিতরা আদায়যোগ্য যে কেউ এবার সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা বা সমমূল্যে ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়। তবে ভুলক্রমে ঈদের নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিতরা আদায় করা যায়।
×