ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কার্বন ন্যানোটিউব ॥ প্লেন বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৭ জুন ২০১৭

কার্বন ন্যানোটিউব ॥ প্লেন বিপ্লব

আজ নতুনতম যেসব এয়ারবাস ও যাত্রীবাহী বোয়িং বিমান চলছে সেগুলো মূলত উন্নত ধরনের যৌগিক উপাদান যেমন কার্বন ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এগুলো অতি হাল্কা, টেকসই উপকরণ যার কারণে বিমানের সার্বিক ওজন এ্যালুমিনিয়ামের কাঠামোর বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। এমন হাল্কা কাঠামোর কারণে সরাসরি যেটা লাভ হয় তা হলো বিমানের জ্বালানির সাশ্রয় হয়। উন্নত যৌগিক উপাদানের পক্ষে সাফাই গাওয়ার এটা একটা প্রধান বিষয়। কিন্তু যৌগিক উপাদানগুলোর আবার বিস্ময়কর রকমের দুর্বল দিকও আছে। এ্যালুমিনিয়াম বড় ধরনের আঘাত সামলে নিতে পারে। অত সহজে ফাটল ধরে না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত সামান্য আঘাতে যৌগিক উপাদানের বিভিন্ন স্তর ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। এটাই কম্পোজিট ম্যাটিরিয়ালে বা যৌগিক উপাদানের দুর্বলতম দিক হিসেবে বিবেচিত। এখন এমআইটির এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়াররা কম্পোজিট উপাদানের স্তরগুলোকে বাঁধবার বা সংবদ্ধ করার এমন এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন যার পরিণতিতে উপাদানটি যথেষ্ট শক্ত হয় এবং অন্যান্য উন্নত কম্পোজিট বা যৌগিক উপাদানের তুলনায় এটি ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে অধিকতর সক্ষম হয়। তারা কার্বন ন্যানোটিউব ব্যবহার করে কম্পোজিট উপাদানগুলো স্তরসমূহকে একত্রে বেঁধেছেন। কার্বন ন্যানোটিউব হলো এটমের মতো সূক্ষ্ম কার্বনের রোল যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি অতি ক্ষুদ্র হলেও অবিশ্বাস্য রকমের শক্ত। তারা কার্বন ন্যানোটিউবগুলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘অরণ্য’কে আঠার মতো পলিমার ম্যাট্রিক্সের মধ্যে যুক্ত করেছে এবং তারপর সেই ম্যাট্রিক্সকে কার্বন ফাইবার কম্পোজিটের স্তরগুলোর মধ্যে রেখে চাপ দিয়েছেন। ম্যাট্রিক্সে থাকা ন্যানোটিউবগুলো প্রতিটি কম্পোজিট স্তরের খাঁজে খাঁজে থেকে স্তরগুলোকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যে সেগুলো কোনভাবেই ছুটবার নয়। এতে কম্পোজিট উপাদানের শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। সেলাইয়ের মতো যুক্ত এই কম্পোজিট উপাদান প্রচলিত কম্পোজিট উপাদানগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ শক্ত। এটি অনেক বড় ধরনের আঘাত সইতে পারে। অত সহজে ভাঙে না। এমন কম্পোজিট দিয়ে প্লেনের অধিকতর শক্ত ও হাল্কা অংশ তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ করে সেই সব অংশ যেগুলোতে পেরেক বা নাটবল্টু মারার প্রয়োজন হয়। পেরেক বা নাটবল্টুর কারণে প্রচলিত কম্পোজিটগুলোতে ফাটল ধরতে পারে। গবেষণার নেতৃত্বদানকারী রবার্টো গুজম্যান বলেন, ‘এক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে ঠিকই। তবে আমরা আশাবাদী যে এর পরিণতিতে আরও শক্তিশালী অথচ হাল্কা বিমান তৈরি করা যাবে এবং তাতে প্রচুর জ্বালানি বাঁচবে।’ এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল যে কার্বন ন্যানোটিউবের ব্যাস প্রায় ১০ ন্যানোমিটার। অর্থাৎ এগুলো কার্বন ফাইাবারের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ গুণ ছোট। তবে কার্বন ন্যানোটিউবের উপরিতল কার্বন ফাইবারের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি যার ফলে পলিমার ম্যাট্রিক্সের সঙ্গে সেগুলোর বন্ধন আরও ভালভাবে হয়। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×