ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাজার

বৃষ্টি গরম যানজট উপেক্ষা করে মার্কেটে মার্কেটে ক্রেতার ঢল

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ জুন ২০১৭

বৃষ্টি গরম যানজট উপেক্ষা করে মার্কেটে মার্কেটে ক্রেতার ঢল

এম শাহজাহান ॥ বৃষ্টি ভ্যাপসা গরম ও যানজট উপেক্ষা করে ঈদ কেনাকাটায় রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। উপচেপড়া ভিড় ও ক্রেতাদের ঠাসাঠাসিতে মার্কেট-শপিংমলগুলোর সামনে পা ফেলার জায়গা নেই। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল ১০টার মধ্যেই কেনাকাটার জন্য মার্কেটে চলে আসেন ক্রেতারা। গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স, পলওয়েল সুপার মার্কেট এবং শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট বেলা বাড়ার সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুরের পর গাউছিয়া মার্কেটে লাইন ধরে ক্রেতাদের প্রবেশ করতে হয়েছে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল এবং যমুনা ফিউচার পার্কে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হতে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়েছে ক্রেতাদের। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। পুরো রাজধানী এখন ঈদ আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। মার্কেটগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর ফুটপাথেও জমে উঠেছে ঈদের বাজার। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের শুরুতে সোমবার বা মঙ্গলবার মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ উৎসব পালিত হবে। নাড়ির টানে যারা বাড়ি যাবেন তারা সবাই এখন ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটে ঘুরছেন। সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। এছাড়া যারা ঢাকায় থাকবেন বলে মন স্থির করছেন, তারাও পছন্দের পোশাক-আশাক ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। এ কারণে মার্কেটগুলো এখন ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারী-বেসরকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতনভাতা ও বোনাস হয়ে যাওয়ায় মার্কেটগুলোতে পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। উত্তরা থেকে গাউছিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারী খাতের মোবাইল ফোন কর্মকর্তা লুবনা হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে জানালেন, ছুটির দিন হওয়ায় মার্কেটে আসা হয়েছে। সপ্তাহের শেষ নাগাদ বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি থাকবে। তাই এখনই কেনাকাটা সাড়ছেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর মার্কেটগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভিড় হলেও মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে রাস্তার যানজট সমস্যা তৈরি করছে। এদিকে মার্কেটগুলোর পাশাপাশি শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। ফ্যাশন হাউস আড়ং, কে ক্র্যাফট, ক্যাটস আই, অঞ্জনস, মেনজ ক্লাব, বিশ্ব রঙ, রঙসহ নামী-দামী সব ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ধুমছে বেচাবিক্রি চলছে। এছাড়া রাপা প্লাজা মৌচাক মার্কেট, বেইলি রোড মার্কেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার এবং পুরান ঢাকার র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা ছুটছেন ঈদের কেনাকাটায়। নিউ মার্কেটের শাড়ি কাপড়ের ব্যবসায়ী আবু মোতালেব জানালেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই বিপুলসংখ্যক ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন। ঈদ সামনে রেখে এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলছে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের সুবিধার্থে মার্কেটে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। রোজার প্রথমদিকে বেচাবিক্রি তেমন না হলেও এখন ভাল বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। এদিকে, অভিজাত ক্রেতাদের পছন্দ বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। এ মার্কেটে প্রবেশ করতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন ধরতে হচ্ছে। দুপুরের পর বসুন্ধরা সিটি থেকে কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ মার্কেটের ক্রেতা ফারজানা নাহিদ জানালেন, ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি কেনাকাটা করতে এ মার্কেটে এসেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি অন্যদিকে রাস্তায় ভয়ানক যানজট কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঈদ বলে কথা! ঈদের আনন্দে সবকিছু তুচ্ছ হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোর পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানগুলোতেও কেনাকাটা অনেক বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। রাজধানীর হলিডে মার্কেট ফার্মগেট, বেইলি রোডের হকার্স মার্কেট, শিল্পকলা একাডেমিসংলগ্ন সড়ক, নিউমার্কেট, মতিরঝিল হলিডে মার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের কেনাকাটা সাড়ছেন ক্রেতারা। এছাড়া গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ জিরোপয়েন্ট, বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেট ও দক্ষিণ গেটে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। এসব দোকানে পাঞ্জাবি, পায়জামা, লুঙ্গি, শাড়ি, ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট, জুতা, ছোটদের পোশাক, বেল্ট, মেয়েদের জন্য চুড়ি, মালা, থ্রি-পিছ, লেহেঙ্গা, লিপিস্টিক, মোজা থেকে শুরু করে সবকিছুই বিক্রি হচ্ছে। ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ে দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। কে ক্র্যাফট বাজারে এনেছে নতুন ডিজাইনের পোশাক। নবরূপা, বিশ্ব রঙ ও সাদা-কালোতে ঈদ উপলক্ষে বাহারি ডিজাইনের থ্রি-পিছ উঠেছে। মধ্যবিত্তরা মৌচাক থেকে পাঞ্জাবি কিনেছেন পছন্দ করে। উচ্চবিত্তের জন্য রাজধানীর বসুন্ধরা, রাপা প্লাজা ও যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীরা দেশী পোশাক-আশাকের পাশাপাশি আমদানিকৃত বিদেশী পোশাকও সংগ্রহ করেছেন। মধ্যবিত্তের ক্রেতারা নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ছুটে যাচ্ছেন। দেশের গ-ি ছাপিয়ে বিদেশেও হচ্ছে ঈদ মার্কেট দেশের গ-ি ছাপিয়ে বিদেশেও কেউ কেউ ঈদ শপিং করতে ছুটে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় রয়েছে কলকাতা, ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। উচ্চবিত্তের বেশির ভাগ ক্রেতা কলকাতা থেকে ঈদের শপিং সাড়ছেন। পণ্যের ন্যায্যদাম ও গুণগত মান ভাল হওয়ার কারণে ক্রেতারা বিদেশের দিকে ছুটছেন বলে জানা গেছে। এ দেশের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বেশি মুনাফা করার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতারা আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। আর এ কারণে ক্রেতারা ছুটে যাচ্ছেন বাইরের দেশগুলোতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা জানালেন, গুলশানের অভিজাত এক শপিংমলে সামার কোর্টের দাম চাওয়া হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। অথচ একই কাপড় কলকাতার একটি মার্কেট থেকে দুই হাজার রুপী দাম চাওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ক্রেতাদের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের চৌধুরী কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে আগের চেয়ে ব্যবসায়ীরা এখন অনেক বেশি সতর্ক। এখন অনলাইনেও বেচাকেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দাম বেশি নেয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য একটি তথ্যমতে, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রয়েছেন। এর মধ্যে উচ্চবিত্তের কোটিপতি ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া নগদ টাকায় কোটিপতি না হলেও সম্পদশালী অনেক মানুষ রয়েছে যাদের বিদেশে গিয়ে শপিং করার মতো আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। মূলত এরাই ঈদ-পোশাক পার্বণ ও বিয়ে-শাদিতে বিদেশ গিয়ে শপিং করে থাকেন। কিনে আনেন তার পছন্দসই জিনিসটি। তাই ঈদ সামনে রেখে শপিং করার জন্য বিদেশ গমনের বিষয়টি নতুন নয়। ধনীরা বরাবরই এ ধরনের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। তবে দিন দিন দেশের বাইরে শপিং করার প্রবণতা বাড়ছে। বিত্তশালীরা সপরিবারে ঈদের কেনাকাটার জন্য ছুটে যাচ্ছেন বিদেশ বিভুয়ে। কিনে আনছেন পশ্চিমা স্টাইল ও ডিজাইনের চোখ ধাঁধানো বাহারি সব পোশাক।
×