ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে গর্জনিয়া সেতু

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৭ জুন ২০১৭

হুমকির মুখে গর্জনিয়া সেতু

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রামু গর্জনিয়া সেতুর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অন্তত দুই লাখের মতো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে একটি সেতুর অভাবে। ২০১২ সাল থেকে এ্যাপ্রোচ সড়ক ভাঙ্গনের শুরু হয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুনে স্রোতের ধাক্কায় ৪০০ ফুট দীর্ঘ সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। এরপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল দেড় বছর। সম্প্রতি আবারও নদীর জলের সঙ্গে বিলীন হতে চলছে এ্যাপ্রোচ সড়ক। এতে আতঙ্কে আছে স্থানীয়রা। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান আলি বলেন, আমরা নদী শাসনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বহুবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাদের বাজেট বরাদ্দ না থাকার কথা জানানো হয়। এ্যাপ্রোচ সড়ক রক্ষায় সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ গর্জনিয়া সেতুর সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দেড় বছর রামু গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের সঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও বাইশারি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে কৃষক। চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারও সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হলে জনগণের দুর্ভোগের পাশাপাশি নানামুখী সঙ্কট তৈরি হয়ে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গর্জনিয়া সেতুর ৮৫ ভাগ অংশে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। তাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে সেতুর দক্ষিণ পাশে আঘাত হেনে এ্যাপ্রোচ সড়ক ভাঙছে। আর জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। কিন্তু এ পর্যন্ত নদীর তলদেশ খনন করে সেতু রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে পুনর্নির্মিত এ্যাপ্রোচ সড়ক রক্ষায় কিছুটা হলেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরাও শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করছেন। গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গর্জনিয়া সেতুকে নিয়েই আমাদের সব আবেগ আর অনুভূতি। সেতু অকার্যকর হলে এতদাঞ্চলের লাখো মানুষ অচল। সেতু রক্ষায় নানা চেষ্টার পরও এখনও সরকারী বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমানে ইউপির নিজস্ব তহবিল থেকে সেতুর দক্ষিণ পাশে বল্লি (গাছের খুঁটি) ব্যবহার করে নদীতে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। তবে পাউবোর বরাদ্দ না পেলে সেতু রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। গর্জনিয়া ইউনিয়ন সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গর্জনিয়া সেতু রক্ষা করা সম্ভব না হলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গর্জনিয়া ও বাইশারির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে। যমুনার পানি বৃদ্ধি ॥ ভাঙ্গনে গৃহহারা শতাধিক পরিবার সংবাদদাতা, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল থেকে জানান, বর্ষা আসার আগেই যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামে গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভাঙ্গন আতস্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী মানুষেরা। এদিকে ভাঙ্গন ও বৃষ্টিতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা। বৃষ্টির কারণে ঘরদরজা মালামাল সরাতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে তারা। ভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বর্ষায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। গত বছর ভাঙ্গনে উপজেলায় আট শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে অর্জুনা, চুকাইনগর, কুঠিবয়ড়া, জগৎপুড়া, রাজাপুর, ফলদাপাড়া, রামপুর, বিহারী, রুলিপাড়াসহ অর্ধশাতাধিক গ্রামে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অর্র্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, ও নিকরাইল ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গেছে বঙ্গবন্ধু সেতু-তারাকান্দা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নদী থেকে একশ’ গজের মধ্যে দাঁডিয়ে রয়েছে গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচটি ভবন, কোনাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মমতাজ ফকির উচ্চ বিদ্যালয়, গোবিন্দাসী গরুর হাটসহ, শতাধিক ভবন। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েকশ’ পাকা বাড়ি, মসজিদ, মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
×