ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত এজবাস্টন

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৬ জুন ২০১৭

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত এজবাস্টন

মিথুন আশরাফ, বার্মিংহাম থেকে ॥ বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশী দর্শক খুব বেশি ছিলেন না। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। তাই ভারতের দর্শকরাই বেশি ছিলেন। এরপরও ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গর্জন ঠিকই শোনা গেছে। বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল ম্যাচটির টিকেট যেন ‘সোনার হরিন’ হয়ে উঠেছিল। একটা টিকেট ৬০০ পাউন্ড দিয়েও কিনেছে অনেকে। এমনই অবস্থা হয়েছে, টিকেট চাই-ই-চাই। মূল্য যাই হোক। সব টিকেট যে আগেই বুক করে ফেলেছিল ভারতীয় দর্শকরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। তা আগে থেকে বাংলাদেশী দর্শকরা বুঝতে পারেননি। তাই বার্মিংহামের এজবাস্টনের সেমিফাইনাল ম্যাচটি নিয়ে তেমন আগ্রহও ছিল না। তবে ভারত দর্শকরা কিন্তু আগে থেকেই এই ম্যাচের টিকেট কিনে রেখেছিলেন। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানেই বার্মিংহামে খেলা পড়া। তাই ৭০ শতাংশ টিকেটই ভারতীয় দর্শকরা অনলাইনে কিনে রেখেছিল। এমনই অবস্থা হয়েছে, বাকি যা ছিল; তার মধ্যে ইংল্যান্ড দর্শকরাও টিকেট কিনেছে। কারণ যদি ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হতে না পারে তাহলে বার্মিংহামে খেলতে হবে। তাই তারাও টিকেট কিনে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশী দর্শকরা টিকেট কেনার ধারে কাছে যাননি। যখন বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠে গেল, তখন টিকেট কেনা নিয়ে তাড়াহুড়ো শুরু হলো। কিন্তু সেই টিকেট সবার কপালে মিলল না। যে কয়েকজন পেলেন তারা যেন ‘সোনার হরিণ’ পেলেন। তা পেয়ে আনন্দে আত্মহারাও হয়ে গেলেন। বার্মিংহামের এজবাস্টনে দর্শক ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার। এরমধ্যে ১৮ হাজার টিকেট আগেই ভারতীয় দর্শকরা অনলাইনে কিনে ফেলেন। বাকি থাকে যে ত্রিশ শতাংশ। ৭ হাজার টিকেট সেই ত্রিশ শতাংশের মধ্যে ৩ হাজার টিকেট আবার ইংল্যান্ড দর্শকরা কিনে ফেলেন। বাকি থাকে ৪ হাজার টিকেট। এ চার হাজারের মধ্যে ২ হাজার সৌজন্য টিকেটও রয়েছে। বাকি ২ হাজার টিকেটের মধ্যে বাংলাদেশী দর্শকরা ভাগ বসান। তবে সেখানেও আবার ভারত দর্শকরাও ভাগ বসান। তাতে করে খুব অল্প সংখ্যক বাংলাদেশী দর্শকরাই সেমিফাইনাল ম্যাচটি দেখতে পারেন। যে বাংলাদেশী মানুষের সঙ্গেই ইংল্যান্ডে দেখা হচ্ছে। লন্ডনে দেখা হয়েছে। কিংবা বার্মিংহামে দেখা হচ্ছে। একটি কথাই তাদের মুখ থেকে বের হচ্ছে, ‘একটি টিকেট দেন না প্লিজ।’ কিন্তু কোনভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না টিকেট দেয়া সম্ভব নয়। যখন টিকেট দেয়া সম্ভব নয়, তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে তখনই হতাশ হচ্ছেন। বার্মিংহামে ১২ লাখের বেশি লোকের বসবাস। এখানে প্রবাসী পাকিস্তানী লোকদের বেশিই বসবাস। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার প্রবাসী পাকিস্তানী বার্মিংহামে বসবাস করেন। যেখানে যাওয়া হচ্ছে সেখানেই পাকিস্তানী দেখা যাচ্ছে। এরপর আছেন প্রবাসী ভারতীয়রা। ৭০ হাজার প্রবাসী ভারতীয় থাকেন বার্মিংহামে। আর প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারেরও কম। বার্মিংহামে রাজ নুর নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে বাঙালী খাবার পাওয়া যায়। অসাধারণ খাবার। খাওয়ার পর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটার মতো অবস্থা হয়। এ রেস্টুরেন্টটি এখানে বিখ্যাত। সেই ১৯৬২ সাল থেকে এই রেস্টুরেন্ট আছে। এ রেস্টুরেন্টের মালিক হচ্ছে আলহাজ্ব এম এ নুর। তিনি ওয়েস্ট মিডল্যান্ড আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট। সিলেট গণদাবি পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্টও তিনি। তার ক্ষমতা অনেক। পদবিগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যখন জানতে পারলেন বাংলাদেশ থেকে খেলা কাভার করতে এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে টিকেট চাইলেন। তাকে বলা হলো আপনি এত ক্ষমতাবান তাহলে টিকেট কেন আপনার কাছে নেই? জবাব দিলেন, ‘আসলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠে যাবে ভাবতে পারিনি। তাহলে তো আগে থেকেই টিকেট কিনে রাখতাম। কিংবা টিকেটের ব্যবস্থা করে রাখতাম। এখন যখন দল সেমিফাইনালে উঠেছে তখন টিকেট পাচ্ছি না। কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারছি না। সব আগে থেকেই ভারতের দর্শকরা কিনে রেখেছে। তারা আগে থেকেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে ভারত, বার্মিংহামেই খেলা হবে; ধরে নিয়েই টিকেট কিনেছে। তাই আমরা এখন টিকেট পাচ্ছি না। কিনতে চাইলেও পারছি না। টিকেটের দাম এখন উঠেছে ৬০০ পাউন্ড।’ এই ৬০০ পাউন্ড (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬৫ হাজার) দিয়েই এখন টিকেট কিনছে সবাই। স্টেডিয়ামে এই মূল্যে কেনা এক বাংলাদেশী দর্শককে মিলল। মুখে বাঘ এঁকে এনেছেন। নাম তার জুবায়ের। থাকেন লন্ডনে। সেখান থেকেই টিকেট কিনে ভোরে নিজে গাড়ি চালিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ এরআগে কখনই বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে ওঠেনি। এবার উঠেছে। এমন ঐতিহাসিক দিনে মাঠে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখব না, ভাবতেই পারছি না। তাই টিকেট ৬০০ পাউন্ড হলেও কিনেছি। শুধু আমার জন্যই নয়, তিনটা টিকেট এই দামে কিনে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছি। আশা নিয়ে এসেছি, বাংলাদেশ ফাইনালে যাবে। বাংলাদেশ যদি ফাইনালে চলে যায় তাহলে অর্থ তার সামনে কিছুই না। ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। ফাইনালে উঠলে ইতিহাসের সেরা দিন মিলবে। এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?’ আসলেই করা যায় না। আর তাই যতজন সুযোগ পেয়েছেন তারাই ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে গর্জন তুলেছেন।
×