ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মহীন প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৮ জুন ২০১৭

কর্মহীন প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেট বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, পুরো বাজেট কাঠামোতে গুণমান সম্পন্ন প্রকল্প ও বিনিয়োগ ইত্যাদি রেখে এর বাস্তবায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ দরকার। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসনসহ অন্যান্য খাতে সহায়ক পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়নি। শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। দেবপ্রিয় বলেন, মূল মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে বাজেট প্রণয়ন ও বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব। বাজেটে নেতৃত্বদানকারী মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রযুক্তিগতসহ অন্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সক্ষম রূপে দেখিনি। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও সেরকম সংস্কার দেখিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি প্রবৃদ্ধি যদি ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশের বেশি হয় তারপরও সমস্যা কোথায়। সমস্যাটা হচ্ছেÑ দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ওই প্রবৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে পারছে না। এখানে সমস্যা হচ্ছে এ প্রবৃদ্ধির ভেতরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ যতটুকু আসা দরকার ছিল সেটা আসে নাই। এটা বড় কাঠামোগত সমস্যা। তিনি বলেন, আমরা কর্মহীন প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছি। এত প্রবৃদ্ধি নিয়েও আমরা বেকার সমস্যা সমাধান করতে পারছি না। সেমিনারে কাতার সঙ্কটে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বর্তমানে চলমান কাতার সঙ্কটের প্রভাব পড়তে পারে প্রবাসী আয় ও জনশক্তি রফতানিতে। বাজেট আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রবাসী আয় নেতিবাচক। তার ওপরে কাতার সঙ্কটের কারণে প্রবাসী আয় আরও কমে যেতে পারে। ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমীন বলেন, বাড়তি আবগারী শুল্কের কারণে ব্যাংক আমানতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বর্তমান কাতার সঙ্কটে প্রবাসী আয় কমারও আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছর নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। বেশ কিছুদিন ধরে রেমিটেন্স প্রবাহ নেতিবাচক। যদিও ঈদের কারণে গত মে মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। গত মাসে প্রবাসীরা ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন এবং একইসঙ্গে মিসর, লিবিয়া ও মালদ্বীপ সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টের অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও ভ্রমণ সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ব্যাংকিং খাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা এখন বাংলাদেশের বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং খাতকে সংস্কার করতে হবে। এ সময় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান ড. আকবর আলী খান। এছাড়া এ ব্যাংকগুলোকে বাজেট থেকে অর্থায়ন করা বন্ধ করে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে ড. আকবর আলী খান বলেন, কার্যকর বিরোধী দল না থাকার কারণে সংসদে বাজেট নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। বাজেটের দুর্বলতা নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া দরকার। বেকার সংখ্যা নিয়ে সরকার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে প্রকৃত বেকার সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। কিন্তু সরকারী হিসাব মতে, মাত্র ৪ শতাংশ। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, সরকারী ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। অন্যদিকে বাজেট থেকে এ ব্যাংকগুলোকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিপিড নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুত বিলের সঙ্গে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে। এর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এছাড়া গ্যাসের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাই এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও ভ্যাট হার ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি। বাজেট আলোচনায় বলা হয় নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুত এবং গ্যাস ছাড়াও ইন্টারনেট, রেস্টুরেন্টের খাবার, পেশাক এবং ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংস্থাটির বাজেট আলোচনায় ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বাড়তি আবগারি শুল্ক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ, দেশের অবকাঠামো খাত, নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব এবং দেশের ব্যাকিং খাতের বর্তমান অবস্থাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেনÑ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ আরও অনেকে।
×