ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চীন থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার প্রস্তাবে বাংলাদেশের আপত্তি

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৭ জুন ২০১৭

চীন থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার প্রস্তাবে বাংলাদেশের আপত্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে যে ঋণ সহায়তা চুক্তি হয়েছিল, তার কিছু অংশ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ এখনই বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। সূত্র জানায়, গত বছর অক্টোবরে শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেয়ার যে চুক্তি চীন করেছিল, তার কিছু অংশ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নিতে বলছে বেজিং। যার অর্থ নমনীয় সুদে যে ঋণ পাওয়ার কথা ছিল, তা এখন বাংলাদেশকে বেশি সুদে নিতে হবে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে চীনের এই প্রস্তাব পাওয়ার পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) তাতে আপত্তি তুলেছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরের সময় আড়াই ডজন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল চীন। সম্প্রতি যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক ও কমার্শিয়াল কাউন্সেলর লি গুয়াংজুন ওই অর্থের কিছু অংশ বাণিজ্যিকভাবে নেয়ার প্রস্তাব দেন। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয় তাতে সব প্রকল্পই জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে, এরকম কোন প্রতিশ্রুতি চীন দেইনি। তাই বিশাল চুক্তির কিছু অংশ বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। সাধারণত দুই দেশের সরকারী পর্যায়ে বিশেষ করে দুই সরকারপ্রধানের তত্ত্বাবধানে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ওই ঋণ নমনীয় ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বাণিজ্যিক ঋণে সুদের হার হয় বেশি। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি হয়েছে সেসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকেও অর্থ যোগান দিতে পারে বলেও জানিয়েছে চীন। চুক্তিকৃত ৩৪ প্রকল্পের প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের কত ভাগ নমনীয় আর কতভাগ বেশি সুদের হবে আর কতভাগ বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে, তার একটি তালিকা ইআরডিকে পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে চীন। সূত্র জানায়, জি টু জি ভিত্তিতে ঋণচুক্তি নমনীয় ঋণ হিসেবে ধরা হয়। তাই দুই সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার সবগুলোই নমনীয় ঋণের আওতায় ধরা হবে। এমনটাই প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। চীনা দূতাবাসের ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ঋণের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়। যেহেতু দু’দেশের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে, সেহেতু সব প্রকল্পই নমনীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়ন হতে হবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে জানানো হয়েছে, অল্প কিছু প্রিফারেন্সিয়াল বাইয়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) বা বেশি সুদের ঋণ হতে পারে। বাংলাদেশ কোন ঋণ কত নেবে, তার একটা তালিকা শীঘ্রই চীনা দূতাবাসে পাঠাবে। পিবিসি ঋণের জন্য ৪ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হয়। আর গবর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) ঋণের জন্য ২ শতাংশ সুদ দিতে হয়। চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময়ে যে ৩৪ প্রকল্পের জন্য ঋণচুক্তি হয়েছিল, তার আটটি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে ইআরডি। এই আট প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় ৮৯৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এছাড়া রয়েছে ৫৫০ কোটি ডলারের ‘ইনস্টেলশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প’, ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘ঢাকা-সিলেট ফোর লেন হাইওয়ে প্রকল্প’, ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প’, ১৬৫ কোটি ডলার ব্যয়ের ‘এক্সপানশন এ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্প’, ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প’, ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক অব ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প’ এবং ২৮ কোটি ডলার ব্যয়ের ‘চায়না ইকোনমিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ইন চিটাগাং প্রকল্প’।
×