ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তানের ঐতিহাসিক ফাইনাল কাল

ইতিহাস রচনা করবে কারা?

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৭ জুন ২০১৭

ইতিহাস রচনা করবে কারা?

স্পোর্টস রিপোর্টার, লন্ডন থেকে ॥ ভারত ও পাকিস্তান লড়াই যখনই হয় তখনই উত্তেজনা, উন্মাদনা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই লড়াইটি যদি হয় ফাইনালে, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ দুই দল কখনই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি। এমনকি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও পরস্পরের বিপক্ষে ফাইনালে লড়াই করেনি। নিয়মিত হয়, এমন কোন বৈশ্বিক ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালেই তো দুই দল মুখোমুখি হয়নি। এবার তাই ইতিহাসই রচনা হয়ে গেল। কিন্তু এখন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে দুই দলের প্রথম লড়াইয়ের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে, শিরোপা ঘরে তুলে ইতিহাস রচনা করবে কোন দল? সেই প্রশ্নই সবার মুখে মুখে। ভারত ও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ১০ বার ফাইনালে মুখোমুখি হয়। প্রথমবার ১৯৮৫ সালে। শেষবার ২০০৮ সালে। তার মানে ৯ বছর পর আবার ফাইনালে লড়াই করবে দুই দল। ম্যাচটি রবিবার লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত হবে। হাতে তাই খুব বেশি দিন নেই। মাঝখানে আর একদিন আছে। আজকের দিনটি শেষ হলেই রবিবার ফাইনাল। আর ফাইনাল হলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরের পর্দা নেমে যাবে। এ ফাইনালের আগে দুই দলই কথার লড়াইয়ে লিপ্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। চলবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও চরম আলোচনা। দুই দেশেই ম্যাচটি নিয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকবে। সবাই চাইবে জিততে। কিন্তু সেই শিরোপা কার হাতে ধরা দিবে? টুর্নামেন্টে ভারতের যে অবস্থান তাতে ভারতকেই ফেভারিট মানছে সবাই। দলটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল। টুর্নামেন্টে দুইবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এবার জিতলে তৃতীয়বার হয়ে যাবে। সর্বোচ্চবার চ্যাম্পিয়ন হবে ভারত। শিরোপা ভারত জিততে পারে সেই কথাই সবাই বলছেন। দলটি গ্রুপপর্বে আবার পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লড়াইয়েও চারবারের লড়াইয়ে শেষ দুইবার ভারতই জিতেছে। পাকিস্তান সেই তুলনায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে পিছিয়েই আছে। দলটি কখনই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলতে পারেনি। ভারত যেখানে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একবার সেমিফাইনালে খেলেছে। সেখানে পাকিস্তান তিনবার সেমিফাইনালে উঠেছে। এবার প্রথমবার ফাইনালে খেলছে। তাই ভারতকেই সবাই ফেভারিট তালিকায় রাখছে। গ্রুপপর্বে ভারত দাপট দেখিয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে। পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্য হোঁচট খেয়েছে। ৩২১ রান করেও ৭ উইকেটে হেরেছে। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিতে উঠেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারটি যেন ভারতকে সতর্কও করে তুলেছে। পাকিস্তানও খুব খারাপ করেনি। দলটি সেমিফাইনালে কিংবা ফাইনালে উঠতে পারে এই আশাই শুরুতে কেউ করেনি। কিন্তু পাকিস্তান দেখিয়ে দিল তাদের যোগ্যতা। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হারার পর পাকিস্তান যেখানে মুছড়ে যাওয়ার কথা, দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা; সেখানে পাকিস্তান তীব্র বেগে এগিয়ে গেছে। ভারতের কাছে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। এরপর শ্রীলঙ্কাকেও ৩ উইকেটে ধরাশায়ী করে সেমিফাইনালে উঠে যায় পাকিস্তান। সেমিফাইনালে আবার দুইদলই সহজ জয় পেয়েছে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে ৮ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে অনায়াসে হারিয়েছে ভারত। দুইদলই এখন ফাইনালের মঞ্চে। যে মঞ্চ এরআগে কখনই ভারত-পাকিস্তানের সান্নিধ্য পায়নি। নিয়মিত হয়, এরকম কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালেই কখন দুইদল মুখোমুখি হয়নি। এবার হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে দুইদল প্রথম কোন ফাইনালে মুখোমুখি হয়। মেলবোর্নে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে। সেই টুর্নামেন্টটিও বৈশ্বিকই ছিল। টেস্ট খেলুড়ে সাতটি দলই টুর্নামেন্টে খেলে। তবে টুর্নামেন্টটি একবারই হয়। এরপর হয় তিনজাতি টুর্নামেন্ট, নয়তো এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলে ভারত ও পাকিস্তান। দুইদলের ফাইনালের ইতিহাস আবার পাকিস্তানের পক্ষে। ১০ ম্যাচের মধ্যে সাতবার পাকিস্তান জিতে। তিনবার হারে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় কিটপ্লাই কাপের ফাইনালে দুইদল মুখোমুখি হয়। পাকিস্তানই বাজিমাত করে। এবারও যে হবে না তা কে বলতে পারে। পাকিস্তানকে কেউ আমলেই নেয়নি। সেই পাকিস্তানই কিনা ফাইনালে খেলছে। ধীরে ধীরে যেভাবে পাকিস্তান টুর্নামেন্টে নিজেদের অবস্থান গড়েছে তাতে ভারত যতই গ্রুপপর্বে জিতুক, ফাইনালে বিপদে পড়তেও পারে। ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপাও ঘরে তুলতে পারে। যে দলই জিতুক, নিয়মিত হয়ে এ রকম বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে ইতিহাসই গড়বে।
×