ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৬ বার মেয়াদ বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে ৫ গুণ

৩ বছরের চামড়া শিল্পনগরী ১৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৮ জুন ২০১৭

৩ বছরের চামড়া শিল্পনগরী ১৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রকল্প তিন বছরের। ১৫ বছর হয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে দুই বছর। এ চিত্র ‘চামড়া শিল্প নগরী ঢাকা’ শীর্ষক প্রকল্পের। অন্যদিকে, শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। এ অবস্থায় পরিকল্পনা কমিশন বলছে মূল প্রকল্পটি ৩ বছরে বাস্তবায়নের জন্য একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে দু’বার মেয়াদ বৃদ্ধিসহ সংশোধন এবং ৪ বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রায় ১৫ বছর ধরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের এ দীর্ঘসূত্রিতা একদিকে যেমন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বৃদ্ধি করছে; অপরদিকে প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকল্পের আওতাধানী সাধারণ মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা কিংবা বিলম্ব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। এ সময় ব্যয় ধরা হয় ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর এবং ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাস; দু’বার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলে প্রায় ৩ বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন করা হয়। এ সময় ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে করা হয় ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পরবর্তীতে আবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত দু’বার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদী এবং দ্বিগুণ ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধন করা হয়। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। মেয়াদ করা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমানে তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিদ্যমান চামড়া শিল্পগুলো বেসরকারী খাতে প্রতিষ্ঠিত এবং এগুলোর ৯৫ শতাংশ ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগ এলাকায় স্থাপিত। এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই নন-মেকানাইজড বা সেমি-মেকানাইজড পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ফলে প্রচুর পরিমাণে তরল ও কঠিন পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য নির্গত হয়। এ ছাড়া শিল্প-কারখানাগুলোতে বিজ্ঞান সম্মতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং এ এলাকার জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ একটি চামড়া শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি মোট ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০০৩ হতে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পাট, বস্ত্র ও বেপজা উইং শিল্প ও শক্তি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মোশারফ হোসেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যবিবরণীতে বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প বিসিক কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের প্রায় শতভাগ প্রকল্পই মেয়াদবৃদ্ধিসহ বারবার সংশোধন করা হচ্ছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিসিকের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিসিকের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা একনেকে তুলে ধরা হতে পারে।
×