ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিঠা ছাড়া ঈদের আনন্দ অপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৭ জুন ২০১৭

পিঠা ছাড়া ঈদের আনন্দ অপূর্ণ

পদ্মা-যমুনা, কালীগংগা-ধলেশ^রী বিধৌত মানিকগঞ্জের গ্রামীণ জনপদে নানা উৎসব-পার্বণে আনন্দের অনুষঙ্গ হিসেবে মিশে আছে পিঠা। পিঠাপুলির জন্য এই জনপদের সুখ্যাতি এবং প্রাচীন ঐতিহ্য শত প্রতিকূলতার মাঝে আজও টিকে আছে। কৃষিনির্ভর এই জনপদে মানুষের আর্থিক সঙ্গতির আধিক্য যেমন কখনোই ছিল না, তেমনি আর্থিক অনটন এমন স্তরে কখনোই পৌঁছেনি যাতে মানুষের জীবন বিপন্ন, বিপর্যস্ত হয়েছে। ফলে মানিকগঞ্জের গ্রামীণ জনপদে আনন্দ আয়োজনে প্রতিটি উপলক্ষে পিঠার রয়েছে অনন্য সাধারণ গুরুত্ব। তেমনি উপলক্ষ উৎসব ঈদ। ঈদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা হিসেবে পিঠাকে ঠাঁই দেবার পুরনো ঐতিহ্য এখনও মানিকগঞ্জের জীবনধারা থেকে হারিয়ে যায়নি। পিঠার বৈচিত্র্যের জন্য মানিকগঞ্জের গ্রামীণ নারীদের যেমন বাড়তি দক্ষতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পিঠা তৈরির উপকরণের সহজলভ্যতা। পিঠা তৈরির অপরিহার্য উপকরণ চাল, নারকেল, গুড়, গরুর দুধ কোনটির কমতি নেই। প্রকৃতিগতভাবেই এসব উপকরণ হাতের কাছে পেয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। পিঠার বৈচিত্র্যও যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে। মানিকগঞ্জের পিঠার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিতই পিঠা, ভাপা, পাটিসাপ্টা, তেল চিতই, দুধ চিতই, মাংস কুলি, দুধ কুলি, ছিট অন্যতম। পিঠাপ্রিয় মানিকগঞ্জের মানুষের কাছে মূল উৎসবটা আসে মূলত: শীত ঋতুতে, নবান্নে, পহেলা বৈশাখে এবং ঈদ উপলক্ষে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে রোজা এবং কোরবানীর ঈদে পিঠার আয়োজনটা হয়ে ওঠে জমজমাট। এ সময়টিতে প্রায় প্রতিটি গ্রাম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে চাকরি, ব্যবসাসহ নানা প্রয়োজনে গ্রামের বাইরে থাকা স্বজনদের উপস্থিতিতে। ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে মেয়ের জামাই, মেয়ে, নাতি-নাতনিদের থাকে বিশেষ নিমন্ত্রণ। ঈদের দিন পোলাও-মাংস, ফিরনি-সেমাইয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও ঈদের পরদিন থাকে পিঠার আয়োজন। চলে ঈদের ছুটির শেষ পর্যন্ত। স্বজনদের একসঙ্গে হবার কাক্সিক্ষত দিনগুলোকে আরও আনন্দময় করতে বাড়ি বাড়ি চলে গুঁড়ি কোটার ধুম। চলে নানা রকমের নানা স্বাদের পিঠার আয়োজন। সময়ের বিবর্তনে গ্রামীণ জীবনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে গ্রামীণ জীবনধারায়। আধুনিকতার ঢেউ মানিকগঞ্জের গ্রামীণ জীবনধারায় প্রভাব ফেলেছে। ফাস্টফুড কালচার, নানা রকমের তৈরি খাবার খাদ্যরুচিতে পরিবর্তন আনলেও পিঠার প্রতি সহজাত টান এখনও বেশ টিকে আছে মানিকগঞ্জের প্রতিটি গ্রাম এমনকি শহুরে জীবনেও। ঈদ উপলক্ষে পিঠার প্রস্তুতিটা শুরু হয় ঈদের অনেক আগে থেকে। দাওয়াত দেয়া, পিঠার উপকরণ জোগাড় করা সবই চলতে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মানিকগঞ্জের রূপসা গ্রামের অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবারের ষাটোর্ধ হালিমা খাতুন জানান, পিঠা আমাদের গ্রামের, আমাদের পরিবারের সঙ্গে মিশে আছে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে বাড়িতে পিঠা বানাতে দেখেছি। বিয়ের পর শ^শুর বাড়িতেও এর ব্যতিক্রম দেখিনি। বিশেষ করে ঈদের পরদিন পিঠা ছাড়া আমাদের বাড়ির ঈদ আনন্দ পরিপূর্ণ হয় না। ঢাকা থেকে ছেলে, ছেলের বউরা আসে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি নাতনীরা আসে। ওদের আব্দার থাকে পিঠার জন্য। আমরাও আয়োজন করি। খুব আনন্দ হয়। হরিরামপুরের আব্দুর রহিম পেশায় ভ্যানচালক। বরাবরের মত এবারও ঈদের পরদিন তার বাড়িতে পিঠা তৈরি হবে। পিঠার জন্য ঈদের দিন পনেরো আগেই তিনি কিনে রেখেছেন নারকেল, গুড়। ঈদের সময়ের চড়া দাম এড়াতেই তার এই প্রস্তুতি। তিনিও জানান ছোটবেলা থেকে ঈদ উপলক্ষে মাকে পিঠা বানাতে দেখেছি। তাই আমরাও ছেলেমেয়েদের জন্য বানাই। তবে দুধ, গুড়, মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও সব পিঠা বানানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে চিতই পিঠা, মুরগির মাংস, নয়তো ভাপাপিঠাতে শখ মেটাতে হয়। -গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ থেকে
×