ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৭ জুন ২০১৭

লন্ডনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগুন মূলত সর্বগ্রাসী। সবই গোগ্রাসে গিলে খায়। আগুনের লেলিহান শিখা যখন সর্বত্র ছড়িয়ে যায়, তখন সবই পুড়ে ভস্মীভূত হয়। লন্ডনে এক বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রমাণ করল উন্নত বিশ্বে বহুতল ভবনগুলোও নিরাপদ নয়। অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা এতই দুর্বল যে, চব্বিশ তলার ভবনটি অগ্নিগ্রাসে যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। ভবনের ভস্মীভূত অংশের ছাই উড়ছে বাতাসে। কিছু দিন আগেই জঙ্গী হামলায় আতঙ্ক ছড়ায় লন্ডন ব্রিজ আর বরো মার্কেট এলাকাজুড়ে। সেই মার্কেট পুনরায় খুলল বুধবারে। অথচ তার আগের রাতেই পশ্চিম লন্ডনের গ্রিনফেল টাওয়ারের বিধ্বংসী আগুন পুনরায় যেন ওলটপালট করে দিল সব। যে অগ্নিকা-ের জেরে ব্রিটেনে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও পিছিয়ে গেল। মঙ্গলবার মাঝরাতে আচমকা দাউদাউ আগুনে জ্বলতে থাকা ভবনটি বুধবার দিনের বেলায়ও জ্বলছিল, পুড়ছিল। ওই আবাসন থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের মুখে একটাই কথা, দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে এলাম। লেলিহান শিখা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি, লন্ডনের দমকল বাহিনীর সেই কমিশনারও বলেছেন, ঊনত্রিশ বছরের ক্যারিয়ারে এমন অগ্নিকা- দেখিনি। দেখার কথাও নয়। কারণ উন্নত দেশটির ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনের টাওয়ারটির অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় ত্রুটি যে ছিল, তা এই ভয়াবহ আগুন স্পষ্ট করেছে। ১৯৭৪ সালে নির্মিত গ্রিনফিল টাওয়ারটি গত বছর এক কোটি দশ লাখ ডলার ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। সংস্কার কাজের সময় ব্যবহৃত উজ্জ্বল হলুদ রঙের আবরণী আগুন অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে থাকতে পারে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকবারই প্রশ্ন তুলেছিল এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু কেউ গা করেনি। আগুন জ্বলতে থাকায় ভবনের কিছু জায়গায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে দমকল বাহিনীর। অনুসন্ধান কাজে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। তারপর তা ২৪ তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, ভবনটির অগ্নিকা-ের পেছনে ত্রুটিপূর্ণ রেফ্রিজারেটর দায়ী। আগুন পুরো ভবন গ্রাস করে ফেলায় ও দীর্ঘ সময় ধরে তা জ্বলতে থাকায় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছিল। ভবনটিতে ১২০টি ফ্ল্যাটে ছয় শতাধিক মানুষের বসবাস ছিল। জীবিত উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৮০ জন। মৃতদেহ শনাক্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে। দেহগুলো গলে গেছে। মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যেই পুরো ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। অনেকে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। সবচেয়ে দুঃখজনক যে, ভবনটির ফায়ার এ্যালার্ম কাজ করেনি। এই এ্যালার্ম নিয়ে এর আগে সতর্ক করা হলেও গুরুত্ব দেননি তারা। জীবিতরা জানান, তাদের কাছে মনে হয়েছে তারা নরক থেকে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্তানদের জানালা দিয়ে ফেলে দেন নিচে। অনেকে বিছানার চাদর একত্র করে বেঁধে নিচে ফেলে নেমে আসার চেষ্টা করেন। ভবন থেকে উদ্ধার করা ৮০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ভবনের ভেতরের মানুষের আর্তনাদ আর চিৎকারের শব্দ আগুনের ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে বাতাসে ভেসে এলেও সাহায্য করার মতো অবস্থা ছিল না। ভবনটির বাসিন্দারা যখন ঘুমে নিমগ্ন তখন অগ্নিকা- ঘটে। আর ওই সময় রোজা রাখার জন্য সেহরি খেতে রাতে ওঠা মুসলমানরা ঘটনা টের পান। তারাই প্রথম এগিয়ে যান উদ্ধারে। দমকল বাহিনী আসার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বড় বিপর্যয় রোধের ব্যবস্থা এত দুর্বল যেখানে, সেখানে মানুষের বসবাস স্থান নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
×