ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৃপ্তি নিয়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৭ জুন ২০১৭

তৃপ্তি নিয়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। এরচেয়ে সুখ আর কি হতে পারে। সেমিতে ভারতের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই হারতো টুর্নামেন্টের সেরা দলের বিপক্ষেই হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে যে সেমিতে উঠতে পেরেছে দল, সেই সুখ নিয়েই আজ দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বার্মিংহাম থেকেই দেশে ফিরছে। শুক্রবার দুপুরে রওনা হয়ে আজ সকালে দেশে পৌঁছাবে দলের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে অর্জন কখনই কোনদিন মিলেনি। সেই অর্জন মাশরাফিবাহিনী বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এনে দিয়েছেন। এরচেয়ে আনন্দ কি হতে পারে। সেই আনন্দ নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশের মাটিতে ২০১৫ সাল থেকে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশের মাটিতে জয় যেন অধরাই হয়ে থাকে। জয়ের ধারাবাহিকতা নেই। সাফল্যও সেইরকম ইদানীং দেখা যায়নি। দেশে এত ভাল দল হয়েও বিদেশের মাটিতে ব্যর্থ দলের তকমা গায়ে লেগেছিল। গত বছর ডিসেম্বর থেকে টানা বিদেশের মাটিতে খেলে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ মিলিয়ে টানা হার হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ভারতের বিপক্ষে হারে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশ। টি২০ জিতে। কিন্তু তখনও যেন বিদেশের মাটিতে জেতার যে ধারাবাহিকতা সেটা তৈরি হচ্ছিল না। যখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশনে ইংল্যান্ড মিশনে গেল তখন থেকেই যেন সেই ভিত মজবুত হতে থাকে। আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারায়। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডকে হারানো হয়। বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার জিতে বাংলাদেশ। অর্জনগুলো যুক্ত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দল নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়ে দিতে চেয়েছে এবার। তাও সম্ভব হয়। দল সেমিফাইনালেই খেলে। তাতে স্বস্তিও যুক্ত থাকে। এ স্বস্তি নিয়েই দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এক সেমিফাইনালই বাংলাদেশকে অন্যরকম দলে পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ দল যে অনেক উন্নত হয়ে গেছে তাতো বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছেই। কিন্তু বৈশ্বিক আসরেও যে বাংলাদেশ এখন উন্নত দল, তাও দেখে ফেলল। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। তখনই বিশ্বকে জানান দেয়া হয়, বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। তখন থেকেই বাংলাদেশ যেন নতুন রূপে বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভূত হয়। এরপর নিজ মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা আট দলের একটি হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন বৃহস্পতিবার শেষ হলো। তবে যে অর্জন মিলেছে সেটি ইতিহাস রচনা করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ। ভাল ক্রিকেট খেলেই হেরেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ হারের সম্ভাবনাতেই ছিল। বলতে গেলে নিশ্চিত হারই হতো। কিন্তু বৃষ্টি বাঁচিয়ে দিল। ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। ১ পয়েন্ট পেয়ে যেন বাংলাদেশ দলও উজ্জীবিত হয়ে গেল। নিউজিল্যান্ডকে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠতে পারবে বাংলাদেশ। এমন সম্ভাবনা যখনই সামনে ধরা দিল দল যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিল। তবে এ জয়েই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হলো না। ভাগ্য যখন ভাল থাকে তখন সবকিছু নিজেদের পক্ষে যায়। বাংলাদেশের পক্ষেও গেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া হেরে গেল। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল। তাও আবার অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল। এতেই তো বোঝা যায় বাংলাদেশ যোগ্য দল হিসেবেই সেমিতে উঠেছে। অনেকেই বলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠত না। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াও তো ১ পয়েন্ট পেয়েছে ভাগ্য ভাল থাকায়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত নেই। তাই বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচগুলো বাদ দিলে তো ইংল্যান্ডের পর ‘এ’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশই ভাল খেলেছে। গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড তিনটি ম্যাচই জিতেছে। নিউজিল্যান্ড কোন ম্যাচই জিততে পারেনি। তার মানে এই গ্রুপের সবচেয়ে বাজে দলটি নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার সুযোগ ছিল শুধু। ম্যাচটি জিতলেও তো রানরেটে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে থেকে বিদায় নিতে পারত অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ ১টি ম্যাচ জিতেছে। একটি ম্যাচ হেরেছে। একটি ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট পেয়ে সেমিফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্ব ক্রিকেটও এবার আবার দেখল বাংলাদেশ এখন আর হেলাফেলার দল নয়। তাইতো ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দল যোগ্যতা বলেই এখানে এসেছে। সেরা আট দলের হয়ে টুর্নামেন্ট খেলেছে। আবার সেমিফাইনালেও উঠেছে। দলটি অনেক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে দলের ক্রিকেটাররা দলকে এ পর্যায়ে আনতে অনেক ধৈর্য ধরেছে, পরিশ্রম করেছে। প্রতিপক্ষের জন্য বাংলাদেশ দলটি এখন আর নিরাপদ নয়। বিপজ্জনক দল।’ কোহলি তো আর এমননিতেই এমন কথা বলেননি। সাবেক গ্রেট ক্রিকেটাররাও তো বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবার মুখেই এবার ‘বাংলাদেশ’ নামটি ছিল। এ বিষয়টিই বাংলাদেশকে অনেক ওপরে নিয়ে গেছে। অর্জন যে এমনিতেই মিলেনি তা বোঝাও গেছে। সবাই যে বাংলাদেশকে নিয়ে এত ভাল কথা বলেছেন, এটিই তো ক্রিকেটারদের অর্জন। দেশের অর্জন। গৌরব মিলেছে। সেই গৌরবে আছে সুখও। সেই সুখ নিয়েই আজ দেশে ফিরছেন মাশরাফিবাহিনী।
×