বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মশার উপদ্রবে বিপর্যস্ত রাজধানীর জনজীবন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। নগরীর বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকাতেও এর বিস্তার ভয়াবহ। তাই মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন কাউন্সিলররা। জনগণের কাছে যেহেতু জনপ্রতিনিধিরাই জবাবদিহি করেন। তাই এ কাজের দায়িত্বও নিজের ঘাড়ে নিতে চান তারা।
কাউন্সিলরদের বক্তব্য ‘আমরা জনপ্রতিনিধি। যে কোন দুর্ভোগের জন্য আমরাই জনগণের কাছে জবাবদিহি করি। কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় আমরা নেব কেন? তাদের কারণেই নগরবাসী মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। পরিচ্ছন্নকর্মীদের মতো মশা নিধনকর্মীদের দায়িত্বও আমরা নেব। আমাদের তত্ত্বাবধানে দেয়া হলে নগরীতে মশার উপদ্রব থাকবে না।’
দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার মশা নিধনের দায়িত্ব মশক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। কিন্তু এই দফতরের ব্যর্থতার পর এ কাজ চলছে যৌথভাবে। অধিদফতরের মোট জনবলের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু জনবল যুক্ত করে যৌথভাবেই নগরীর মশা নিধনের কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি মালিকদের কাছে ওষুধ বিক্রি করে দিচ্ছেন মশককর্মীরা। আবার অনেকেই টাকা নিয়ে বিত্তশালীদের বাড়িতে স্প্রে করছেন। মশা উৎপাদনের স্থানগুলোর আশপাশে ছিটানো হচ্ছে না ওষুধ। এতে দিনদিন বাড়ছে মশার উৎপাত আর মশাবাহিত নানা রোগ। বর্তমানে রাজধানীতে মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ বিস্তার হয়েছে সিটি কর্পোরেশেনের ব্যর্থতার কারণে।
কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মশা নিধন খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চলতি বছর (২০১৬-২০১৭) তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও মশা কমেনি।
এজন্য নগরবাসীর পাশাপাশি ক্ষুদ্ধ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরাও। তারা মশা নিধন নিজেদের হাতে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে একাধিক কাউন্সিলর মেয়রের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। শুধু মশা নিধনের দায়িত্বই নয়, মশক নিধনকর্মীদের বেতনভাতাসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে চান কাউন্সিলররা। এ বিষয়ে সম্প্রতি ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন কর্পোরেশনে একটি আবেদন করেন। আবেদনে তার ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নকর্মীদের মতো মশক নিধনকর্মীদেরও তার নিয়ন্ত্রণে দেয়ার দাবি করেন। এছাড়া তার স্বাক্ষর ছাড়া যাতে কারও বেতন না হয়, সে দাবিও করেছেন আবেদনে।
নগরীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয় না। আমার ওয়ার্ডে বছরে এক থেকে দুই বার মশার ওষুধ ছিটানো হয়। তাও বারবার ফোন করার পর। সর্বশেষ পহেলা রমজানে একবার দেয়া হয়েছে। তাও শুধু কয়েকটা মসজিদে।’
‘মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ’ উল্লেখ করে এই কাউন্সিলর বলেন, ‘এই এলাকায় থাকা যায় না। এই ওয়ার্ডে কোন মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নকর্মী নেই। আমি নামেই কাউন্সিলর রয়েছি।’ মশা নিধনের তদারকি দাবি করেন এই কাউন্সিলর। এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলর বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে মশা নিধনের দায়িত্ব চেয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি। ব্যক্তিগতভাবেও বিষয়টি মেয়রকে বলেছি।’
তিনি বলেছেন, ‘বোর্ড সভায় বিষয়টি উঠানো হবে।’ কাউন্সিলরদের এই দাবির পর বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ সভা করেছে ডিএসসিসি। গত ৬ জুন বিকেলে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোঃ বিলালের সভাপতিত্বে নগর ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খান মোঃ বিলাল বলেন, ‘কাউন্সিলরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব কাজের তদারকি করবেন। এজন্য কোন আদেশের প্রয়োজন নেই। কাউন্সিলরদের এই কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লার্ভি সাইডিং ও বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এডাল্টি সাইডিং ছিটানো হয়। এতে মশা থাকে না। এছাড়া মশার প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করতে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনাযুক্ত জলাশয় পরিষ্কার করি। এ কাজের সঙ্গেও কাউন্সিলররা যুক্ত আছেন।’ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ছয় শতাধিক মশক নিধনকর্মী থাকলেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না এমনটাই অভিযোগ নগরবাসীর।
মশার উপদ্রবে বিপর্যস্ত রাজধানীর জনজীবন
মশা নিধনের দায়িত্ব নিতে চান কাউন্সিলররা
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: