ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবজিও উর্ধমুখী

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৭ জুন ২০১৭

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চালের দাম বাড়ছেই। বাজারে ৪৬ টাকার নিচে কোন চাল নেই। সরকারী হিসেবেই গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। চালের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভারিবর্ষণে নষ্ট হয়ে গেছে সবজিক্ষেত। তাই সব ধরনের সবজির দাম আবারও বেড়েছে। এছাড়া আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ছোলা এবং ডাল বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামে। এছাড়া দেশী রসুনের দাম কিছুটা কমলে আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে আগের মতো উচ্চদামে। শুক্রবার রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট এবং মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, মোটা চালের ভোক্তা প্রধানত নিম্নআয়ের মানুষ। আর যারা সরু চাল কেনার সামর্থ্য রাখেন, তাদের এখন প্রতিকেজিতে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৬০ টাকার বেশি। এক বছরে এ ধরনের চালের দাম বেড়েছে সরকারী হিসেবে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। প্রধান খাদ্য চালের দাম গত তিন মাস ধরে বাড়তে থাকায় কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণা, পাইজাম, চায়না ইরির মতো ভাল মানের মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নিম্নমানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায়। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৫৬ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ঢাকার বাবুবাজার-মৌলভীবাজারে চালের দাম খুচরা বাজারের চেয়ে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কম। পাইকারদের ভাষ্য, চালের দামের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। মিল থেকে কেনা দামের সঙ্গে প্রতি বস্তায় ৫৫ টাকা পরিবহন খরচ ধরে তার ওপর ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ রেখে তারা পাইকারিতে বিক্রি করেন। পুরান ঢাকার বাবুবাজারের মেসার্স শুভ শান্ত রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোঃ সেলিম বলেন, অন্যান্য বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো ধান উঠলে চালের দাম কমে যায়। কিন্তু এবার চিত্রটা পুরো ব্যতিক্রম। নতুন চাল বাজারে আসার পরও চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাইকাররা বলছেন, হাওড়ে ফসল নষ্টের অজুহাতে নতুন চাল আসার পরও মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর ধাপে ধাপে দাম বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। ওই বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী এমদাদ হোসেন বলেন, নতুন চাল ওঠার পর তৃতীয় দফায় মোটা চালের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে। এ অবস্থায় সরকার কোন উদ্যোগ না নিলে সঙ্কট আরও বাড়বে। সবজির দাম বেড়েছে ॥ টানা বর্ষণে সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানীতে সবজি আসা কমে গেছে। আর এ কারণে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভোজ্যতেল সয়াবিন খোলা ৮৪-৮৬, সয়াবিন বোতল ৫ লিটার ৪৯০-৫২০, মসুর ডাল ৭৫-১৩৫, পেঁয়াজ দেশী ২৫-৩৫, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২০-২৫, ছোলা ৮০-৯০, চিনি ৭২-৭৫, খেজুর ১২০-২৫০, ডিম ২৭-২৮, গরু ৪৯০-৫২০, খাসি ৭০০-৭৫০ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৪৫-১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইলিশ ও দেশী মাছের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। রুই মাছ জাত ও মানভেদে ২৫০-৫০০ এবং চিংড়ি সাইজভেদে ৫৫০-১০০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি সাইজের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকায়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। প্রতিকেজি গরুর মাংস নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতাদের কাছে ক্রেতারা অসহায়। কোন ক্রেতা নির্ধারিত দামে মাংস চাইলে তাকে দু’চার কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
×