ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাহাকার আহাজারি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৭ জুন ২০১৭

হাহাকার আহাজারি

মোয়াজ্জেমুল হক/মোহাম্মদ আলী/জীতেন বড়ুয়া/বাসু দাশ ॥ গত মঙ্গলবার পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভূমিধসের ঘটনায় প্রাণহানি ও হৃদয়বিদারক ঘটনার পর আবারও বর্ষণ শুরু হওয়ায় নতুন করে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এ অবস্থা নিয়ে চলছে হাহাকার ও আহাজারি। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, প্রশাসনের সবকটি সংস্থা একযোগে মাঠে নামলেও অরণ্যের এসব এলাকার পরিস্থিতি স্বল্প সময়ে স্বাভাবিক করা রীতিমতো দুঃসাধ্য। তবে চেষ্টার ঘাটতিও নেই, কমতিও নেই। পাহাড়ী-বাঙালী, সেনা, সিভিল প্রশাসন, পাহাড়ী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল ও সংস্থার সদস্যরা সকলেই দুর্যোগ থেকে উত্তরণে প্রাণান্তকর প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে তিনি উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংবাদকর্মীসহ উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের। জেলা প্রশাসকের আকস্মিক এ ঘোষণা সকল মহলকে হতভম্ভ করেছে। যেখানে শুক্রবারও নতুন করে দুটি লাশ মিলেছে এবং সামগ্রিক অবস্থার কোন উন্নতি ঘটেনি সেখানে তিনি কিভাবে এ ধরনের ঘোষণা দিলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মানজারুল মান্নান এও বলেছেন, এ অভিযান ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ায় সকলের সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তার এ বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর নতুন করে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে রাঙ্গামাটি জেলা শহরটি এখনও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং শহরজুড়ে চলছে হাহাকার, সেখানে কেন তিনি এমন ঘোষণা দিলেন তার যৌক্তিক কোন কারণ মেলেনি। তিনি আরও বলেছেন, কোথাও যদি নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া যায় সেখানে অভিযান চালানো হবে। তার এ বক্তব্যের পর তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, যেখানে জেলার দশ উপজেলাই ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিধসের ঘটনায় প্রাণহানি ও নিখোঁজের সংখ্যা অগণিত সেখানে তিনি এত দ্রুত উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করার কোন কারণ থাকতে পারে না। এদিকে, পাহাড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট ধ্বংসলীলার পর একদিকে সরকার পক্ষে পুরোদমে যেমন উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে নেয়া হয়েছে শুক্রবার পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্বজনহারা মানুষগুলো বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। পাহাড়ের তিন জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটির চিত্রই ভয়াবহ। অতীতে পাহাড়ের ইতিহাসে এমন মহাদুর্যোগ প্রাকৃতিক এ লীলাভূমিকে রীতিমতো কঙ্কাল আকৃতির রূপ দিয়েছে। ভারি বর্ষণের হিংস্র ছোবল শেষ না হতেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার কখনও হালকা আবার কখনও মাঝারি বর্ষণ চলছে বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে। এ বর্ষণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গামাটির পরিস্থিতিকে নতুন করে থমকে দিয়েছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে নতুন করে ভূমিধসের আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে বান্দরবানে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষ নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। কাপ্তাইতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নৌবাহিনীর একটি চিকিৎসা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ দুর্যোগে তারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের আর বেঁচে থাকার আশা নেই বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। শুক্রবার রাঙ্গামটিতে এক শিশুসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম ও পাহাড়ের তিন জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৫৭ জনে উন্নীত হয়েছে। আহতদের সংখ্যার কোন পরিসংখ্যান করতে পারেনি প্রশাসন। কেননা, রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলা ছাড়া বাকি ৯ উপজেলাগুলো দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। ফলে সেখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে। এদিকে, গত সোমবার সকালে তিন পাহাড়ে একযোগে এ মহাবিপর্যয় ঘটার পর একদিন মাত্র বর্ষণবিহীন দিন ছিল। শুক্রবার এ বর্ষণের মাত্রা নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড়জুড়ে সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মাইকিং চলছে অব্যাহতভাবে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এ পরিস্থিতি। মহাদুর্যোগের এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী, সিভিল প্রশাসন, পাহাড়ী-বাঙালী ছাড়াও পাহাড়ী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবাই মিলে এক কাতারে কাজ করছে। তবে ব্যতিক্রম হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে। সরকারী দল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দেখা যায়নি শুক্রবার পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য বিবৃতি দেয়া হচ্ছে তা দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের জন্য এক ধরনের বিদ্রƒপের মতোই আবির্ভূত হয়েছে। এ পর্যন্ত যা করা হয়েছে সবই সরকার পক্ষে। বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপিতে রয়েছে বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যেই। এ পাহাড়ে নির্বিচারে মাটি কাটা ও সবুজ নিধন শুরু হয় মূলত জিয়া সরকারের আমল থেকে। অপরিকল্পিতভাবে স্যাটেলার পুনর্বাসন করতে গিয়ে এরা যত্রতত্র বাড়িঘর যেমন করেছে, তেমনি পাহাড় কেটে হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি পাহাড়ীদের বছর বছর আগুন দিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে যে জুমচাষ এসব মিলে পাহাড়কে করেছে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সোমবারের ঘটনায় পুরো পার্বত্যাঞ্চলের এমন কোন পাহাড় নেই যাতে ছোট-বড় মাঝারি ধস সৃষ্টি হয়নি। সবচেয়ে বেশি হয়েছে পুরনো জেলা শহর রাঙ্গামাটিজুড়ে। এদিকে, চারদিন পর রাঙ্গামাটিতে শুক্রবার বিদ্যুত ব্যবস্থা পুনরায় চালু হয়েছে। তবে তা সম্পূর্ণ নয়। জ্বালানি সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। ফিলিং স্টেশনগুলো তেলশূন্য অবস্থায় রয়েছে। এর পাশাপাশি বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় ক্রেতা সমাগম নেই বললেই চলে। আর সেসব স্থানে যৎসামান্য কিছু পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর মূল্য কয়েকগুণ বেশি। এ অবস্থায় শুক্রবার অধিকমূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে তিন দোকানদারকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে, রাঙ্গামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও কাপ্তাই দিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধই রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের শতাধিক পয়েন্টে ভূমিধস এবং কোথাও কোথাও সড়ক সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে তা স্বাভাবিক হতে কতদিন সময় নেবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে নিশ্চিত যে তা দীর্ঘায়িত হবে। বড় ধরনের ধসের ঘটনা রয়েছে ১৫টি স্থানে। প্রায় ১১ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। ১০০ ফুট থেকে ১৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে মাটির ধ্বংস্তূপ। সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কিছু ধংসস্তূপ অপসারিত করা গেলেও অবশিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টসমূহ স্বাভাবিক করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। রাঙ্গামাটিতে এ মহাদুর্যোগে সেনাসদস্যদের জীবনবাজি রেখে উদ্ধার তৎপরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাগুলো দিবারাত কাজ করে চলেছে। এরপরও আঁকাবাঁকা পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পরিপূর্ণভাবে কারিগরি সুবিধা প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যা হচ্ছে তা ম্যানুয়েলি। অর্থাৎ কোদাল, বেলচা নিয়েই পাহাড়ের ঢালু থেকে মাটি সরিয়ে উদ্ধার কাজ চলছে। স্বজন হারানোর বেদনায় রাঙ্গামাটির পরিবেশ ভারি হয়ে আছে। উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলেছেন, যারা নিখোঁজ তাদের তো আর জীবিত উদ্ধার করা যাবে না। অন্তত মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারলেই তাদের এ প্রচেষ্টা সফল হবে বলে মনে করছেন। ৫০ শয্যার রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো মানবিক বিপর্যয়। ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ চিকিৎসা প্রার্থীর ভিড়ে হাসপাতাল ও এর চত্বরজুড়ে চলছে নারী-পুরুষের আর্তনাদ। আর যারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তাদের নিত্যদিনের জীবন ব্যবস্থায় বিপর্যয় নিয়েই বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু সঙ্কটের তো শেষ নেই। বেঁচে থাকার সবকটি উপকরণের তীব্র সঙ্কট। আর যারা বাড়িঘর সহায়-সম্পদ হারিয়েছেন তারা জীবনের তরে রীতিমতো পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। যৎসামান্য সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার পর পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসা তাদের জন্য কঠিন যে হবে তা নিশ্চিত। এদিকে, যে পাহাড়ে বাঙালী-পাহাড়ীর সংঘাত বছরের পর বছরজুড়ে চলে আসছে এবং এর পাশাপাশি সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে অনাহূত নানা অভিযোগ পাহাড়ীরা উত্থাপন করে থাকে, এ দুর্যোগে সকলেই যেন এখন দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি উত্তরণে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। নানা সংঘাত ও সন্দেহের দোলাচল ভুলে গিয়ে সকলেই এখন ‘মানুষ মানুষের জন্য’ হয়ে এককাতারে মিলেমিশে ক্ষতিগ্রস্তদের বাঁচানোর লড়াইয়ে লিপ্ত। বিশেষ করে দেশের গৌরবের সেনাবাহিনীর ভূমিকা সর্বাগ্রে এবং প্রশংসনীয়। ত্বরিত গতিতে সেনাসদস্যদের মোতায়েন করা না হলে পরিস্থিতির যেটুকু উন্নতি হয়েছে সেটাও পিছিয়ে যেত। আর এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে সেনাবাহিনীর এক মেজর ও এক ক্যাপ্টেনসহ ৪ সাহসী সদস্য। রাঙ্গামাটির সর্বশেষ পরিস্থিতি স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিধস নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চারদিন পর শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে এক শিশুসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাঙ্গামাটির বেদভেদির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এদের পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটিজুড়ে স্বজন হারানোর বেদনা পরিবেশ ভারি করে রেখেছে। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বিলাপই কেবলই ভেসে আসছে। শুক্রবার নতুন করে বর্ষণ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন পাহাড়ে নতুন করে ছোট ছোট পাহাড় ধসের আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের আওতায় ১৩৭টি স্পটে বড় ধরনের যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এতে যে কোন মুহূর্তে নতুন নতুন ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় রাঙ্গামাটির জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে আছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাতছড়ি ও ঘাগড়া এলাকায় প্রায় এগার কিলোমিটারজুড়ে ধ্বংসস্তূপ কখন যে অপসারিত হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া যেসব স্থানে পাহাড়সংলগ্ন রাস্তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এ রাস্তা পুনরায় কখন প্রতিষ্ঠা করা হবে তা এখন কল্পনার বাইরে। তবে সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য সড়ক বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর, এলজিইডির পক্ষ থেকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। শহর এলাকার অধিকাংশ সড়কও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের কারণে জ্বালানি, খাদ্য, ভোগ্যপণ্যসহ কোন ধরনের সামগ্রীর সরবরাহ নেই। সামান্য পরিমাণ যা আসছে তা চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই হয়ে নৌপথে রাঙ্গামাটিতে পৌঁছানো শুরু হয়েছে। তবে চাহিদার চেয়ে এ পরিমাণ একেবারেই সামান্য। দিন যতই গড়াচ্ছে ততই পরিস্থিতি অস্বাভাবিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের সঙ্কটের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধই রয়েছে। যেসব যানবাহন এখনও চলছে সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ির সর্বশেষ পরিস্থিতি এদিকে, খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নতুন করে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ধসের আশঙ্কায় শুক্রবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার কাজ শুরু হয়। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও পৌর মেয়র মোঃ রফিকুল আলম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফের টানা বর্ষণে জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পাহাড় ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিশ শরমিনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জেলা শহরের রয়েছে, কলাবাগান, নেন্সিবাজার, শালবন, হরিনাথপাড়া গ্যাপ, আঠার পরিবার এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। বান্দরবানের সর্বশেষ পরিস্থিতি চারদিনের টানা বর্ষণে বন্যা ও পাহাড় ধসে পড়ার কারণে বান্দরবানের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষ শুক্রবার থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বান্দরবান সদরের মেম্বারপাড়া, মধ্যমপাড়া, ইসলামপুর, বনানী সমিল এলাকা, শেরেবাংলা নগর, বাস স্টেশন এলাকা, হাফেজ ঘোনা, আর্মিপাড়া এলাকা ডুবে গেলে জেলা সদরের ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় স্থানীয়রা। গত বুধবার থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করলে ও বৃষ্টি কমে আসার কারণে স্থানীয়দের অনেকে তাদের নিজ নিজ বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আর যারা এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পাহাড় ধসের ঘটনাস্থলে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বান্দরবানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড় ধস আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। শুক্রবার সকালে বান্দরবান সদর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এবং এ সময় তিনি পাহাড় ধসে নিহত ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সান্ত¡না দেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করে দেয়ায় ঘোষণা দেন।
×